কলকাতায় ফ্লাইওভার ধস: নিহত বেড়ে ২৩

Slider সারাবিশ্ব

file

 

 

 

 

 

 

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার ধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ জনে।

কলকাতার গিরিশ পার্কের কাছে ঘনবসতিপূর্ণ পোস্তা এলাকায় চিৎপুর রোডে বিবেকানন্দ ফ্লাইওভার ধসের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ২২ জনের মৃতদেহ উদ্ধারের পর শুক্রবার সকালে আরও একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরের এই দুর্ঘটনায় ধ্বংসস্তূপের নিচে শতাধিক মানুষ চাপা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।

দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান দমকল ও বিপর্যয় মোকাবেলা কর্মীসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে একের পর এক আহতদের উদ্ধার করেন তারা। রাজ্য সরকার এটিকে স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্ঘটনা বলে অভিহিত করেছে।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে খড়গপুরের নির্বাচনী সভা সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এ ঘটনা ক্ষমার অযোগ্য। তদন্ত করে দোষীদের উপযুক্ত সাজা দেওয়া হবে। এ ঘটনা নিয়ে রাজনীতি না করার অনুরোধও জানান মমতা। এছাড়া নিহতদের পরিবারপ্রতি পাঁচ লাখ রুপি ও আহতদের দুই লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দেন মমতা।

ফ্লাইওভার ধসে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। শোক প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও।

এছাড়া এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশও। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শোকবার্তা পাঠান। শোকবার্তায় আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা ও কংক্রিটের নিচে চাপা পড়াদের দ্রুত উদ্ধারের আশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এদিকে ফ্লাইওভার ধসের পর কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসেও খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। উপদূতাবাসের পক্ষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে যে কোনো ধরনের সহায়তার জন্য ৯১-৩৩-৪০১২৭৫০০ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

পুলিশ ও দমকল সূত্র জানায়, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গণেশ টকিজের কাছে ভেঙে পড়ে নির্মীয়মাণ দুই কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারের একাংশ। দিনের ব্যস্ত সময়ে তখন সেতুর নিচে তিলধারণের জায়গা ছিল না। যানবাহন, পথচলতি মানুষের ভিড়ে ঠাঁসা চারদিক। নিচে দিয়ে যাচ্ছিল মিনিবাস ও কয়েকটি ট্যাক্সিও। এর মধ্যেই সেতুটির নির্মাণকাজে ব্যস্ত ছিলেন শ্রমিকরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের পাশে ঘনবসতিপূর্ণ ওই এলাকায় বোমা বিস্ফোরণের মতো বিকট শব্দে ভেঙে পড়ে ফ্লাইওভারের একাংশ। চাপা পড়ে নিচের মানুষ ও যানবাহন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুমান, ধ্বংসস্তূপের নিচে দুই শতাধিক মানুষ আটকা পড়েছে। দমকল বাহিনীর মুখপাত্র অনিল সাখাওয়াত হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেন। তবে দুর্ঘটনার কারণ এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ধাতব পদার্থ ও সিমেন্টের কাঠামোর ধ্বংসস্তূপ থেকে আটকেপড়া লোকজনকে কোনো সরঞ্জাম ছাড়াই প্রথমে উদ্ধারের চেষ্টা চালান স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের কাছে পানির বোতল পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টাও করেন অনেকে। পরে দমকল, বিপর্যয় মোকাবেলা বাহিনী ও সেনাসদস্যরা গ্যাস কাটার দিয়ে কংক্রিটের বড় বড় খণ্ড ও লোহার বিম কেটে আটকেপড়া লোকজনকে উদ্ধারে তৎপর হন।

২০০৯ সাল থেকে ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজ চলছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে এই নির্মাণকাজ চলছে। সমালোচকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে তাড়াহুড়া করে এর নির্মাণ শেষ করার চেষ্টা করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আইভিআরসিএল ইনফ্রাস্ট্রাকচার কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কে পি রাও বলেন, ‘আমরা ৭০ শতাংশ কাজ শেষ করে এনেছি। এর মধ্যে কোনো রকম দুর্ঘটনা ঘটেনি। তবু প্রযুক্তিগত কিংবা গুণগত কোনো কারণে এ বিপর্যর্য় ঘটল কি-না তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।’

তিনি দুর্ঘটনা ‘ঈশ্বরের ইচ্ছায়’ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তার এমন মন্তব্যে মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এদিকে পুলিশের অসদাচরণের কারণে উদ্ধারকাজ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করার কথা জানায় সেনাবাহিনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *