ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ জেলা,
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন আদালত কর্তৃক ৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বজলুর রশিদ নান্নু । বুধবার মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন কালীগঞ্জ পৌরসভার দায়িত্বে নিয়োজিত রিটার্নিং অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন সাজাপ্রাপ্ত আসামী বজলুর রশিদ নান্নুর মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষনা করেন। এ নিয়ে ওই ওয়ার্ডের সম্ভব্য প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ এবং অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে কালীগঞ্জ পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা চোরাচালান মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী নান্নুর প্রার্থীতা বাতিল করার জন্য আপিল কর্তৃপক্ষ ও ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। জেলা প্রশাসকের পক্ষে রিসিপশন শাখার পরভিনা খাতুন অভিযোগটি গ্রহন করেন। অভিযোগ সুত্রে ও ৩ নং ওয়ার্ডের সম্ভব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা জানান, ২০০০ সালের ১ জুন মাগুরার ভায়না মোড় থেকে ২৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা মুল্যের ২০২ বস্তা ভারতীয় চোরাই চিনিসহ একটি ট্রাক (ঝিনাইদহ-ট-০২-০০৩) আটক করে পুলিশ। এ সময় কালীগঞ্জ এলাকার নরেন্দ্রপুর গ্রামের মন্টু ও মিঠুকে পুলিশ গ্রেফতার করে। মাগুরার প্রথম শ্রেনীর মেজিষ্ট্রেট গৌতম আইস ও জাহিদুল ইসলামের উপস্থিতিতে সে সময় মাগুরা থানার উপ-পরিদর্শক জিয়াউল আলম চোরাই মালামাল সিজার লিস্ট করেন। পরবর্ততে গ্রেফতারকৃৃত দুই আসামী জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন ভারতীয় এই বিপুল পরিমাণ চিনির মালিক কালীগঞ্জ পৌরসভার ফয়লা গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে বজলুর রশিদ নান্নু ও খয়েরতলা গ্রামের বসির উদ্দীন। তদন্ত শেষে মাগুরা থানার উপ-পরিদর্শক জিয়াউল আলম ২০০০ সালের ২২ আগষ্ট ২০৩ নং অভিযোগ পত্রে আদালতে চার্জসিট দাখিল করেন। এ সময় আসামী নান্নু, ডাবলু ও বসির পলাতক ছিলেন। চার্জসিট দাখিলের পর আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী ও ক্রোকি পরোয়ানা জারী করেন। পরে বিচারের জন্য মামলাটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। সাক্ষ্য প্রমান শেষে ২০০২ সালের ৮ মে তৎকালীন মাগুরার সহকারী দায়রা জজ ৪ নং আদালতের বিচারক শেখ জালাল উদ্দীন মামলার প্রধান আসামী বজলুর রশিদ নান্নুকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (বি) (১) ধারায় অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমানিত হওয়ায় তাকে দোষি সাব্যস্ত করে ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন। বজলুর রশিদ নান্নু ২০০২ সালে এই সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল (আপিল নং ১২০৯) করেন। মামলাটি এখনো নিস্পত্তি হয়নি, উচ্চ আদালতে বিচারাধীন আছে। এলাকার কাউন্সিলর প্রার্থী ও কালীগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিল্লুর রহমান প্লট এবং সাহেদ আলী লাভলুসহ একাধিক প্রার্থী বুধবার মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন রিটার্নিং অফিসার কাছে এক যোগে দাড়িয়ে অভিযোগ করলেও তাদের অভিযোগ অগ্রাহ্য করে সাজাপ্রাপ্ত আসামী নান্নুর মনোনয়নপত্র বৈধ করা হয়। তাদের অভিযোগ সাজাপ্রাপ্ত আসামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করার কোন বিধান নেই। সর্বশেষ নির্বাচনী আইনে মামলা নিস্পত্তি হওয়ার পরও অন্তত ৫/৭ বছর পর নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু উচ্চ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন থাকার পরও হলফ নামায় তথ্য গোপন করে প্রভাব বিস্তার করে নান্নু প্রার্থী হয়েছেন। তার ভয়ে কেও মুখও খুলতে সাহস পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্ভব্য কাউন্সলর প্রার্থীরা আরো জানান, ২০১১ সালে কালীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে বজলুর রশিদ নান্নু কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছিলেন। সে সময় সাজাপ্রাপ্ত আসামী হওয়ায় রিটানির্ং অফিসার তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। কিন্তু এবার রির্টানিং অফিসার প্রভাবিত হওয়ায় তার মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হয়নি বলে প্রার্থীদের অভিযাগ। এ ব্যাপারে রিটার্নিং অফিসার ও ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বজলুর রশিদ নান্নুর বিুরদ্ধে কেও তথ্য প্রমান দিয়ে অভিযোগ করেন নি। কারো মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে একজন প্রার্থীতা বাতিল করা যায় না বলেও তিনি জানান। তিনি উল্লেখ করেন কারো অভিযোগ থকলে মনোনয়পত্র বছাইয়ের তিন দিনের মধ্যে আপিল কর্তৃপক্ষ ও ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের দপ্তরে অভিযোগ করতে পারেন।