দুই মন্ত্রীকে ২০ মার্চ হাজির হতে নির্দেশ

Slider জাতীয় রাজনীতি

c86c20de390ca7c368390cd4939b0151-Untitled-3

আদালত অবমাননার অভিযোগে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে আগামী ২০ মার্চ আপিল বিভাগে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন নয় সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগ আজ মঙ্গলবার এই তারিখ পুনর্নির্ধারণ করেন।
দুই মন্ত্রীকে আজ সকাল নয়টায় আপিল বিভাগে হাজির হয়ে তাঁদের বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য দিন ধার্য ছিল।

আজ সকালে আপিল বিভাগে হাজির হন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক। সরকারি কাজে বিদেশে থাকায় আদালতে হাজির হননি কামরুল ইসলাম।
সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে মোজাম্মেল হকের আইনজীবী রফিক-উল হক ও আবদুল বাসেত মজুমদার শুনানি মুলতবির আরজি জানান।

১৬ মার্চের পর যেকোনো দিন শুনানির তারিখ নির্ধারণ করতে আরজি জানান আবদুল বাসেত মজুমদার। তিনি বলেন, মোজাম্মেল হক তাঁর বক্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।

এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, তাঁরা এখন এ বিষয়ে কিছু শুনবেন না।

আগামী ২০ মার্চ তারিখ ধার্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ওই দিন দুজনকেই (দুই মন্ত্রী) আপিল বিভাগে হাজির হতে হবে। ওই দিন শুনানি হবে।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত নিয়ে কামরুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হকের বক্তব্যে স্তম্ভিত হয়ে গত ৮ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাঁদের তলব করেন। একই সঙ্গে আদালত অবমাননার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে কেন কার্যক্রম শুরু করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন নয় সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগ ওই আদেশ দেন। তাতে ১৫ মার্চ সকাল নয়টায় দুই মন্ত্রীকে আপিল বিভাগে হাজির হয়ে তাঁদের বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

কামরুল ইসলাম ইতিমধ্যে তাঁর বক্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। তাঁর আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব গতকাল সোমবার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ-সংক্রান্ত আবেদন জমা দেন।

সৈয়দ মামুন মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, কামরুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যের জন্য আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। একই সঙ্গে সরকারি কাজে বিদেশে থাকায় সশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সময় চেয়েছেন।

কামরুল ইসলামের পক্ষে করা আবেদনে বলা হয়েছে, আবেদনকারী প্রথম সুযোগেই আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। তাঁর বক্তব্য ও মন্তব্যের জন্য গভীর দুঃখ ও অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন। আবেদনকারী আরও নিশ্চয়তা দিচ্ছেন, ভবিষ্যতে তিনি কখনো এ ধরনের কোনো মন্তব্য করবেন না। প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, সর্বোপরি বিচার বিভাগের ওপর আবেদনকারীর সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা আছে।

আবেদনে আরও বলা হয়, আদালতের নির্দেশ অনুসারে আবেদনকারী অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে আদালতে উপস্থিত হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করবেন এবং তাঁর বক্তব্য হলফনামা আকারে নিজে আদালতে জমা দেবেন। কিন্তু ৭ থেকে ১১ মার্চ তাঁর মালয়েশিয়ায় বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার আঞ্চলিক সম্মেলনে যোগ দেওয়া এবং ১২ থেকে ১৫ মার্চ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার বিষয়টি আগে থেকে নির্ধারিত ছিল এবং ২ মার্চ এ বিষয়ে সরকারি আদেশ জারি হয়েছে। আবেদনকারী জানেন, নির্ধারিত দিনে ব্যক্তিগতভাবে হাজির থেকে তাঁর আদালতের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। কিন্তু দায়িত্ব ও শারীরিক অসুস্থতার জন্য নির্ধারিত দিনে তিনি আদালতে উপস্থিত থাকতে পারছেন না। ১৬ মার্চ তিনি বিদেশ থেকে ফিরবেন। আদালত যেন ব্যক্তিগত হাজিরার দিনটি পুনর্নির্ধারণ করে আবেদনকারীকে নিজের হাতে লেখা আবেদনের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ করে দেন।

অন্যদিকে মোজাম্মেল হকের লিখিত ব্যাখ্যা সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দিয়েছেন তাঁর আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম গতকাল বিকেলে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। ব্যাখ্যায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী কী লিখেছেন, তা জানা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর আইনজীবী আজ আদালতকে জানিয়েছেন, মোজাম্মেল হকও তাঁর বক্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।

গত ৬ মার্চ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির আদেশ পাওয়া মীর কাসেম আলীর আপিল মামলা পুনঃশুনানির দাবি জানান। ওই শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেলকে অংশ না নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। একই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকও প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন। পরে দুই মন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে আইন অঙ্গনে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *