লড়তে চায় বিএনপি তবে প্রার্থী কোথায় বিশেষ অভিযানে ৬ দিনে গ্রেফতার সাড়ে ৫ হাজার, তৃণমূল নেতারা ঘরছাড়া

Slider টপ নিউজ

1447179935

 

 

 

 

প্রকাশ্যে সমালোচনা করলেও প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে হতে যাওয়া আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগ্রহ রয়েছে বিএনপির। বলা যায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে দল ও দলের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অভ্যন্তরীণ আগাম সিদ্ধান্তই রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বিষয়টিকে অনেকটা খোলাসা করে দিয়ে বলেছেন, ‘খালি মাঠে সরকারকে গোল করার সুযোগ দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।’ নির্বাচনে বিএনপির লড়ার ইচ্ছা থাকলেও বিপত্তি দেখা দিয়েছে প্রার্থী পাওয়া নিয়ে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেককেই ইতোমধ্যে গ্রেফতার করে কারাগারে নেয়া হয়েছে। যৌথবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে গত ছয় দিনে বিভিন্ন জেলায় ২০ দলের অন্তত সাড়ে পাঁচ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলছে বলেও বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ৩২টি জেলায় বিএনপিসহ ২০ দলের সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে শুধু বিএনপির নেতা-কর্মী রয়েছেন দুই হাজারের বেশি। তাদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা পরোয়ানা না থাকলেও গ্রেফতার করা হচ্ছে। এতে সারাদেশে দল-জোটের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মাঝে ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের’ নামে সরকার কার্যত আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপিসহ ২০ দলকে প্রার্থীশূন্য করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই প্রায় পুরো দেশব্যাপী এই ধরপাকড় চালাচ্ছে বলে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন।
বিএনপির ‘থিংকট্যাংক’ হিসেবে পরিচিত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘একদিকে সরকার বলছে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করতে চায় তারা। আবার বিশেষ অভিযানের নামে সারাদেশে বিএনপি জোটের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এভাবে যদি সম্ভাব্য প্রার্থীদের ধরা হয় এবং অন্যদেরও পালিয়ে বেড়াতে হয়, তাহলে বিএনপি বা তাদের জোট প্রার্থী পাবে কীভাবে! এটা তো নির্বাচনে সবার জন্য সমতল মাঠ তৈরির পরিপন্থী। তাছাড়া বিএনপি জোটের নেতা-কর্মীদের জেলে রেখে নির্বাচনের আয়োজন করা হলে সেটি হবে প্রহসন।’ এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশেষ অভিযানে বেশ কয়েকটি জেলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীসহ দুই শতাধিক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি খন্দকার রাশেদুল আলম রাশেদ, রাজশাহী মহানগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি আবদুল হান্নান রয়েছেন। গতকাল বিকেল পর্যন্ত জামালপুরে গ্রেফতার করা হয়েছে ১৪৯ জনকে, এরমধ্যে ২৩ জন বিএনপির, ১৯ জন জামায়াত-শিবিরের। বাকিরা বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি বলে দাবি করেছে পুলিশ। কুমিল্লার চান্দিনায় গতকাল দুই কাউন্সিলরসহ ১২ নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আগেরদিন যৌথবাহিনীর বিশেষ অভিযানে ৯ জেলায় গ্রেফতার করা হয় ৩৪২ জনকে। এদের ৬৭ জন বিএনপির, ১২৮ জন জামায়াতের। অবশিষ্ট ১৪৭ জন বিভিন্ন মামলায় পলাতক ছিলেন। গ্রেফতারকৃত সবাইকে ইতোমধ্যে কারাগারে পাঠানো হয়।
রবিবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ‘যারা ব্লগার, পুলিশ, প্রকাশকসহ সাধারণ মানুষকে খুন করছে, তাদের ও সহযোগীদের ধরতে সারাদেশে কম্বিং (চিরুনি) অভিযান চালানো হচ্ছে। যারা নাশকতার সঙ্গে জড়িত তাদের ধরা হচ্ছে।’
যৌথবাহিনীর এই অভিযান সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রতিবেদনে যাদেরকে সন্দেহভাজন হিসেবে বলা হয়েছে, পুলিশ তাদেরই ধরছে।’ নিরপরাধ কাউকে ধরা হচ্ছে না বলেও দাবি করেন তিনি।
তবে আওয়ামী লীগ, সরকার ও প্রশাসনে খবর নিয়ে জানা গেছে, দেশব্যাপী হঠাত্ নাশকতা বেড়ে যাওয়ায়, বিশেষ করে ব্লগার, প্রকাশক ও পুলিশ খুনের ঘটনায় বাড়তি সতর্কতার অংশ হিসেবে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের চূড়ান্ত রায়কে কেন্দ্র করে কেউ যেন দেশের কোথাও নাশকতা সৃষ্টির সুযোগ না পায়, সে লক্ষ্যে আগাম সতর্কতার বিষয়টিও যুক্ত রয়েছে এই অভিযানে। এছাড়া আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখাও এই অভিযানের অন্যতম লক্ষ্য।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, ‘দুর্বৃত্তদের ধরার নামে সরকার মূলত বিএনপির নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিক হয়রানি করছে। বিএনপি নির্বাচনে যেতে চাইলেও যেন প্রার্থী দেয়ার মতো লোক না পায়, সেই দুরভিসন্ধি থেকেই এই ধরপাকড় করা হচ্ছে বলে আমি মনে করি। যেমনটি এই সরকার করেছিল ঢাকার দুটি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময়েও। তখনও আমাদের দল সমর্থিত মেয়রদের, বিশেষ করে কাউন্সিলরদের প্রচারণায় নামতেই দেয়নি পুলিশ। এখনও সেই কাজটিই করা হচ্ছে। সরকার যদি সত্যিকার অর্থে ভালো নির্বাচন করতে চায়, তাহলে তাদের উচিত অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত বিএনপি নেতা-কর্মীদের মুক্ত করে দেয়া।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *