চাপের মুখে ৫৬ লাখ শিক্ষার্থী

Slider শিক্ষা

 

 

55_185113

 

 

 

 

 

শিক্ষক আন্দোলন নিয়ে বছরের শুরুতেই বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে দেশের উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী প্রায় ৫৬ লাখ শিক্ষার্থী। চলতি সপ্তাহে দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ৩০৬টি সরকারি কলেজে একযোগে শিক্ষকদের নানা মেয়াদে কর্মবিরতি শুরু হচ্ছে। এতে উচ্চশিক্ষায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অচল হয়ে পড়ার মুখে এসে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও সেশনজটে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কলেজ শিক্ষকরা আন্দোলনে নামলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি কলেজগুলোতে অন্তত ২৬টি পরীক্ষা পিছিয়ে যেতে পারে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিরাজমান সমস্যার সমাধান মূলত অর্থ মন্ত্রণালয়ের হাতে। তারা বলেন, চলতি অর্থবছরে বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমনিতেই অর্থ বরাদ্দ কম পেয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নমূলক সব কার্যক্রম কাটছাঁট করতে হয়েছে এবার। এর ওপর শিক্ষকদের দাবি পূরণের সামর্থ্য ও এখতিয়ার এ মন্ত্রণালয়ের হাতে নয়। সে কারণে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও সমকালের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, শিক্ষকদের দাবিগুলো তারা অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন। দাবির বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।
এর আগে ৪ ও ৫ জানুয়ারি সারাদেশের ৩০৬টি সরকারি কলেজ বন্ধ রেখে শিক্ষকরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন। তারা বিসিএসের ২৬টি ক্যাডারের সমন্বয়ে গঠিত প্রকৃচির ঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে ১১ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করবেন। ওই দিনগুলোতে দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত তারা ক্লাস নেবেন না।

আগামী ১১ জানুয়ারি থেকে দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। এমনকি এ সময়ে কোনো পরীক্ষা ও সান্ধ্যকালীন কোর্সও পরিচালনা করা হবে না। তাদের সঙ্গে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরাও দাবি জানিয়েছেন, নতুন পে স্কেলে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড তুলে দেওয়ায় ৪০ হাজার শিক্ষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারাও যে কোনো সময় আন্দোলনে নামবেন।
গত রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি পালন করছেন। ক্লাসেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে জানানো হয়েছে। ১১ জানুয়ারি একযোগে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু হবে। গত বছরের মে মাসে অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো ঘোষণার পর পরই চার দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এমনকি দাবি আদায়ে কয়েক দফায় অর্ধদিবস ও পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা। সর্বশেষ এখন অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হলো।

সরকারি কলেজের ১৫ হাজার শিক্ষক :পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনের আগেই আন্দোলনে নেমেছেন ৩০৬ সরকারি কলেজের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক। সিলেকশন গ্রেড, টাইম স্কেল বাতিল করায় এবং অধ্যাপকদের বিদ্যমান বৈষম্যমূলক বেতন স্কেল আপগ্রেডেশনের দাবিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি একাধিকবার কর্মবিরতিও পালন করেছে। কিন্তু দাবির সপক্ষে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা পর্যন্তই তারা সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু প্রকাশিত গেজেটে তাদের দাবির কোনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় আজ ও কাল আবারও কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে।

 
সরকারি কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নাসরীন বেগম বলেন, তাদের দাবি হলো পঞ্চম গ্রেডের সহযোগী অধ্যাপকরা পদোন্নতি পেয়ে অধ্যাপক পদে তৃতীয় গ্রেড পাবেন। আর সহযোগী অধ্যাপকদের পদ চতুর্থ গ্রেডে উন্নীত করতে হবে। নায়েম, মাউশি, এনসিটিবি, শিক্ষা বোর্ডগুলোর প্রধান ও অনার্স-মাস্টার্স কলেজের অধ্যক্ষের পদ প্রথম গ্রেডে উন্নীত করতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষা প্রশাসনের পরিচালক ও অনার্স-মাস্টার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ, শিক্ষা বোর্ডের সচিব ও এনসিটিবির সদস্য পদ দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করতে হবে। আর অনার্স-মাস্টার্স কলেজে প্রতিটি বিভাগের দুটি অধ্যাপকের পদ ও একজন সিনিয়র অধ্যাপককে দ্বিতীয় গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল, সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি, অন্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের শিক্ষায় প্রেষণ বাতিল এবং অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতো সমান সুবিধা দিতে হবে।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, তাদের দু’দিনের কর্মবিরতির পরও দাবি মানা না হলে ২২ জানুয়ারি সাধারণ সভা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তবে পরবর্তী কর্মসূচি আরও কঠোরের দিকেই যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *