ফেঁসে যাচ্ছেন আরও ১৫ ব্যাংক কর্মকর্তা

Slider জাতীয়
1_195905
ব্যাংকের অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) জালিয়াতি ও পয়েন্ট অব সেলস (পস) মেশিনের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন আরও অন্তত ১৫ ব্যাংক কর্মকর্তা। এরই মধ্যে সন্দেহভাজন ব্যাংক কর্মকর্তারা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন_ সেই লক্ষ্যে বিমানবন্দর ও সীমান্তে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। এসব ব্যাংক কর্মকর্তার ব্যাপারে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পর তাদের চূড়ান্তভাবে আইনের আওতায় আনা হবে। এদিকে পস মেশিনে জালিয়াতির কারণে গত বছর শুধু সিটি ব্যাংকের ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা খোয়া গেছে।

এটিএম বুথের জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেফতার বিদেশি নাগরিক পিওটর সিজোফেন ও সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তাকে ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গত ৬ থেকে

১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইস্টার্ন, সিটি ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের এটিএমে কার্ড জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। রাজধানীর গুলশান, বনানী ও মিরপুরের কালশী এলাকায় তিনটি বেসরকারি ব্যাংকের চার বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে কার্ড জালিয়াতি করা হয়। পরে গ্রাহকের প্রায় ২১ লাখ টাকা তুলে নেয় চক্রটি। তারা ১২০০ কার্ডের তথ্য চুরি করে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি মো. শাহজাহান  বলেন, একজন বিদেশি নাগরিক ও তিন ব্যাংক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।

ডিবির এসি নাজমুল হাসান  বলেন, সন্দেহভাজন কয়েকজনের ব্যাপারে এরই মধ্যে বিমানবন্দর ও সীমান্তে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ব্যাংক কর্মকর্তা রয়েছেন।

সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন  বলেন, গত বছর পস মেশিন জালিয়াতির ঘটনায় সিটি ব্যাংকের ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা খোয়া গেছে। এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এটিএম জালিয়াতির ঘটনায় ইউক্রেনের নাগরিক পিওটর ও সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা মকসেদ ওরফে মাকসুদ, রেজাউল করিম ওরফে শাহীন, রেফাজ আহমেদ ওরফে রনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। মোটা অঙ্কের কমিশনের ভিত্তিতে পিওটর ও কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তা এই জালিয়াতি করে আসছিলেন। এরই মধ্যে আরও ১৫ ব্যাংক কর্মকর্তার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ক্লু পাওয়া গেছে। তাদের কয়েকজন এখন গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন। উত্তরার আবাসিক হোটেল ‘কমফোর্ট ইন’ ও গুলশানের ‘সিলভার উইনডো’ হোটেলে গত বছর পস মেশিন জালিয়াতির মাধ্যমে সিটি ব্যাংকের ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা খোয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে গুলশান-২ নম্বর সেকশনের পিওটরের ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় ডিবি। সেখান থেকে একটি শার্ট জব্দ করা হয়েছে। ওই শার্ট পরা পিওটরকে এটিএম বুথে ‘স্কিমিং ডিভাইস’ লাগাতে দেখা যায়। এ ছাড়া ওই বাসা থেকে একটি প্রাইভেটকার, এটিএম কার্ড, মোটরসাইকেল, ল্যাপটপসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে পিওটরের বাংলাদেশি স্ত্রী ও শাশুড়িকেও।

পিওটরের স্ত্রী মেরিনা গোয়েন্দাদের কাছে দাবি করেন, পিওটরের এটিএম জালিয়াতির ব্যাপারে তিনি কিছু জানতেন না।

একের পর অপরাধে জড়াচ্ছেন বিদেশিরা :বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অপরাধী চক্রের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশে। তাদের কেউ বৈধভাবে আসার পর, আবার কেউ অবৈধভাবে এসে জড়িয়েছেন নানা রকম অপরাধে। জাল ডলার তৈরি, প্রতারণা, মানব পাচার, অবৈধ ভিওআইপি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে প্রায়ই তাদের গ্রেফতারও করা হচ্ছে। তবে জামিনে বেরিয়ে তারা ফের জড়িয়ে পড়ছেন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান সমকালকে বলেন, কিছু বিদেশি নাগরিক ট্যুরিস্ট ভিসায়, ব্যবসায়ী হিসেবে বা অন্য কোনো অজুহাতে এ দেশে এসে নানা অপরাধে জড়াচ্ছেন। এ-সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গেই তাদের আইনের আওতায় নেওয়া হচ্ছে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, অবৈধভাবে অবস্থান বিদেশিদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য না থাকলেও ধারণা করা হয়, এই সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে অন্তত দুই হাজার বিদেশি নাগরিকের ব্যাপারে বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে নাইজেরিয়া, ঘানা, কঙ্গো, লিবিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিপাইন, আলজেরিয়া, সুদান, তানজানিয়া, উগান্ডা, শ্রীলংকা ও ফিলিপাইনের নাগরিকই বেশি।

কিছু ঘটনা :ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নাইজেরিয়ার তিন নাগরিকসহ পাঁচজনকে গুলশান থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তারা হলেন_ ইজুচিউ ফ্রাঙ্কিন, অবি হেছি ও ইক ফিস্ক। এই চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে লোকজনের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। এরপর উপহার দেওয়ার নামে কৌশলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় তারা।

গত বছরের ৪ জুলাই রাতে র‌্যাব-২ গুলশানের সুরা রেস্টুরেন্ট থেকে অবৈধ মদ-বিয়ারসহ প্রতিষ্ঠানের মালিক কোরিয়ার নাগরিক জিএন পার্ককে গ্রেফতার করে। ৩০ বছর ধরে এ দেশে অবস্থান করা পার্ক রেস্তোরাঁর লাইসেন্স নিয়ে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। একই মাসে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ২০ কেজি হেরোইনসহ এলাম উরুগু নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। একই সময়ে উত্তরা থেকে হেরোইনসহ তানজানিয়ার নাগরিক রাশেদ, কঙ্গোর নাগরিক জেমস, মঙ্গোলিয়ার নাগরিক চিচিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত বছরের ডিসেম্বরে ডলার জালিয়াতির অভিযোগে কেরানীগঞ্জের ডাকপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে কঙ্গোর দুই নাগরিক কামাঙ্গাবো নিবা জোসেফ ও ফাইলে ফলবো মিন্ডোলিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে গুলশানের একটি বাসা থেকে ৬০ লাখ টাকা মূল্যের জাল ডলার উদ্ধার হয়।

২০১৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ পাঁচলাইশ থানার মুন্সীর পুকুরপাড় এলাকা থেকে সুদানের নাগরিক বেনকো ও মেফেজা জিয়েন আলেকজান্ডারকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডলার তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ-সংক্রান্ত মামলায় তাদের কারা ও অর্থদণ্ড দেন আদালত।

২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর উত্তরা-১২ নম্বর সেক্টরের ২৮ নম্বর বাড়ি থেকে অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামসহ ৩৭ বিদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তাদের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় দু’জন বাংলাদেশি নাগরিককে। তারা সবাই নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *