ভারত নিয়ন্ত্রিত সার্ক স্যাটেলাইটে সম্মতি দিচ্ছে বাংলাদেশ

Slider সারাবিশ্ব

 

2016_02_14_23_45_55_qgJF6bqaPVcB9eDlBJap4MQ5kNe0NC_original

 

 

 

 

ঢাকা : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রস্তাবিত সার্ক স্যাটেলাইট (কৃত্রিম উপগ্রহ) উৎক্ষেপণে সম্মতি দিচ্ছে বাংলাদেশ। প্রথমদিকে নিম রাজি থাকলেও এখন নিজেদের প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সেবা প্রদানে ব্যাঘাত না ঘটার শর্তে বাংলাদেশে ভারতের প্রস্তাবে নীতিগত সম্মতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) মতামত নিয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী, যিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীও বটে, তার কাছে পাঠানো হচ্ছে। তার অনুমোদন পেলেই ভারতকে বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এ বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী শাহজাহান মাহমুদ রোববার সন্ধ্যায় বাংলামেইলকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক সেবা ও পরিকল্পনায় কোনোরূপ ব্যাঘাত না ঘটার শর্তে আমরা এ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছি।’

২০১৪ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দক্ষিণ এশিয় দেশগুলোর জন্য একটি স্যাটেলাইটের প্রস্তাব করেন। ওই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দক্ষিণ এশিয় নেতারা ভারতের প্রস্তাবকে স্বাগত জানায়।  এ স্যাটেলাইটটি তৈরি, উৎক্ষেপণ এবং ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ ভারতই করবে। তারা কেবল সার্কভুক্ত দেশগুলোর কাছ থেকে সমর্থন চেয়ে পত্র পাঠায়। এতে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘প্রস্তাবটি সেচ্ছাসেবীমূলক। কিন্তু আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) কাছ থেকে পরিকল্পিত কক্ষপথ ও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডের অনুমোদন নিতে সব দেশের সম্মতি প্রয়োজন।’

এর পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও বিটিআরসির মতামত চায়। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৪ সলের নভেম্বরেই বলা হয়, ‘বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট ও সার্ক স্যাটেলাইট দু’টির কক্ষপথ ভিন্ন হলেও তাদের ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ একই, ( ১২ দশমিক ৭৫ থেকে ১৩ দশমিক ২৫ গিগাহার্জ)। দুই স্যাটেলাইটের সেবারর আওতাভুক্ত দেশগুলোই একই। ফলে ভারতীয় প্রস্তাবে নীতিগত সম্মতি প্রদানের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ বিষয়ে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কারিগরি বিশ্লেষণ ও সমন্বয়ের পর সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে ।’

আর বিটিআরসি জানায়, কারিগরিভাবে প্রস্তাবিত দুই স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সি এক হওয়াতে বিষয়টি নিয়ে ভারতে সঙ্গে পরামর্শ করা যেতে পারে।

গত বছরের ২২ জুন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সার্কের এক সভায়, সংশ্লিষ্ট দেশের বিশেষজ্ঞরা এই অঞ্চলের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এই কৃত্রিম উপগ্রহটির জন্য একমত হন। প্রতিটি দেশ থেকে পাঁচজন করে প্রতিনিধি এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

এরপর গত বছরের শেষ দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবারও এ বিষয়ে টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও বিটিআরসির মতামত চায়। এর প্রেক্ষিতে টেলিযোগাযোগ বিভাগের পরামর্শক্রমে বিটিআরসি তিন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে গত ডিসেম্বরে। কমিশনার এটিএম মনিরুল আলমের নেতৃত্বে এ কমিটি সুপারিশ করে , ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য ক্ষতিগ্রস্ত না হলে এ বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দেওয়া যেতে পারে।’

এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতকে বাংলাদেশের শর্তসাপেক্ষ ইতিবাচক মতামত জানাতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি চেয়ে একটি প্রস্তবনা তৈরি করেছে টেলিযোগাযোগ বিভাগ। শিগগিরই এ সপ্তাহেই তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উড়বে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায়। আর সার্ক স্যাটেলাইট এর কক্ষপথ (অরবিটাল) পছন্দ করা হয়েছে ৪৮ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা। বিটিআরসি বলছে, ১১৯.১ ডিগ্রি অরবিটাল স্লটে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপিত হলে ভারত, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়া, তাইওয়ান, জাপান, কোরিয়া, চীন ও মঙ্গোলিয়া এর আওতায় আসবে। প্রস্তাবিত সার্ক স্যাটেলাইটের সেবার পরিধিও এমনটাই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার প্রধান এ. এস. কিরণ কুমার গত বছরের জুনে বলেছিলেন, ২০১৬ সালের  ডিসেম্বর মাস নাগাদ সার্কভুক্ত আটটি দেশের জন্য একটি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করবে ভারত। বিভিন্ন ধরনের জনসেবামূলক কাজে এই কৃত্রিম উপগ্রহের তথ্য কাজে লাগানো হবে । স্যাটেলাইটটির ওজন হবে দুই টন । এর ১২ টি ট্রান্সপন্ডার (বেতার তরঙ্গ গ্রহণ এবং বিভিন্ন সংকেতে স্বয়ংক্রিয় স্থানান্তরের যন্ত্র) থাকবে। প্রত্যেক দেশের জন্য পৃথক পৃথক সংকেত থাকবে যাতে এ অঞ্চলের যোগাযোগ, শিক্ষা, টেলিমেডিসিন, দুর্যোগ নজরদারি ও অন্যান্য সেবার কাজে তা ব্যবহার করা যায়।’

বর্তমানে সার্কভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে কেবল ভারতেরই স্যাটেলাইট তৈরি ও উৎক্ষেপণ সক্ষমতা রয়েছে। আর বাংলাদেশ ২০১৭ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আকাশে পাঠাতে চাইছে।  স্যাটেলাইট নির্মাণ ও উৎক্ষেপণের জন্য ফ্রান্সের কোম্পানি থ্যালেস এলিনিয়া স্পেসের সঙ্গে গত ১১ নভেম্বর চুক্তি করে বিটিআরসি। ১ হাজার ৯৫১ কোটি ৭৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে স্যাটেলাইট সিস্টেম সরবারহের করবে কোম্পানিটি।

এর আগে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর দুই হাজার ৯৬৮ কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু স্যাটলাইট প্রকল্প অনুমোদন করে । যার মধ্যে ১ হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে যোগানো হবে। বাকি ১ হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বিডার্স ফাইন্যান্সিং এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে।

আর ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি স্যাটেলাইটের জন্য রাশিয়ার কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশনস এর কাছ থেকে ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের অরবিটাল স্লট ১৫ বছরের জন্য ইজারা নেয়। এজন্য ব্যয় হচ্ছে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ‘স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল’ এ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। তারা উপগ্রহের নকশা তৈরির কাজ শুরু করেছে। ভূমি থেকে উপগ্রহটি নিয়ন্ত্রণের জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর এবং রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) নিজস্ব জমিতে দুটি ‘ভূ স্টেশন’ নির্মাণ করা হবে।

প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডার ক্যাপাসিটি থাকবে। এর মধ্যে ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে। বাকি ট্রান্সপন্ডার বিক্রি করে  বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

সার্ক ১৯৮৫ সালে গঠিত হয়। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা এই সাত দেশ এর প্রথম সদস্য । পরে আফগানিস্তানকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *