আজ ভারতের সামনে উজ্জীবিত বাংলাদেশ

Slider খেলা
untitled-10_195262
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বড় হলরুমের সবকিছুই কেমন যেন ঠাণ্ডা! অধিনায়করা যে যার মতো আসছেন, ক্যামেরার সামনে সৌজন্যের শুকনো হাসি উপহার দিচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের আগে পরিবেশ এমন ঠাণ্ডা হলে কি চলে? বারুদে স্ফুলিঙ্গের জন্য কিছু একটা তো দরকার। বিরাট কোহলির সামনে তাই মুস্তাফিজের নামটি তুলে ধরলেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন, আট মাস আগে টাইগারদের এ উঠোনেই ভারতকে কীভাবে ক্ষতবিক্ষত হতে হয়েছিল মুস্তাফিজের কাছে।

 

ভেতরে কেমন হচ্ছিল তা কে জানে; তবে কোহলি কিন্তু প্রশংসাই করলেন বাংলাদেশের কাটার বিশেষজ্ঞকে। ‘বাংলাদেশের জন্য এবারের এশিয়া কাপে মুস্তাফিজ বড় ফ্যাক্টর হতে যাচ্ছে…।’ কিছুক্ষণ বাদে বিরাটের জায়গায় বসে মাশরাফি জানালেন, আমাদের বোলিং দিয়ে যে কোনো দলকে আমরা চ্যালেঞ্জ করতে পারি…। ব্যস, এর বারুদের আঁচ তখনই বেরিয়ে আসে পাঁচতারা হোটেলের ওই শান্ত রুমে।

বেশ কয়েক বছর ধরে, আরও সংক্ষেপে বলতে গেলে বিশ্বকাপে মেলবোর্নের ওই ম্যাচের পর থেকে প্রতিপক্ষ ভারত মানেই তেতে ওঠা এক বাংলাদেশ।

সংবাদ সম্মেলনের পর বাংলাদেশ দলের গতকালের অনুশীলন ছিল ফতুল্লায়। ভারতেরও। ভারত ঠিকই গেল। বাংলাদেশ গেল না। প্রথমে গুজব, অনুশীলন বাতিল! নাহ, মাশরাফিরা অনুশীলন বাতিল করেননি। বাংলাদেশ ঠিকই মিরপুরে ইনডোরে অনুশীলন করল। তবে রুদ্ধদ্বার! তবুও যা দেখা গেল সেটা হলো, এদিন মুস্তাফিজকে নামানোই হলো না অনুশীলনে। সাধে কি আর বিরাট কোহলি বলেছেন, ‘ক্রিকেটে ভিন্ন একটা মাত্রা নিয়ে এসেছে মুস্তাফিজ। খেলার মজাটা আরও কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছে সে। একজন বোলার সবসময় ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলছে, ব্যাপারটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মতো কন্ডিশনে খেলতে নামার পর যখন দেখবেন, একজন বোলার একাই ৪-৫ উইকেট নিয়ে নিচ্ছে, ব্যাটসম্যানকে অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছে_ এই পুরো বিষয়টা কিন্তু ম্যাচটাকে তখন জমিয়ে দেয়।’ বাংলাদেশের অনুশীলনে

সবাই ব্যাটসম্যান হয়ে গেলেন, শুধু মারমার-কাটকাট ব্যাটিং অনুশীলন! বোঝা গেল, এশিয়া কাপ নিয়ে আসলে দারুণ সিরিয়াস বাংলাদেশ। বাংলাদেশ অধিনায়ক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেনও, ‘শেষবার যখন ভারতের বিপক্ষে খেলেছিলাম, সেগুলো ছিল ওডিআই, ৫০ ওভারের ম্যাচ। এবার আমরা এশিয়া কাপে খেলছি, প্রথমবারের মতো টি২০ ফরম্যাটে। শুধু আমরাই নই, এটা নতুন একটা অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে সবার জন্যই। যেটা আগে বললাম, আমরা এখানে ভালো করার জন্য খুবই মুখিয়ে আছি। কারণ, বিশ্বকাপের আগে আমরা আর প্রস্তুতির সময় পাব না।’

বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক কান্না ‘উপহার’ দিয়েছিল এই এশিয়া কাপ। ২০১২ সালে। মাত্র ২ রানের আক্ষেপ_ পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালটা হেরে গেল বাংলাদেশ। এমন ট্র্যাজেডিতে চোখ ছলছল সাকিব আল হাসানকে জড়িয়ে কাঁদছেন তখনকার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম_ এ দৃশ্য বাংলাদেশে ক্রিকেটপ্রেমীদের অন্তরে কাঁটার মতো বিঁধে আছে।

এর পর, ২০১৪ সালে আরও একটি এশিয়া কাপ হয়েছে এদেশে। শুধু এশিয়া কাপই নয়, পুরো বছরটাই বাংলাদেশের জন্য এত বেশি রকম ‘তীরে এসে তরী’ ডোবানোর কষ্টে কেটেছে যে, সান্ত্বনা ছাড়া আর কিছু দেওয়ারই ছিল না ‘টিম বাংলাদেশ’কে!

আগের তিন বছরের যোগ-বিয়োগ, পারফরমার-পারফরম্যান্সের যোগফল ধরা দিল ২০১৫ সালে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে প্রত্যাবর্তন ঘটল মাশরাফি বিন মুর্তজার, ২০১৪-র ডিসেম্বরে। এর পর কী অসাধারণ একটা বছরই না কাটিয়েছেন টাইগাররা! সেই অসাধারণত্বের প্রতীকী চিত্র হয়ে আছে বিশ্বকাপের সাফল্য আর ঘরের মাঠে পাকিস্তান-ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকাকে কুপোকাত করার গর্জন।

তাই আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া আরেকটি এশিয়া কাপ হতে যাচ্ছে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ‘উত্থানে’র পর ঘরের মাঠে সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট। আজকের বাংলাদেশ ঘরের মাটিতে প্রকৃতই এক বাঘ। এবার কি বাংলাদেশ পারবে চার বছর আগের সেই কান্নাদৃশ্য ভুলিয়ে দিতে?

টি২০ বিশ্বকাপ আসন্ন। এবারের ১৩ তম এশিয়া কাপ তাই বিশ্বকাপের আঁচ বেশ উত্তাপ ছড়াবে। বিশ্বকাপ সামনে বলেই না এশিয়া কাপ প্রথমবারের মতো টি২০ হয়ে গেল!

বাংলাদেশের জন্য অবশ্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে ভালো ব্যাটিং করা। তা ছাড়া সাকিব আল হাসান খুব একটা ফর্মে নেই। জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকে তার ব্যাটে রানের খরা, পিএসএলেও একটি ম্যাচ বাদে বাকিগুলোতে হতাশ করেছেন। আজ তার ফর্মে ফেরাটা গোটা দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তামিমের অনুপস্থিতিতে সৌম্য সরকারের সঙ্গে ওপেন করতে পারেন আজ ইমরুল, তবে টিম ম্যানেজমেন্টের খবর, কোচ হাথুরুসিংহে চাইছেন নবাগত মোহাম্মদ মিঠুনকে সৌম্যর সঙ্গে পাঠাতে। ওয়ান ডাউনে সাবি্বর রুম্মানই থাকছেন। এরপর একে একে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিক, সাকিব এবং নাসির হোসেন। এর আগে গত জুনে মিরপুরেই ভারতকে পেস আক্রমণে নাস্তানাবুদ করেছিলেন মাশরাফিরা। সেই স্মৃতি মাথায় রেখে মিরপুরের পিচে আজও হালকা ঘাস রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ ড্রেসিংরুমের খবর, মাশরাফি-মুস্তাফিজ আর আল আমিন মোট তিন পেসার দিয়ে স্বাগত জানানো হবে আজ কোহলিদের। সেইসঙ্গে একাদশে থাকছেন বাঁ-হাতি স্পিনার আরাফাত সানি আর সাকিব আল হাসান। প্রয়োজনে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর নাসির হোসেনকে দিয়েও বোলিং করাবেন অধিনায়ক। তবে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যাবে না বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের আগে যা কিছু পরীক্ষা তা জিম্বাবুয়ের সঙ্গেই করে নিয়েছেন হাথুরু, এখন এশিয়া কাপের মঞ্চ থেকে শুধুই বিশ্বকাপের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিতে চাইছেন তিনি। ভরসা তার টাইগাররা।

ফেব্রুয়ারির এই শেষ সপ্তাহেও সন্ধ্যার পর শিশির থাকে, মাশরাফিদের মাথায় সেটাও থাকছে। শিশিরভেজা বল গ্রিপ করতে সমস্যা হয় বোলারদের। আউটফিল্ডও কিছুটা পিচ্ছিল থাকে। তাই আজ যে-ই টস জিতুক না কেন, প্রথমেই সে ব্যাটিং করতে চাইবে। র‌্যাংকিংয়ের এক নম্বর দল ভারতের সঙ্গে দশ নম্বরে থাকা বাংলাদেশের এই লড়াইকে হয়তো অনেকেই একপেশে বলবেন; কিন্তু ভারতের কোচ রবি শাস্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন ম্যাচটি যখন মিরপুরে আর প্রতিপক্ষ যখন টাইগাররা তখন যে কোনো কিছুই হতে পারে। ‘এই ফরম্যাটে র‌্যাংকিং খুব একটা পার্থক্য গড়ে দেয় না। এখানে যে কোনো দল যে কোনো দিন প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হতে পারে। বাংলাদেশ অবশ্যই শক্ত প্রতিপক্ষ। তবে কি-না আমরা নিজেদের শক্তিমত্তা নিয়েই পরিকল্পনা করেছি।’ কোহলিরা যা-ই করুক না কেন, আজ ঘরের উঠোনে ভারতকে হারিয়ে টি২০ ক্রিকেটেও নতুন একটি ইতিহাস গড়তে চান টাইগাররা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *