আওয়ামী লীগ ছাড়া সব প্রার্থীই সেনাবাহিনী চায়, তবুও ইসির না

Slider রাজনীতি

images_109613

 

 

 

 

ঢাকা: বিএনপি ও স্বতন্ত্রসহ বিরোধী প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় অব্যাহত বাধা ও হামলা চালিয়ে আহত করা, বিএনপির প্রার্থীর কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা, স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাড়িতে গিয়ে হামলা চালিয়ে হাত গুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার পরও পৌরসভা নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করেন না প্রধান নির্বাচন কশিমনারসহ অন্য কমিশনাররা। টেলিভিশনের খবরে দৃশ্যমান ফুটেজ, অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ও দৈনিক পত্রিকাগুলোতে প্রতিদিনই প্রকাশিত হচ্ছে নির্বাচনী সহিংসতার তাজা খবর। একমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেওয়া অন্য সব দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদিনই সেনাবাহিনী মোতায়েন চাচ্ছেন। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণে অতীতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রশংসিত হওয়ায় ভোটারাও চাচ্ছেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন হোক। দেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপি একাধিকার নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে গিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়ে এসেছে। দলটির নয়াপল্টন কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার জোর দাবি জানিয়েছেন নেতারা। হামলার শিকার হয়ে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে মেয়র প্রার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিকার চাচ্ছেন। একই সঙ্গে লিখিতভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন চাচ্ছেন তারা। শুধু বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীই নয়, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও সেনা মোতায়েনের জোর দাবি জানিয়ে আসছেন। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর লোকেরা প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে হামলা চালাচ্ছে। আর এ কারণেই সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব প্রার্থী সেনাবাহিনী মোতায়েন চান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা আ স ম হান্নান শাহ বলেছেন, কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কোন বিকল্প নেই। দলটির স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, সেনাবাহিনী ছাড়া লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি হবে না। ফলে সরকার দলীয় লোকেরা জোর করে ভোট ছিনিয়ে নেবে। জনগণ তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে ব্যর্থ হবে।

এদিকে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক বিএনপি-জামায়াত, স্বতন্ত্র, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্র্থীসহ অন্য প্রার্থীর উপর সরকার দলীয় প্রার্থীর লোকেরা হামলা চালাচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। গত বুধবার গণসংযোগকালে শরীয়তপুরে বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকদের উপর আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় ১০ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় রিটার্নিং অফিসার ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও ফল পাওয়া যায়নি।

কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য তাজুল ইসলামের এপিএস মনিরুল ইসলাম রতনের নেতৃত্বে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী গণসংযোগে হামলা ও ভাঙচুর করেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা। ২৪ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে লাকসাম পৌরসভার গাজীমোড়া এলাকায়  বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মজির আহমেদ নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গেলে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় আনোয়ারুল আজিমের গাড়ি ভাঙচুর ও মজির আহমেদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে।

আনোয়ারুল আজিম বলেন, গত কয়েক দিন থেকেই বিএনপির প্রচারে বাধা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তাই গাজীমোড়া এলাকা গণসংযোগ করতে দেবে না বলে বলে আগেই প্রচার করছিল। সকালে প্রচারে গেলে আমার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

যশোর পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী মারুফুল ইসলামের জনসংযোগকালে বৃহস্পতিবার দুষ্কৃতকারীরা হামলা চালিয়েছে। এ সময় মারুফুল ইসলামের চার-পাঁচ সমর্থকও আহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা শরীফুল আলমকে এলাকায় না যেতে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জে উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক। তিনি বলেন, এলাকায় গেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন থানার ওসি বদরুল আলম।

ভোলার বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর বাড়িতে গিয়ে বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লোকেরা। এতে কাউন্সিলর প্রার্থীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। ওই এলাকার বিএনপি মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থীকে ভোট না চাইতে বলেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু ইউসূফ।

পাবনার সুজানগর পৌরসভায় ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লোকেরা সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাচ্ছে’ অভিযোগ করে সেনাবাহিনী মোতায়েন চেয়েছেন দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী তোফাজ্জাল হোসেন তোফা। বুধবার পাবনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি জানান। তোফাজ্জাল হোসেন সুজানগর পৌরসভার বর্তমান মেয়র এবং উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া মেয়র প্রার্থী আব্দুল ওহাব এর সন্ত্রাসী বাহিনী এলাকায় সহিংসতা অব্যাহত রেখেছে। আমার কর্মীদের বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও মারপিট হুমকি দিয়ে আসছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিকল্প নেই।

তোফাজ্জল হোসেন তোফা বলেন, মৌখিক ও লিখিতভাবে সুজানগর পৌরসভার রিটার্নিং অফিসার (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) কে কয়েক দফা অভিযোগ জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। নির্বাচন কমিশনেও ফ্যাক্স যোগে অভিযোগ করেছি। একই সঙ্গে কমিশনের কাছে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবিও করেছি।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মঙ্গলবার রাতে কৃষক দলের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম হত্যাকা-ের শিকার হন। এ হত্যাকা- আওয়ামী লীগ ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। খুনিদের বিচারের দাবিতে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ ভূইয়া।

এ পরিস্থিতিতে পৌরসভা নির্বাচনকে গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে একটি চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যতই চাপ আসুক নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে না বিএনপি। বৃহস্পতিবার দুপুরে সৈয়দপুরে ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালানোর আগে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি অব্যাহত সন্ত্রাস-সহিংসতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না  নেয়াসহ নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন পক্ষপাতমূলক আচরণের সমালোচনা করেন।

এতোসব ঘটনার পরও বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী বলছেন, ব্যালট বাক্স যেমন স্বচ্ছ, নির্বাচন ঠিক তেমনই স্বচ্ছ হবে। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্যে একটি নির্বাচন আমরা উপহার দেব। নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কোনো প্রয়োজন নেই বলে দাবি করেন তিনি। নওগাঁ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নওগাঁ ও নজিপুর পৌরসভার সকল প্রার্থী এবং জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এমন দাবি করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *