উত্তেজনা শাহ আলীতে, পুলিশ মোতায়েন

Slider জাতীয়

 

 

2016_02_05_21_52_04_6Uvx06Kml6jmlXSd6dndHvL3mmOgdl_original

 

 

 

 

গত বৃহস্পতিবারই রাত ১১টার দিকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে বাবুলের মরদেহ দাফন করা হয় বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমশিনার (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার  বলেন, নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে ও প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে তিন এসআইসহ ৫ পুলিশ সদস্যকে বৃহস্পতিবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এসআই মোমিনুর রহমান খান, নিয়াজ উদ্দিন মোল্লা, শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদার এবং এএসআই দেবেন্দ্র নাথ ও কনস্টেবল জসিম উদ্দিনকে প্রথমে প্রত্যাহার এবং পরে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এদের মধ্যে শ্রীধাম ছাড়া বাকি চারজনকে বৃহস্পতিবার দুপুরেই প্রত্যাহার করা হয়। পরে রাতে এসআই শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদারকে প্রত্যাহার করা হয়।

এ ঘটনায় আটক পারুল বেগম যার বিরুদ্ধে পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশে মাদক ব্যবসা করার অভিযোগ রয়েছে তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকেলে প্রশাসনিক স্বার্থে শাহ আলী থানার ওসি একেএম শাহীন মন্ডলকে ডিএমপি সদর দপ্তরের কেন্দ্রীয় রিজার্ভ অফিসে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

শুক্রবার নিহত বাবুলের বড় ছেলে রাজু বাংলামেইলকে বলেন, ‘পুলিশ আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে।’

পুলিশের পোশাকেতো নাম লেখা থাকে, তাহলে আপনারা পুলিশের বিরুদ্ধে কেন মামলা করেননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় হুলস্থূলের মধ্যে পুলিশের নাম খেয়াল করতে পারিনি।’

এসময় রাজুর খালা শামসুন্নাহার বুচি বলেন, ‘তরিঘড়ি করে পুলিশ মামলা করতে চাপ দেয়ায় আমার ভাগ্নি (বাবুলের মেয়ে) রোকসানা মামলা করেছে। তখনো আমরা বলেছি পুলিশ এ ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু পুলিশ আমাদের কথা শোনেনি। পরে আমরা জেনেছি এসআই মোমিনুল ও এএসআই দেবেন্দ্র নাথসহ ৪/৫ জন পুলিশ এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পরে থানার ওসি, ডিসি ও এডিসি স্যাররা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন যে পুলিশের কউে যদি এ ঘটনায় জড়িত থাকে, তাদের খুজে বের করে শাস্তি দেয়া হবে।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘থানায় পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি। ওই সময় দায়িত্বে থাকা ও এ ঘটনায় জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে আমরা সিএমএম আদালতে মামলা করবো। থানার কয়েকজন পুলিশ মদ-গাঁজা খায় বলে পারুলের সঙ্গে তাদের খাতিরও বেশি। পারুলের কথা শোনে তারা আমার বোনের স্বামীকে মেরে ফেলেছে।’

বাবুলের বড় ছেলে রাজু বলেন, গতবছর ১৫ আগস্ট রাতে পারুলসহ অন্যদের মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সোর্স খুন হয়। ওই ঘটনায় আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এলাকার অনেকেই সাক্ষ্য দেয়ায় আমি জামিন পাই। কিন্তু ওরা আমার বাবাকে খুন করে আমাদেরকে পথে বসিয়ে দিল।

বাবুলের ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী লাকি বুক ফাটা আর্তনাদ করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি এখন ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় যাব। ছোট মেয়ে লাবনী এবার এসএসসি পরক্ষার্থী, ও কীভাবে পরীক্ষা দিবে। ৪ বছরের ছেলে জোনায়েদকে কীভাবে মানুষ করবো। আমাদেরকে ওরা পথে বসিয়ে দিল। এর আগেও সোর্স খুনের ঘটনায় আমার বড় ছেলেকে গ্রেপ্তার করলেও আমরা গরিব বলে থানা পুলিশসহ কেউ আমাদের কথা শোনেনি। সত্যের জয় হয়, আমার ছেলে জামিন পেয়েছে। আমার স্বামীকে যারা পুড়িয়ে মারলো আমি আপনাদের কাছে তাদের বিচার চাই।’

এদিকে এ ঘটনার পর শাহআলী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিন্দার ঝড় উঠেছে সারাদেশের মতো গুদারাঘাট এলাকায়ও। গতকাল বৃহস্পতিবার রাস্তায় আগুন ধরিয়ে ও অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয়রা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় গত বুধবার থেকেই এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রত্যাহার হওয়ার আগে শাহ আলী থানার ওসি একেএম শাহীন মন্ডল  জানিয়েছেন, চা দোকানি মৃত্যুর ঘটনায় এজাহার নামীয় আসামি পারুল বেগমকে শুক্রবার আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত দুই দিনের রিমান্ড অনুমোদন করেন। পারুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মূল ঘটনা ও পলাতকদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এদিকে পুলিশের এই জঘন্য আচরনের নিন্দা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি চেয়ে সংসদেও দাবি উঠেছে। তবে সংসদের বাইরে এক অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *