বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে চুক্তি সই

তথ্যপ্রযুক্তি

untitled-5_173060

 

 

 

 

স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য বিটিআরসি এবং ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুুক্তির মধ্য দিয়ে স্যাটেলাইট নির্মাণের কাজ শুরু হবে এবং ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে এটি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে। গতকাল বুধবার সকালে স্থানীয় একটি হোটেলে আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে এই চুক্তি স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের চেয়ারম্যান অ্যান্ড সিইও জিন লঁ গ্যালি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি আউবার্ট, বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান, প্রকল্প পরিচালক রাজ্জাক, বিটিআরসির সচিব সারওয়ার আলমসহ মন্ত্রণালয়,
বিটিআরসি এবং থ্যালেস স্পেস অ্যালেনিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম অনুষ্ঠানে বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন দেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণেরও। জাতির জনকের সে স্বপ্নই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ দিয়ে পূরণ হবে। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে স্যাটেলাইট নির্মাণের কাজ শুরু হবে এবং ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে এটি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক উদ্যোগ এবং তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দিকনির্দেশনাতেই জাতির জন্য গৌরবের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে সারা বাংলাদেশে স্থল ও জলসীমায় নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা ও সম্প্রচার কার্যক্রম নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ডিটিএইচ প্রযুক্তিতে ঘরে ঘরে টেলিভিশন দর্শকদের উন্নতমানের ছবি ও শব্দ উপহার দেওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইট অপারেটরদের ভাড়া বাবদ টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বছরে যে প্রায় ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করছে তারও সাশ্রয় হবে এবং দেশের টাকা দেশেই থেকে যাবে। এ ছাড়া স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার অন্য দেশে ভাড়া দিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করাও সম্ভব হবে। স্যাটেলাইটভিত্তিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। তিনি জানান, স্যাটেলাইট কার্যক্রম তদারকের জন্য একটি পৃথক কোম্পানি গঠন করা হবে।
থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের সিইও জিন লঁ গ্যালি বলেন, বাংলাদেশের গৌরবের অংশীদার হতে পেরে থ্যালেস পরিবার এবং ফ্রান্সের জনগণ আনন্দিত। তিনি বলেন, ফ্রান্স ও বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে এবং স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে এ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।
প্রকল্প পরিচালক গোলাম রাজ্জাক জানান, স্যাটেলাইট সিস্টেম নির্মাণ, উৎক্ষেপণ এবং পরবর্তী পরিচালনার বিষয়ে থ্যালেস অ্যালেনিয়ার টার্নকি ভিত্তিকে পাঁচ বছরের কিছু বেশি সময়ের জন্য চুক্তি হয়েছে। স্যাটেলাইটের মূল আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ১৫ বছর। স্যাটেলাইটটিতে ২৬ কেইউ ব্যান্ডের ট্রান্সপন্ডার এবং ১৪ টিসি ব্যান্ডের ট্রান্সপন্ডারসহ মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে।
স্যাটেলাইট নির্মাণ ও উৎক্ষেপণের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে এবং বাকি টাকা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করবে। এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে চলতি বছরের শুরুতে রাশিয়ার ইন্টার স্পুটনিকের কাছ থেকে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে কক্ষপথ ভাড়া নেয় বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *