নদীকৃত্য দিবস: নদী পরিব্রাজক দলের বুড়িগঙ্গা নদী পরিদর্শন

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি ফুলজান বিবির বাংলা

IMG_6907
আজ সকাল দশ ঘটিকা। সদরঘাট নদী বন্দর লোকে লোকারণ্য। আহসান মঞ্জিল এলাকায় নদী পরিব্রাজক দলের সদস্যরা এসে জড়ো হয়। সব সদস্য ও অতিথিবৃন্দ আসার পর শুরু হলো নদী সুরক্ষা বিষয়ক প্রচারণামূলক কর্মসূচী। বিভিন্ন ব্যবসায়ী, লঞ্চ যাত্রী, লঞ্চের চালক, সুকানী, নৌকার মাঝি ও পথচারীদের সঙ্গে নদী সুরক্ষা বিষয়ক আলোচনা ও প্রচারপত্র বিতরণ করে নদী পরিব্রাজক দল। লিফলেট বিতরণ করতে করতে দলটি লালকুঠি ঘাটে পৌঁছে। সেখান থেকে একটি ট্রলার নিয়ে প্রথমে নদীর ওপার অর্থাৎ কেরাণীগঞ্জ গোদারা ঘাট এলাকায়ও প্রচারপত্র বিতরণ করে। তারপর শুরু হয় নদী পরিদর্শন। আর এ কর্মসূচীতে শতাধিক লোকের সাথে দলটি কথা বলেছে এবং সহ¯্রাধিক প্রচারপত্র বিতরণ করেছে। আর এ কর্মসূচীর নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের সভাপতি মনির হোসেন।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক মানিক মানবিক। অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের সহসভাপতি মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক প্রকৌশলী জেমাম আহমদ, সম্প্রসারণ সম্পাদক মো. মোকলেসুর রহমান, পাঠচক্র সম্পাদক স্বপন জহির, অঙ্গনা সাংস্কৃতিক কের্ন্দের সভাপতি মোবারক হোসেন, মুক্তমঞ্চ নির্বাক দলের মূকাভিনেতা তানভীর আহম্মেদ চৌধুরী, বদরুল আলম পনির, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সৈয়দ মোহতাসিম বিল্লাহ ও নদী পরিব্রাজক মেহেদী হাসান সিরাজ। মূকাভিনেতা তানভীর ও পনির নির্বাক অভিনয়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে নদীর পানির দুর্গন্ধসহ দূর্বিষহ অবস্থা তুলে ধরে। যা উৎসুক জনতা প্রাণ ভরে উপভোগ করেন এবং আবেগাপ্লুত হন।
প্রচারপত্রে দলটি ১৬ দফা দাবি উপস্থাপন করেন এবং এ বিষয়ে জনমানুষের সাথে জনমত গঠনে আলোচনা করে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দেশের যে তিন চতুর্থাংশ নদী আজ ধ্বংসের মুখোমুখি তা সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে, যৌথ নদীর সকল বাঁধ ও প্রতিবন্ধকতা অপসারনে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে, নদীখেকো-নদীর দখলবাজও দূষণকারীকে দেশের সকল প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন থেকে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে, অপরিকল্পিত বালি ও পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে হবে, অভ্যন্তরীণ বর্জ্য অপসারণে প্রত্যেকটি নৌযানে স্থায়ী ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা, ৩০ বছরের অধিক পুরনো নৌযান চলাচলের অযোগ্য ঘোষণা, নিরাপদ নৌপথ ও নদীবান্ধব পর্যটন নিশ্চিত করা, বেদখল হওয়া নদী সিএস ম্যাপ অনুযায়ী অবিলম্বে পুনরুদ্ধার করতে হবে, নদীবান্ধব অর্থনীতি ও শিল্প প্রতিষ্ঠাতায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, অবিলম্বে নদী শুমারী করে নদীর সংখ্যা প্রকাশ করতে হবে, জাতীয় নদী ঘোষণা করতে হবে, নদী হত্যার দরুন নদী নির্ভর মানুষের যে ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, জলনির্ভর ও জলচর প্রাণীর সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
চলচ্চিত্র পরিচালক মানিক মানবিক বলেন, নদ-নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়া মানে চলচ্চিত্র, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি ক্ষয়ে যাওয়া। আমাদের নিজ পরিচয় হারিয়ে যাওয়া। তাই পরিচয়হীনতা থেকে মুক্তি দিতে অবিলম্বে নদী সুরক্ষার কাজটি এগিয়ে নিতে হবে।
মনির হোসেন বলেন, নদী ভাবনা মানে অস্থিত্বের ভাবনা। নিজ ভিত সুদৃঢ় রাখার জন্য নদীকে বাঁচাতে হবে। নদীর কান্নায় সারা দিয়ে সবাইকে এক্ষুনি এগিয়ে আসতে হবে।
মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে সদরঘাট থেকে বসিলা পর্যন্ত পরিদর্শনে যা দেখলাম তা খুবই হতাশাজনক। পয়ঃবর্জ্য ও গৃহস্থালীর বর্জ্যে বুড়িগঙ্গা মূমুর্ষ। আমাদের ট্রলার তিন তিন বার বন্ধ হয়ে গেছে পলিথিনের কারণে। তাই নদীকে বাঁচাতে হলে ব্যক্তি পর্যায় থেকে প্রাতিষ্ঠানিক সবাইকে সচেতন হতে হবে।
উল্লেখ্য ১৯৯৭ সালের মার্চে ব্রাজিলের কুরিতিবা শহরে অনুষ্ঠিত হওয়া একটি আন্তর্জাতিক সমাবেশ থেকে ‘আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্রাজিলের সেই সমাবেশে ২০টি দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। মূলত বিভিন্ন দেশে বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা সেই সমাবেশে নিজেদের সংকট সমাধানের উপায় খুঁজতে একত্রিত হয়েছিলেন। তাইওয়ান, ব্রাজিল, চিলি, লেসেথো, আর্জেন্টিনা, থাইল্যান্ড, রাশিয়া, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও কিছু দেশের প্রতিনিধি নদীর প্রতি জবাবদিহি করার একটি দিবস পালনে একমত হন। বৃহৎ বাঁধের বিরুদ্ধে ১৪ মার্চ ব্রাজিলের একটি কর্মদিবসের ঘোষণা আগে থেকেই ছিল। তাই ১৪ মার্চেই আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবার পালিত হলো ১৯ তম দিবস।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *