মন্দিরে প্রবেশে নারীর ‘পবিত্রতা’ যাচাই!

লাইফস্টাইল

 

2015_11_24_17_00_14_brt9qM20JSUyF24UwcbFCyhGS2NDAC_original

 

 

 

 

 

ঢাকা: আপনার কি পিরিয়ড হয়েছে? উপাসনালয়ে প্রবেশের আগে কোনো পুরোহিত বা গার্ড বা যন্ত্রদানব যদি আপনাকে প্রশ্ন করে বসে তখন কী করবেন? সুদীর্ঘকাল ধরে পুরুষতান্ত্রিক এ বিশ্বে মনে মনে অনেকেই নারীর প্রতি নানা জঘন্য প্রশ্ন ছুঁড়েছেন, কেউ প্রকাশ্যে কেউ গোপনে। এবার আমাদের প্রতিবেশি দেশ দক্ষিণ ভারতের একটি মন্দিরে ঢোকার আগে নারী রজঃস্বলা কি না তার পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ঢোকো, নয় দূর হও- ব্যাপারটা যেন এমনই!

বলা হয়েছে ‘শুচিতা’ যাচাই করতে করা হবে স্ক্যানও। কেরালার সবরিমালা মন্দির কর্তৃপক্ষের এই মন্তব্যে ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এমনিতেই ভারতে রজঃস্বলা অবস্থায় মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি নেই। অনুমতি নেই কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করারও। এ ছাড়া অনেক স্থানে অশৌচ অবস্থায় নারীদের রান্নাঘরেও প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।

 

এসব নিয়ে বিতর্ক, অসন্তোষ আগে থেকেই ছিল। এবার কেউ রজঃস্বলা কি না সেটাও জেনে নিতে রীতিমতো তার শরীর স্ক্যান করার ইচ্ছা প্রকাশ করল মন্দির কর্তৃপক্ষ। স্বভাবতই এই নিয়ে দেশজুড়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

সবরিমালা মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মন্দিরে প্রবেশে ইচ্ছুক কোনো নারী রজঃস্বলা কি না, তা জানতে শরীর স্ক্যান করা হবে।

মন্দিরের প্রধান পুরোহিত গোপাল কৃষ্ণ বলেন, ‘এমন একদিন আসবে যখন লোকে জানতে চাইবে নারীদের সারা বছর মন্দিরে প্রবেশের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত কি না। বর্তমানে সঙ্গে মারণাস্ত্র রয়েছে কি না, তা পরীক্ষার জন্য স্ক্যান মেশিন রয়েছে। ভবিষ্যতে এমন সময় আসবে যখন নারীদের মন্দিরে প্রবেশের সঠিক সময় হয়েছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য তাদের শরীর স্ক্যান করার মেশিন উদ্ভাবিত হবে। তখন নারীদের মন্দিরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে কি না, বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করব।’

পুরোহিত বলেন, “আমাদের দরকার মহিলাদের ‘শুচিতা’ যাচাইয়ের যন্ত্র। মন্দিরে তারা প্রবেশ করতে পারবেন কি না তা হলে সহজেই বোঝা যাবে।”

পুরোহিতের এ অরুচিকর মন্তব্যের পর ভারতজুড়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতো চলছে নিন্দার ঝড়। মন্দির কর্তৃপক্ষের এ ঘোষণার পর ফেসবুকে ‘হ্যাপি টু ব্লিড’ নামের একটি ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন প্রগতিশীল নারীরা। অনেকে লিখেছেন, ‘মেনস্ট্রয়েশন ইজ এ আর্ট’!

 

ফেসবুকের হ্যাপি টু ব্লিড-এর অফিসিয়াল পেজে বলা হয়েছে, ‘এই ধরনের মন্তব্য চরম পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতার পরিচয়। যুগ যুগ ধরে চলে আসা নারী বিদ্বেষী বৈষম্যমূলক ভাবনার হাত শক্ত করে।’

গত শনিবার থেকে শুরু হয়েছে এই ক্যাম্পেইন। নারীদের অনুরোধ করা হয়েছে তারা যেন স্যানিটারি ন্যাপকিন, চার্ট পেপার বা প্ল্যাকার্ডে ‘হ্যাপি টু ব্লিড’ লিখে নিজেদের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন। এই ক্যাম্পেইনে নারীদের সঙ্গে বহু পুরুষও শামিল হয়েছেন।

এ ক্যাম্পেইন নারীদের অনুপ্রাণিত করেছে। পুরোহিতে এ মন্তব্য নিয়ে করা গণমাধ্যমগুলোর সংবাদ শেয়ার করে বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে নারী-পুরুষ সবাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *