মহান স্বাধীনতা দিবস আজ

Slider জাতীয় টপ নিউজ

০২-2-290x151

 

 

 

 

বসন্তের আজকের এই দিন চিরস্মরণীয় বাঙালি জাতির জীবনে। এ এক অনন্য দিন। আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ৪৫ বছর আগে এই দিনে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। জাতি আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে দিবসটি উদ্যাপন করবে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর সন্তানদের স্মৃতির প্রতি আজ বিনম্র শ্রদ্ধা জানাবে জাতি। শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জাতীয় নেতাদের এবং গণহত্যার শিকার লাখো মানুষ ও সম্ভ্রম হারানো মা-বোনের প্রতি। আজ সরকারি ছুটির দিন।
বাঙালি জাতির জীবনে স্বাধীনতা দিবস একই সঙ্গে আনন্দ ও বেদনার দিন। বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে স্বাধিকারের চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল, তা ধাপে ধাপে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে উপমহাদেশ ভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকেরা বাঙালির ওপর শোষণ এবং ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আগ্রাসন চালাতে থাকে। এই প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধিকারের দাবিতে জেগে ওঠা নিরীহ বাঙালির ওপর ২৫ মার্চ রাতে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী চালায় বর্বর গণহত্যা। ওই রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তার আগেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা করে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। তৎকালীন ইপিআরের (বর্তমানে বিজিবি) ওয়্যারলেস থেকে তাঁর এই ঘোষণা প্রচারিত হয়েছিল। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের নেতারা মাইকে এটি প্রচার করেন। পরে চট্টগ্রামে অবস্থানরত বাঙালি সেনা কর্মকর্তা মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে এ ঘোষণা বেতারে পাঠ করেন।
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বীর বাঙালি মাতৃভূমিকে হানাদারমুক্ত করতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রশিক্ষণহীন নিরস্ত্র বাঙালিরা যেভাবে একটি সুশৃঙ্খল অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, পৃথিবীর ইতিহাসে তেমন সংগ্রামের দৃষ্টান্ত বিরল। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের আত্মদান, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম আর বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় বিজয়। বাঙালি লাভ করে চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের।
বরাবরের মতো এবারও দেশজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদ্যাপিত হবে। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামবে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাধারণ মানুষ ফুলে ফুলে ঢেকে দেবেন স্মৃতিসৌধের বেদি। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় পত্রপত্রিকা বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। সরকারি ও বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। রাতে হবে আলোকসজ্জা।
বাণী: দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এবং দেশের সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বাণীতে বলেন, স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়া। সে লক্ষ্য অর্জনে বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ, অসাম্প্রদায়িক ও উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই অর্জনকে অর্থপূর্ণ করতে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে এবং স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করতে হবে।
বিএনপির চেয়ারপারসন বাণীতে বলেছেন, দেশি-বিদেশি চিহ্নিত মহল আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করার অপতৎপরতায় লিপ্ত।
কর্মসূচি: স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে ‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে’ শীর্ষক তিন দিনের অনুষ্ঠানমালার শেষ দিনের অনুষ্ঠান আজ শনিবার শুরু হবে বিকেল সাড়ে চারটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চে। শিশু একাডেমীর আয়োজনে বেলা দুইটায় হবে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং বিকেলে পাঁচটায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী। গণফোরামের দলীয় কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এবং এরপর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। বঙ্গবন্ধু জয় বাংলা লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবে সকাল সাড়ে ১০টায় আলোচনা ও পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এতে গান গাইবেন শিল্পী কাদেরী কিবরিয়া।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *