ঢাকা: উত্তরবঙ্গে শিল্প কারখানার প্রসারসহ পাশ্ববর্তী দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়নে ফোরলেন হচ্ছে এলেঙ্গা থেকে রংপুর মহাসড়ক। রংপুর মহাসড়ক থেকে বুড়িমারি ও বাংলাবান্ধা হয়ে ভারত-নেপালের সঙ্গে বাণিজ্যের প্রসারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মহাসড়কটি।
ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা মসৃণ করতে ১৯০ কিলোমিটার সড়কটি ফোরলেনে রুপ দেওয়া হবে। প্রকল্পে প্রাথমিক ১২ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৬০৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা সরকারি অর্থায়ন থেকে মেটানো হবে। বাকি ১০ হাজার ১৩৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা আসবে প্রকল্প সাহায্য থেকে।
প্রকল্পটি টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলায় বাস্তবায়িত হবে। সড়ক ও জনপদ অধিদফতর জানুয়ারি ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২০ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। ‘এলেঙ্গা-হাটিকমরুল-রংপুর মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প’র আওতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে এশিয়ান হাইওয়ে সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) ও বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মায়ানমারের মধ্যে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক করিডরে (বিসিআইএম) নতুন করে বাংলাদেশের ৮টি মহাসড়ক যুক্ত হতে যাচ্ছে। এই সড়কগুলোর মোট দৈর্ঘ্য হবে ৬০০ কিলোমিটার। ১৯০ কিলোমিটার সড়কটি এর একটি অংশ।
এ প্রসঙ্গে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএন সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, রংপুর থেকে এ রুটের একটি অংশ লালমানিরহাটের বুড়িমারি ও পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ রুটের মাধ্যমে ভারত, নেপালসহ অন্যান্য দেশে সরাসরি ব্যবসা প্রসার ঘটাতে পারবো। এটি এশিয়ান হাইওয়ে, বিবিআইএন (বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল) ও সাসেকের একটি অংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের কর্মসংস্থান বাড়বে। উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকায় যাতায়াতের দূরত্বও অনেকাংশে কমে যাবে।
তবে বর্তমানে দেশের এক কিলোমিটার সড়কও এশিয়ান হাইওয়ের মানের নেই। তারপরও দেশের ৬০০ কিলোমিটার সড়ককে এশিয়ান হাইওয়ে, বিবিআইএন ও সাসেক’র আওতায় আনার মহাউদ্যোগ হাতে নিতে যাচ্ছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
এরা মাধ্যমে রংপুর-সৈয়দপুর-বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতে প্রবেশ করবে। ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসারে এই করিডরটি অন্যতম অবদান রাখবে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য সহজ করতেও রুটটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, এশিয়ান হাইওয়ে এশিয়ার অন্য দেশের মতো উন্নত করতে না পারলে কাছাকাছি যাওয়ার প্রচেষ্ঠা থাকবে। তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন নির্ভর করবে উন্নয়ন সহযোগীদের আর্থিক সহায়তার উপর।
সাসেক রোড কানেকটিভিটি-২ প্রকল্পের আওতায় এটি বাস্তবায়িত হবে। এটি সার্ক হাইওয়ে করিডরের আওতায় পড়ছে। এ রুট এশিয়ান হাইওয়ের মাধ্যমে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সড়কপথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবে বাংলাদেশ।
নানা কারণে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। এ রুটটি ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সরসারি দ্রুত সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করবে। উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকায় এ রুটে প্রতিদিন ১২ থেকে ২৯ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ২০২০ সালে এই সংখ্যা ৪৩ হাজার ছাড়াবে। এসব চিন্তা মাথায় রেখেই প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় রুটের উভয়পাশে স্লো মুভিং ভেহিক্যাল ট্রাফিক (এসএমভিটি) লেন নির্মাণ করা হবে। ১৯০ কিলোমিটার রুটের যেখানে যানজট বেশি হবে এমনকি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য হবে ২ হাজার ৬৩৫ মিটার।
এছাড়া একটি ৪১১ মিটার দৈর্ঘ্যের রেলওয়ে ওভারপাস, ৩২টি সেতু (১৯২২ মিটার), ১৬১টি কালভার্ট (১১০২ মিটার) ১১টি পেডিসটেইন ওভারপাস (৩৯৭ মিটার), ৩৯টি আন্ডারপাস (১৯৫ মিটার) এবং একটি ইন্টারচেঞ্জ (১৫০০ মিটার) নির্মাণ করা হবে।
শিল্পায়ন, নগরায়ন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনা কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করা হবে। ফোরলেনের মাধ্যমে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) উন্নয়ন সহযোগীরা আরও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে।
প্রকল্প এলাকায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ অনেক ট্যুরিজম জোনো পযর্টকদের আনাগোনা বাড়বে। কারণ সড়কপথে যাতায়াতের নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকা।
দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে ১৯০ কিলোমিটার সড়ককে ফোরলেনে রুপান্তর ইতিবাচক দেখছেন হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।
এই প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রামে অতিমাত্রায় অপরিকল্পিত শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। এখন উত্তরবঙ্গে শিল্প কারখানার প্রসার ও বিনিয়োগ বাড়াতে চাইলে অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে।
উত্তরবঙ্গে সেভাবে মৌলিক অবকাঠামো নেই। যেগুলো আছে এতে করে কোনোরকমে কাজ চলছে। রংপুরসহ উত্তরবঙ্গে শিল্প কারখানার ভলিউম বাড়াতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমাদের মনে অনেক সময় প্রশ্ন জাগে আগে বিনিয়োগ না অবকাঠামো? তবে এখন সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে। বিনিয়োগ বাড়াতে হলে আগে দরকার অবকাঠামো। বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে হলে আগে পরিবেশ ক্রিয়েট (সৃষ্টি) করতে হবে। পরিবেশ ক্রিয়েটে এই প্রকল্পটি নানা দ্বার উন্মোচন করবে বলে মনে করি।