আরও নাশকতার আশঙ্কা সতর্ক থাকার নির্দেশ

Slider সারাদেশ

 

66_170304

 

 

 

 

 

দেশে আরও নাশকতা হতে পারে_ এমন আশঙ্কা করছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা। ওই নাশকতা মোকাবেলায় তাদের আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। জননিরাপত্তায় গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহর-বন্দর এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বাড়ানো এবং সন্দেহজনক এলাকার তালিকা করে তল্লাশি করতে বলা হয়েছে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় আরও কঠোর নজরদারি বাড়াতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি কেপিআইভুক্ত ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা বাড়ানোরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈঠকে অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যমগুলোকে আইনি কাঠামোয় আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।
বৈঠকে সারাদেশে মোটরসাইকেল আরোহীদের ওপর আরোপিত কড়াকড়ি যথাযথভাবে পালনের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠকে একজন সিনিয়র মন্ত্রী বলেন, মোটরসাইকেল আরোহীদের প্রতি কড়াকড়ি থাকলেও এটি মানা হচ্ছে না। রাস্তায় দেখা যায়, এক মোটরসাইকেলে দুই-তিনজন আরোহীও নিদ্বর্িধায় ঘুরে বেড়ান। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সাংবাদিক স্টিকার লাগানো মোটরসাইকেলে এমন ঘটনা বেশি ঘটতে দেখা যায়। এগুলো দ্রুত বন্ধ করে আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

সম্প্রতি ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সম্পর্কিত প্রতিবেদন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। এ সময় দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আরও যাচাই-বাছাই করে যাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি।
সভায় গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা কমিটিকে জানান, দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডে বিএনপি-জামায়াতের আরও কয়েক নেতার জড়িত থাকার বিষয়ে কিছু তথ্য হাতে এসেছে। এ বিষয়ে আরও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তদন্তে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা ও ছাত্রদলের সাবেক দুই নেতার নাম এসেছে। তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সভায় জানানো হয়, কূটনৈতিকপাড়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি পর্যাপ্ত রয়েছে। দেশে জঙ্গি সংগঠন আইএসের অস্তিত্ব না থাকলেও একটি মহল দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডে আইএসের জড়িত থাকার প্রমাণের চেষ্টা করছে। এ জন্য একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তদারকির জন্য কমিটির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে জোর দিয়েই বলা হয়, দেশে আইএসের অস্তিত্ব নেই। ঘুরেফিরে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে যে কুচক্রী মহল জড়িত, তারা ঘটনা ঘটিয়ে আইএসের ওপর দায় দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা করছে। এর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের মূলোৎপাটন করা হবে বলে জানানো হয়।
সভায় দেশের বিমানবন্দরগুলোয় আরও নিরাপত্তা জোরদারের সুপারিশ করা হয়েছে। স্ক্যানিং ব্যবস্থা আরও আধুনিকায়ন, তল্লাশি জোরদার ও ডগ স্কোয়াড রাখারও পরামর্শ দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, বিদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে যদি এতই শঙ্কা থাকে, তাহলে তারা বাংলাদেশে কীভাবে অবস্থান করছেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, জঙ্গি কার্যক্রমে যারা অর্থ সরবরাহ করছে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অথচ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক খবর ছাপা হচ্ছে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সেটা সফলভাবে দমন করে। একই কায়দায় সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিক্ষিপ্ত, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনাও আগের মতো আমরা দমন করতে সক্ষম হচ্ছি। কোনো সন্ত্রাসীকে ছাড় দেওয়া হবে না।
মন্ত্রী জানান, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রয়েছে। আগামী জানুয়ারি মাসে মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু হবে। অভিযানটি স্থায়ী হবে এক মাস। মাদকের কুফল সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে। এ জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। তিনি জানান, এ বছর এ পর্যন্ত ছয় হাজার ১৭৬ রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক করা হয়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ৪৮টি নিরাপত্তা চৌকি করা হয়েছে। পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে গত ১৫ মাসে প্রায় পাঁচ হাজার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে মাদক নিয়ন্ত্রণে আলোচনা হয়েছে।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম আইনি কাঠামোয় আনার নির্দেশ :বৈঠক সূত্র জানায়, আলোচনায় অনলাইন গণমাধ্যমগুলোয় প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ সঠিক ও সত্য তথ্য ছাড়া প্রকাশের কারণে তীব্র সমালোচনা করা হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে এ সময় আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, অনলাইন নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। এমনকি সংবাদ প্রকাশ ও পরিচালনার জন্য কোনো নীতিমালাও নেই। তাই অনলাইন গণমাধ্যমে কোনো ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির মধ্যে আনা সব সময় সম্ভব হচ্ছে না। বৈঠকে সভাপতি এ সময় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে কীভাবে তারা সংবাদ প্রকাশ করছে? জবাবে তথ্যমন্ত্রী সভাকে জানান, অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য একটি নীতিমালা তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *