২০ বছর পর সরকার বলছে সমাজ প্রস্তুত নয়

Slider জাতীয়

2016_01_22_16_33_18_XJQjUkJnHN8ZPI7MrtG8AFNKJRuWlS_original

 

 

 

 

ঢাকা: সিডও সনদ বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর কুড়ি বছর পেরিয়ে গেছে। এখন এসে সরকার বলছে এ সনদ বাস্তবায়নে দেশের মানুষ এখনো প্রস্তুত নয়। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেতারা।

সনদের আর্টিক্যাল-২ এর দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম বলেছেন, ‘পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে ৮৭ শতাংশ নারী গৃহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সিডও সনদের বাস্তবায়ন না হলে এ অবস্থার পরিবর্তন হবে না।’

শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত জাতীয় পরিষদ সভায় তিনি একথা বলেন।

আয়েশা খানম বলেন, ‘বর্তমানে যে সরকার ক্ষমতায় রয়েছে ১৯৯৬-৯৭ সালেও তারা ক্ষমতায় ছিল। তখন তারা আমাদের বলেছিল সিডও সনদের আর্টিক্যাল-২ ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু প্রায় বিশ বছরেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এতদিন পর সরকার বলছে, সেটার জন্য আমাদের সমাজ নাকি প্রস্তুত নয়।’

নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় সংসদের নারী প্রতিনিধিদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ করতে হবে উল্লেখ কতে তিনি বলেন, ‘নেত্রীকে (প্রধানমন্ত্রী) তার মতো করে কাজ করতে দিন। তার উপর সকল দায় দেয়া যাবে না। আপনারা ব্যক্তিগত পর্যায়ে কী কাজ করছেন সেটা জানতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের বিরুদ্ধে নয়। আমরা সরকারের ভুল-ত্রুটি নিয়ে কথা বলবো। তৃণমূলে লোকাল গভর্নমেন্ট নিয়ে কথা বলবো। গণতন্ত্রকে আরো স্থায়ী ও প্রতিষ্ঠিত করার কথা বলবো। কথা বললেই যেন অপরাধ না হয়। এটাকে মেনে নেয়ার অনুশীলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দিকে আগ্রসর হতে হবে।’

এ সময়  ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্যের এই সমাজে একটি বিকৃত মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে। কর্মক্ষেত্র ও নিজ গৃহে নারী নির্যাতন এবং বৈষম্যের ধরন আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থনীতিতে নারী অবদান একেবারেই মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। তথ্য-প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের যুগে নারীর জন্য সম্ভাবনা এবং সংশয় উভয়ই রয়েছে।’

ঢাকাস্থ নরওয়ের রাষ্ট্রদূত মেরেটে লুন্ডিমো বলেন, ‘দেশের অগ্রগতির জন্য নারী-পুরুষের সমঅধিকার ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রয়োজন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে নারীদের যে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে, সেটাই তাদের ক্ষামতায়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

বর্তমান বাংলাদেশে সর্বক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ রয়েছে এবং পাশাপাশি তাদের জন্য চ্যালেঞ্জগুলো রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন ইউএন উইমেনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্রিস্টিন সুসান হান্টার।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি আঞ্জুমান আরা আকছের, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানুসহ সারা দেশ থেকে আসা জাতীয় পরিষদের সদস্যরা এ সময় উপস্তিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ৩ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন দেশে ‘সিডও’ (CEDAW) দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৩১ বছর ধরে সিডও সনদের সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলোর (২ ধারা এবং ১৬.১-এর ‘গ’ ধারা) বিষয়ে দ্বিমত জানিয়ে আসছে। ২০১৫ সালের মে মাসে সরকার জাতিসংঘ সিডও সনদবিষয়ক কমিটিকে অষ্টম সাময়িক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের সমাজ এখনো অভিন্ন পারিবারিক আইন গ্রহণে প্রস্তুত নয়, এ বিষয়ে ধর্মীয় নেতাদের মধ্যেও মতানৈক্য আছে।

‘নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণ সনদ’ ‘সিডও সনদ’ নামে পরিচিত। জাতিসংঘের এই সনদের ইংরেজি নাম: ‘কনভেনশন অন দ্য এলিমিনেশন অব অল ফরমস অব ডিসক্রিমিনেশন অ্যাগেইনস্ট উইমেন’।

নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ১৯৪৬ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ‘জাতিসংঘ’ ও ‘নারীর মর্যাদাবিষয়ক কমিশন’ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়ে সবশেষে ‘সিডও সনদ’ প্রণয়ন করেছে। সেসব ধাপ হচ্ছে: ১. ১৯৫২ সালে গৃহীত নারীর রাজনৈতিক অধিকার সনদ। ২. আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ নিতে উদ্যোগী হয়ে নারীর কাজের ক্ষেত্রে সমান অধিকার ও মজুরিবৈষম্য দূর করার সুপারিশ তৈরি করে যেন শ্রম সংস্থার সনদে সেসব যুক্ত করা হয়। ৩. ‘ইউনেসকো’র সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষার ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্যগুলো দূর করার পদক্ষেপ নেয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *