প্রথম প্রেমের রেশ থেকে যায় অনেক দিন। একটা তাড়না, তিক্ত-মধুর এক অনুভূতি মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। অনেকের মনে অতীত স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায়। স্মৃতি রোমন্থনে অনেকে আবেগী হয়ে ওঠেন। কিন্তু কেন প্রথম প্রেমের সেই অনুভূতি সহজে ভোলা যায় না? এ বিষয়ে কিন্তু গবেষকেদের নানা মত রয়েছে।
মার্কিন দৈনিক দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম প্রেমের রেশ নিয়ে গবেষণা হয়েছে যৎসামান্য। তবে মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, এটা অনেকটাই স্কাইডাইভ বা প্রথমবার আকাশ থেকে লাফ দেওয়ার মতো ঘটনা। প্রথমবারের ঘটনাটি যেভাবে মনে গেঁথে যায়, আর দশবার লাফ দিলেও সেই আগের স্মৃতিটাই বেশি নাড়া দিয়ে যায়।
গবেষকদের মতে, পরের অভিজ্ঞতার চেয়ে প্রেমের ক্ষেত্রে প্রথম অভিজ্ঞতার অনেক বিষয় বেশি মনে থাকে। সম্ভবত এর মধ্যে রোমাঞ্চ আর উত্তেজনা ভরা থাকে। বিশেষ করে যদি এর মধ্যে ভয়ের কোনো অভিজ্ঞতা থেকে থাকে। প্রেমে পড়াটা অবশ্য একধরনের ভয়ের বিষয়। কারণ এতে প্রত্যাখ্যাত হওয়া, আশা পূরণ করতে না পারার, আশা পূরণ না হওয়ার ভয় থেকে যায়। প্রথম প্রেমের ক্ষেত্রে উদ্বেগ সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাট কলেজের মনোবিজ্ঞানী জেফারসন সিংগার বলেন, অধিকাংশ মানুষের ১৫ থেকে ২৬ বছর বয়সের মধ্যে মস্তিষ্কে ‘মেমোরি বাম্প’ বা ‘আকস্মিক স্মৃতি’র একটি বিষয় থাকে। আকস্মিক স্মৃতির বিষয়টি যাঁদের থাকে তাঁরা অধিক স্মৃতিকাতর বা স্মৃতি রোমন্থন করেন। এই স্মৃতি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইতিবাচক স্মৃতি হয়। এ কারণেই ১৫ থেকে ২৬ বছর বয়সের সময় প্রথমবারের মতো অভিজ্ঞতা করা জিনিস স্মৃতিতে ফিরে আসে, মনের পর্দায় ভেসে ওঠে বারবার। সিংগার বলেন, প্রথম প্রেমের স্মৃতি অনেক সময় আবার সুখকর হয় না। অধিক রোমাঞ্চকর, সহিংস হলে আরও বিপদ ঘটতে পারে। জীবনের ওই উত্থান-পতনের দিনগুলোর কথা মনে হলে হতাশা আসতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক ন্যান্সি কালিস বহু বছর পর মিলিত হওয়া জুটিদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, স্মৃতি রোমন্থনে প্রতিবার ভালো লাগার অভিজ্ঞতাটাই নতুন বলে মনে হয়। দুজনের কাছেই ভালো লাগা-ভালোবাসা বলে মনে হয়। কালিস তাঁর গবেষণালব্ধ ফল উল্লেখ করে বলেন, প্রথম প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরে আবার যখন তাঁরা একসঙ্গে হয় তাঁদের সম্পর্কের বাঁধন ৭০ শতাংশ পর্যন্ত সফলতার মুখ দেখে।