শেখ হাসিনা খুনি আ’লীগ খুনের দল : বিএনপি

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ

64826_fokrul bnp
গ্রাম বাংলা ডেস্ক: একুশ আগস্টের গ্রেনেড হামলার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি।

আজ রোববার এক আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা শত শত নিরীহ লোকের প্রাণ নিয়েছেন। তিনি নিজে খুনি, তার দল আওয়ামী লীগ খুনের দল।

তিনি বলেন, বিচারাধীন মামলা নিয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দেয়া বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল। তার বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশপ্রণোদিত। যা ঘৃণা ও দু:খজনক।

উল্লেখ, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার স্মরণে গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সাথে যেমন জিয়াউর রহমান জড়িত ছিল, ঠিক তেমনি ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান ও ওই সময়ের মন্ত্রিসভার সদস্যরা জড়িত ছিল।’

ওই বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতেই আজ রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি।

দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচারাধীন মামলা নিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও বিএনপিকে জড়িয়ে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তা অসত্য, বানোয়াট, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা মনে করি, এরকম বক্তব্য দিয়ে তিনি আদালতকে শুধু প্রভাবিতই করছেন না, বিভ্রান্তও করছেন। তার ওইরকম বক্তব্য নিঃসন্দেহে আদালত অবমাননার শামিল।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে জঘন্যতম আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা সরকারে থাকাকালে এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছি। ওই সময়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা ঘটনার সাথে প্রকৃত জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে। তদন্ত হয়েছে। বিদেশ থেকে আন্তর্জাতিক তদন্ত টিম এফবিআইকেও তদন্ত করতে দেশে আনা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ওই সময়ে এফবিআই ও বিচার বিভাগীর তদন্ত কমিশন কাউকেই সহযোগিতা করেননি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এখনো চাই, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসুক। আমাদের একান্তই কাম্য- প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পাক। কিন্তু এ ঘটনাকে রাজনৈতিক পূঁজি করা সমর্থন করি না। তবে ক্ষমতাসীন দল এই ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্য দিচ্ছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে যুক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যকে দুঃখজনক অভিহিত করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনা এ ধরণের বক্তব্য দিতে অভ্যস্ত। নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডারের পর যখন আদালত ২২ র‌্যাব কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলো, তখনও একইভাবে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিচারাধীন মামলা সম্পর্কে দেশের একজন প্রধানমন্ত্রী এরকম বক্তব্য দিয়ে আদালতকে সরাসরি প্রভাবিত করছেন।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর একটিই উদ্দেশ্য। তা হচ্ছে- বিএনপি তথা জাতীয়তাবাদী শক্তিকে রাজনীতি বিমুখ করা। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মিথ্যা মামলায় জড়ানোর নিন্দাও জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, এভাবে নানা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে বিএনপিকে নেতৃত্ব শূন্য করতে চায় সরকার। আমরা বলতে চাই, এতে কোনো লাভ হবে না। একদিন জনগণ এর সমুচিত জবাব দেবে। জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেছেন- ‘বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান খুনি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের আন্দোলনকে তিনি খুনের আন্দোলন বলেছেন।’
আমরা বলতে চাই, সমগ্র জাতি জানে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শেখ হাসিনার পেটোয়া বাহিনী র‌্যাব-পুলিশকে দিয়ে পাঁচ শতাধিক আন্দোলনরত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। ৬৫ জনকে গুম করা হয়েছে। শেখ হসিনা নিজে খুনি, তার দল খুনের দল। শত শত নিরীহ তরুণের রক্তে তার হাত রঞ্জিত।

সাবেক এই মন্ত্রী অভিযোগ করেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে সরকার ও তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মানুষ খুন করে হত্যা করেছে। এখন তারাই আবার সরকারি অর্থ ব্যয় করে ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠান করছে।

অন্যদিকে গুম ও হত্যা হয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমরা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিলাম। সেই অনুষ্ঠানকে সরকার বন্ধ করে দিলো। এই হলো সরকারের চেহারা!

সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন আখ্যা দিয়ে দ্রুত নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যদি এতোই জনপ্রিয় হয়, তাহলে কেন নির্বাচন দিচ্ছেন না। নির্বাচন দিয়ে দেখুন, জনগণ কাদের সাথে আছে। আওয়ামী লীগ গায়ের জোরে বন্দুক দিয়ে এখন ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।

সম্প্রচার নীতিমালা, বিচারকদের অভিশংসন আইন বাতিল করে সব দলের অংশগ্রহণে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সরকারকে দ্রুত নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুল, রুহুল কবির রিজভী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, ঢাকা বারের সিনিয়র আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করিম শাহিন ও অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, সরকার টার্গেট করে তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা জড়াচ্ছে। সরকারের মন্ত্রী এমপিরা বিচারধীন বিষয়ে যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন তা বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করবে।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানের কাছ থেকে অমানসিক নির্যাতন চালিয়ে যে জবানবন্দি আদায় করা হয়েছিল, তা মুফতি হান্নান আদালতেই বিবৃতি দিয়ে মিথ্যা বলেছেন। এই মামলায় ওই কথিত জবানবন্দি ছাড়া অন্য কোনো সাক্ষী নেই। আমরা আশা করব, আওয়ামী লীগ এমন কিছু করবে না, যাতে বিচারের ওপর জনগণের আস্থা হারিয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *