সমতায় শেষ বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজ

Slider খেলা

 

2016_01_17_18_10_57_1BmqvuM2kQbEH9KIKO3JfMyFc7KOUS_800xauto

 

 

 

 

খুলনা থেকে: চার ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের চতুর্থ ও শেষ ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছে সফরকারী জিম্বাবুয়ে। স্বাগতিক বাংলাদেশকে ১৮ রানে হারিয়ে সিরিজ ২-২ এ সমতায় শেষ করে এলটন চিগুম্বুরার দল। ফলে, নতুন বছরের প্রথম সিরিজ জেতা হলো না টাইগারদের।

আগে ব্যাটিং করে টাইগারদের ১৮১ রানের বিশাল টার্গেট ছুঁড়ে দেয় জিম্বাবুয়ে। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে এক ওভার বাকি থাকতেই বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয়। ১৬২ রান করে অলআউট হয় স্বাগতিকরা।

বাংলাদেশের ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে বিদায় নেন সৌম্য সরকার। মাদজিভার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে তিনি ৭ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় করেন ১১ রান। এরপর একই ওভারে তামিম ইকবালকে (১) বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন মাদজিভা।

প্রথম দুই ওভারে দুই ওপেনার সৌম্য ও তামিম বিদায় নেন। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ইনফর্ম ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান (১) ও সাকিব আল হাসান (৪) সাজঘরে ফেরেন। চিসোরো একই ওভারে দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন।

রান চেস করতে নেমে টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থতার পরিচয় দিলে দলীয় ১৭ রানে চার উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন ইমরুল কায়েস ও মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ। এই দুই ব্যাটসম্যান টাইগারদের স্কোরবোর্ডে আরও ৩৬ রান যোগ করেন। ইনিংসের সপ্তম ওভারে ১৮ রান করা ইমরুল কায়েসকে ফিরিয়ে দেন সিকান্দার রাজা। আউট হওয়ার আগে ১৪ বল মোকাবেলা করে ইমরুল দুটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান।

টপঅর্ডারের ব্যর্থতায় ধুঁকতে থাকে স্বাগতিকরা। দলীয় ৫৩ রানের মাথায় টপঅর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে ৭৫ রানের জুটি গড়েন মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ-নুরুল হাসান। ইনিংসের ১৪তম ওভারে ব্যক্তিগত ১৫ রান করে দলীয় ১১০ রানের মাথায় ফেরেন নুরুল হাসান। ১৫ বল মোকাবেলা করা নুরুল হাসান সিকান্দার রাজার বলে এলটন চিগুম্বুরার তালুবন্দি হন।

দলের বিপর্যয়ে হাল ধরেন মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতক হাঁকান তিনি। ইনিংসের ১৬তম ওভারে চিসোরোর বলে বোল্ড হওয়ার আগে রিয়াদ খেলেন ৫৪ রানের ইনিংস। ৪১ বলে ৫টি চার আর দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি এ রান করেন। ১৮তম ওভারে লুক জঙ্গোর বলে সিবান্দার তালুবন্দি হয়ে বিদায় নেন ১২ বলে একটি চার আর দুটি ছক্কা হাঁকানো মাশরাফি। আউট হওয়ার আগে ২২ রান করেন তিনি।

শেষ দিকে ৫ বলে দুটি চার হাঁকিয়ে ১০ রান করেন আরাফাত সানি। ১৯তম ওভারে ফেরেন তিনি। একই ওভারে ফেরেন আবু হায়দার রনি। আবু হায়দার ব্যক্তিগত ১০ বলে একটি করে চার ও ছয় হাঁকিয়ে ১৪ রান করলেও তা জয়ের জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। তাসকিন আহমেদ এক রান করে অপরাজিত থাকেন।

এক ওভার বাকি থাকতে ১৬২ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।

এর আগে নির্ধারিত ২০ ওভারে স্প্রিং বকরা ৪ উইকেট হারিয়ে ১৮০ রান সংগ্রহ করে। দলের হয়ে অসাধারণ একটি ইনিংস খেলেছেন ওপেনার হ্যামিলটন মাসাকাদজা। মাত্র ৭ রানের জন্য শতকের দেখা পাননি অপরাজিত থাকা এই ব্যাটসম্যান।

টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন জিম্বাবুয়ের দলপতি এলটন চিগুম্বুরা। খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে দুপুর তিনটায় শুরু হয় ম্যাচটি। সফরকারীদের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে আসেন ইনফর্ম ব্যাটসম্যান হ্যামিলটন মাসাকাদজা ও ভুসি সিবান্দা।

ইনিংসের প্রথম ওভারে বোলিং আক্রমণে এসে টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা ভুসি সিবান্দাকে ফিরিয়ে দেন। সাকিবের তালুবন্দি হয়ে দলীয় ৪ রানের মাথায় সাজঘরে ফেরেন ব্যক্তিগত ৪ রান করা সিবান্দা।

দলীয় ৪ রানের মাথায় ওপেনার ভুসি সিবান্দাকে ফিরিয়ে দিলেও টাইগারদের দ্বিতীয় উইকেটের অপেক্ষায় রেখে ব্যাট চালিয়ে যান আরেক ওপেনার হ্যামিলটন মাসাকাদজা ও তিন নম্বরে নামা রিচমন্ড মুতুম্বামি। এ দু’জন উইকেটে থেকে স্কোরবোর্ডে আরও ৮০ রান যোগ করেন।

ইনিংসের ১১তম ওভারে আবু হায়দার রনির বলে বোল্ড হন মুতুম্বামি। আউট হওয়ার আগে ২৫ বলে তিনটি চার আর একটি ছক্কায় ৩২ রান করেন তিনি।

দলীয় ৮৪ রানের মাথায় সফরকারী জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় উইকেট পড়লেও তাদের রানের চাকা ঘোরাতে থাকেন হ্যামিলটন মাসাকাদজা। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দশম অর্ধশতকের দেখা পান অভিজ্ঞ এ ব্যাটসম্যান। ম্যালকম ওয়ালারকে সঙ্গে নিয়ে আরও ৬১ রান যোগ করেন মাসাকাদজা। ইনিংসের ১৬তম ওভারে তাসকিন ফেরান ব্যাট হাতে ঝড় তোলা ম্যালকম ওয়ালারকে। মাত্র ১৮ বলে একটি চার আর তিনটি ছক্কা হাঁকিয়ে ওয়ালার করেন ৩৬ রান। তাসকিনের বলে বোল্ড হন তিনি।

১৪৫ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট হারানোর পর বড় সংগ্রহের দিকে এগুতে থাকে জিম্বাবুয়ে। ইনিংসের ১৭তম ওভারে আক্রমণে এসে সাকিব আল হাসান ফিরিয়ে দেন সিকান্দার রাজাকে। এ উইকেটের মধ্য দিয়ে সাকিব টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৫০ উইকেট নেওয়ার মাইলফলক স্পর্শ করেন।

মাসাকাদজা ৫৮ বলে ৯৩ রান করে অপরাজিত থাকেন। তার ইনিংসে ছিল ৮টি চার আর ৫টি ছক্কার মার।

বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট নেন মাশরাফি, তাসকিন, রনি ও সাকিব।

টাইগারদের দলে তিনটি পরিবর্তন আসে। তামিম ইকবাল তৃতীয় ম্যাচে না খেললেও চতুর্থ ম্যাচে একাদশে ফেরেন। তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানিকেও সুযোগ দেওয়া হয় শেষ ম্যাচে। তাদের জায়গা করে দিতে শেষ ম্যাচে ছিলেন না মুক্তার আলি, মোহাম্মদ শহীদ আর মোসাদ্দেক হোসেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে (২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর) প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। সময়ের পরিক্রমায় এবার ৫০তম ম্যাচেও প্রতিপক্ষ জিম্বাবুইয়ানরা। অন্যদিকে, সংক্ষিপ্ত ফরমেটে জিম্বাবুয়ের এটি ৪৮তম ম্যাচ।

বাংলাদেশ একাদশ: মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), আরাফাত সানি, আবু হায়দার রনি, ইমরুল কায়েস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, নুরুল হাসান, সাব্বির রহমান, সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল, তাসকিন আহমেদ।

জিম্বাবুয়ে স্কোয়াড: এলটন চিগুম্বুরা, টেন্ডাই চিসোরো, গ্রায়েম ক্রেমার, নেভিল মাদজিভা, হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, লুক জঙ্গো, পিটার মুর, রিচমন্ড মুতুম্বামি, ভুসি সিবান্দা, সিকান্দার রাজা, ম্যালকম ওয়ালার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *