বয়স এখন ১১১

টপ নিউজ

old_man_53773ঢাকা: ছামিরন নেছা বৃদ্ধা । জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম সাল ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দ। সে মোতাবেক তার বয়স ১১১ বছর। কিন্তু তার আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের ধারণা, ছামিরন নেছার বয়স প্রায় ১২৫ বছর। সেই কবে বিয়ে হয়েছিল! নববধূ রূপে বাবার বাড়ি ছেড়ে  স্বামী বাড়ি চলে গেছেন কিভাবে। এখনও তার স্মৃতিতে ভেসে আছে সেদিনের সব স্মৃতি। তারপর সন্তানের জন্ম, তাদের বিয়ে, তাদের ঘরে সন্তান, অনেক সন্তানের মৃত্যু, বৃটিশ শাসনামল, ক্ষুদিরামের ফাঁসি, আরো কত ঘটনার সাক্ষী তিনি। বয়স তার কোন কিছুই মুছে দিতে পারেনি।
ছামিরন নেছার জন্ম ঘাটাইল উপজেলার শংকরপুর গ্রামে। বর্তমানে তিনি একই উপজেলার দিগর ইউনিয়নের নজুনবাগ গ্রামে ছেলেদের সঙ্গে বাস করছেন। তার পিতার নাম নৈয়ম তালুকদার, মাতার নাম কছিমন নেছা। তার ছয় ভাই বোনের মধ্যে একমাত্র তিনিই জীবিত আছেন।

বয়সের ভারে ছামিরন নেছার শরীর এখন নুয়ে পড়েছে। কোমর বেঁকে গেছে, মুখের চামড়া কুঁচকে ঝুলে পড়েছে, ভাঙা চোয়াল আর চোখ দুটো ঢুকে গেছে কোটরে। মাথার চুল ধবধবে সাদা। একচোখে ছানি পড়েছে। তবে অন্য চোখে ঠিকই দেখতে পান। বড় ধরনের কোন রোগ তাকে আক্রমণ করতে পারেনি। তার  শ্রবণশক্তি ও স্মৃতিশক্তি প্রখর। দূর থেকে কাউকে দেখেই চিনতে পারেন। কণ্ঠ শুনেই বলতে পারেন কে কথা বলছে। ছামিরন নেছার কাছে তার ছোটবেলার কথা জানতে চাইলে কোন জড়তা ছাড়াই বলে যান পেছনে ফেলে আসা সব স্মৃতিকথা। পালকিতে চড়ে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার দৃশ্য তার কাছে এখনো স্পষ্ট হয়ে আছে। তারপর  বৃটিশ আমলে তার স্বামীর ম্যাট্রিকুলেশন পাসের কথা ভুলে যাননি।

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী ক্ষুদিরামের ফাঁসির ঘটনা তাকে এই বয়সেও ভাবিয়ে তোলে। তার ছোটবেলার স্মৃতির সঙ্গেই ক্ষুদিরামের ফাঁসির ঘটনা জড়িয়ে আছে। কেউ সে ঘটনা শুনতে চাইলে তিনি এখনো তা অবলীলায় বলে যেতে পারেন।

ছামিরন নেছা জানান, ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়েছিল। তার ঘরে জন্ম নেয় ১৩ সন্তান। তাদের মধ্যে বর্তমানে জীবিত আছেন ৬ জন। তার নাতি-নাতনীর সংখ্যা ২৫ জন। নাতি-নাতনীর ঘরেও নাতি-নাতনী রয়েছে। তাদের সংখ্যা ১৭ জন। নাতি-নাতনীদের মেলায় বসে ভালই দিন কাটছে ছামিরন নেছার। সন্তানরা পড়ালেখা শিখে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে- জীবনের বড় সার্থকতা এখানে। তার আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। ছামিরন নেছার কামনা এখন একটাই- মৃত্যু যেন হয় ঈমানের সঙ্গে। (মানবজমিন)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *