চার রাষ্ট্রীয় ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ

Slider অর্থ ও বাণিজ্য
untitled-9_174425
সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রাষ্ট্রীয় মালিকানার এ ৪ বাণিজ্যিক ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগের ঘটনা এই প্রথম। এমওইউ স্বাক্ষরের পরও সন্তোষজনক অগ্রগতি না হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল বুধবার চার ব্যাংকের চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়ে পর্যবেক্ষক নিয়োগের কথা জানানো হয়েছে। ব্যাংকগুলোতে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া প্রত্যেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পদের কর্মকর্তা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি সমকালকে বলেন, এই চার ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি হলে সামগ্রিক ব্যাংক খাতের ওপর তার প্রভাব পড়ে। শুধু পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিলে হবে না, পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী সমকালকে বলেন, নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ না কমে বরং বাড়ছে। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সম্পাদিত এমওইউর শর্ত বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি তত্ত্বাবধান এবং পরিবীক্ষণের জন্য চার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন ব্যাংকগুলোর সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বলে তিনি আশা করেন।
পর্যবেক্ষক হিসেবে সোনালী ব্যাংকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মোহাম্মদ নওশাদ আলী চৌধুরীকে। জনতা ব্যাংকে আহমেদ জামাল, অগ্রণী ব্যাংকে নির্মল চন্দ্র ভক্ত ও রূপালী ব্যাংকে আবদুর রহিম এ দায়িত্ব পালন করবেন। কোনো ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি হলে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে অনেক ব্যাংকে পর্যবেক্ষক দেওয়া হলেও কখনও নির্বাহী পরিচালকদের পর্যবেক্ষক দেওয়ার নজির নেই। বর্তমানে সরকারি মালিকানার বেসিকসহ পাঁচটি ব্যাংকে পর্যবেক্ষক রয়েছে। তাদের প্রত্যেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অফ-সাইট সুপারভিশন বিভাগ থেকে চেয়ারম্যানদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দিতে হবে। দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে এখন থেকে প্রতিটি পর্ষদ বৈঠকের অন্তত তিন কার্যদিবস আগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ পর্ষদ বৈঠকে উত্থাপিত সব এজেন্ডা পাঠাতে হবে। পর্ষদ বৈঠক ছাড়াও পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কমিটি ও অডিট কমিটির বৈঠকেও তারা উপস্থিত থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে মতামত তুলে ধরবেন।
জুনভিত্তিক পরিস্থিতি:বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর জুনভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনা করে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, এসব ব্যাংকের মুখ্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সন্তোষজনক পর্যায়ে নেই। ঝুঁকির ক্ষেত্রে সোনালী ও জনতা ব্যাংকের রেটিং নির্ণীত হয়েছে ৪ বা প্রান্তিক এবং অগ্রণী ও রূপালীর ৩ বা মোটামুটি ভালো। আর সামগ্রিক ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ থাকলেও এই চার ব্যাংকে রয়েছে ২৬ দশমিক ৯২ শতাংশ। এসব খেলাপি ঋণের অধিকাংশই আবার মন্দ ও ক্ষতিজনক মানে শ্রেণীকৃত। চারটি ব্যাংকের মধ্যে সোনালীর ৮ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে মন্দজনক মানে শ্রেণীকৃত ৮৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ। জনতার ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার মধ্যে ৭৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ মন্দ। অগ্রণীর ৪ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে মন্দমানে ৮৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। আর রূপালী ব্যাংকের এক হাজার ৫২২ কোটি টাকার মধ্যে ৯৬ দশমিক ২০ শতাংশই মন্দমানে শ্রেণীকৃত।
চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে চারটি ব্যাংকে পাঁচ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা নতুনভাবে খেলাপি হয়েছে। অথচ এ সময়ে তাদের আদায় হয়েছে মাত্র ৯৮৪ কোটি টাকা। চার ব্যাংকের পরিচালন ও নিট মুনাফা সন্তোষজনক পর্যায়ে নেই। গত জুন শেষে তাদের ১৮৩টি শাখা লোকসান গুনেছে। মূলধন ঘাটতি বেড়ে জুন শেষে সোনালীতে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা। জনতা ৩৪৫ কোটি ও রূপালী ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি ৫৫৪ কোটি টাকা। তবে অগ্রণী ব্যাংকে গত জুনে ৫২ কোটি টাকার মূলধন উদ্বৃত্ত ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *