বেসরকারি শিক্ষকদের এ বঞ্চনা, গঞ্জনার শেষ কোথায়?

Slider বাধ ভাঙ্গা মত


অধ্যাপক আসাদুজ্জামান আকাশ : শিক্ষা ধ্বংসকারী জগদ্দল পাথর পালিয়ে গেছে! ভেবেছিলাম, শৃঙ্খলমুক্ত হবে শিক্ষার মেরুদণ্ড শিক্ষক! কিন্তু কই? বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে শিক্ষক হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এখনো প্রবঞ্চনার শিকার শিক্ষক সমাজ! বিশেষ করে এমপিওভুক্ত শিক্ষকতার পেশাটাই যেনো এক অভিশপ্ত নাম! সেই ১০০ টাকা বেতন দিয়ে শুরু হওয়া বেতন নামক অনুদানটি এখনো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে বের হওয়ার কোনো পথই যেনো খুঁজে পাচ্ছে না!

দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের বিনিময়ে অনুদান নামক বেতনটি এখন শতভাগ হলেও, বৈষম্যের যেনো আদিগন্ত পথচলা অবিরত! দিগন্তের সন্ধানে হাটতে হাটতে ক্লান্ত শিক্ষক সমাজ। কিন্তু দিগন্তের আর দেখা মেলে না! প্রায় দেড় যুগ আগে শুরু হওয়া ঈদ বোনাসের নামে দেয়া বৈষম্যমূলক সিকি বোনাসের দেখা মেলে না কোনো ঈদের আগেই! গত সরকার অন্যান্য সেক্টরে উন্নয়নের বুলি আওড়ালেও, সিকি বোনাসের ১% ও বাড়ানোর সক্ষমতা দেখাতে পারেনি! বরং শিক্ষকদের শেষ ভরসার অবসর ও কল্যাণ ফান্ডের টাকার এমন লুটপাট হয়েছে যে, অবসর জীবনে এই টাকার আশায় অপেক্ষা করতে করতে টাকার অভাবে চিকিৎসাহীন অবস্থায় পরপারে পাড়ি জমিয়েছে অনেক শিক্ষক! সেবকের নামে কল্যাণ ট্রাষ্টে বসে থাকা লুটেরাদের জিঘাংসার কারণে ভোগ করতে পারেনি সারা জীবনের কাজের জমানো ফসল! সামান্য একটু সুবিধা পাওয়ার আশায় আন্দোলন করতে এসে পুলিশ নামক দানবদের হাতে নির্যাতিত হয়ে জেল জুলুমসহ অনেকে প্রাণও হারিয়েছেন! বনের হিংস্র জানোয়ার মারার জন্য ব্যবহৃত পিপার স্প্রে প্রয়োগ করেও শিক্ষকদের আন্দোলন দমন করেছিলো গত ফ্যাসিস্ট সরকার! যারা এই জঘন্য কাজটি করেছিলো তারাও কিন্তু কোনো না কোনো শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করেছে! যে আমলাদের অসহযোগিতা ও জিঘাংসায় বৈষম্যের শিকার শিক্ষক জাতি, তারাও কোনো না কোনো শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করেই যে বড়কর্তা হয়েছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, তাও বেমালুম ভুলে গেছে! মন্ত্রী যায়, মন্ত্রী আসে, আমলা যায়, আমলা আসে; কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারিদের ভাগ্যের দোয়ার খোলার মতো সুযোগ কারো হয় না! শুধুই আশ্বাস শুনে শুনেই কাটছে শিক্ষকের জীবন!

সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক সংখ্যা, ছাত্র সংখ্যা, ছাত্রবেতনের পরিমাণ ও সরকারি কোষাগার থেকে প্রদেয় টাকার হিসাব করলে দেখা যায়, বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারিদের চাকুরী জাতীয়করণ করতে সরকারের কোনো ভর্তুকি লাগবে না, বরং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রতি মাসে উদ্বৃত্ত টাকা জমা হবে। বৈষম্যহীন হবে শিক্ষক সমাজ, কম বেতনে পড়াতে পারবে অভিভাবকগণ! এই হিসাবটি অনুধাবন করেই বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একাধিকবার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন! ক্ষমতায় গেলে জাতীয়করণ করবেন! প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষক, আইন উপদেষ্টা শিক্ষক, শিক্ষা উপদেষ্টাও শিক্ষক! তারপরও কী শিক্ষকদের এ দূর্দশা দূর হবে না? অপেক্ষায় থাকতে হবে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার জন্য? আশা করি শিক্ষা উপদেষ্টা বিষয়টি অনুধাবন করে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে ইতিহাস হয়ে থাকবেন!কর্মদিবস বাকী একদিন। ১৮ বছর যাবৎ অপরিবর্তনীয় সিকি বোনাস কোনো ঈদেই আগে পাওয়া যায় না! মাস শেষে ঈদ, কিন্তু বেতনের খবর নাই! ইএফটি নামক যন্ত্রণায় গত ডিসেম্বর থেকে বেতন পায় না লক্ষ লক্ষ শিক্ষক! শুধু বঞ্চনা আর বঞ্চনা! এর শেষ কোথায়? এভাবে আর কতোদিন?

লেখক- আহ্বায়ক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম( কেন্দ্রীয় কমিটি)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *