জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমে, বাংলাদেশে হয় না সমন্বয়

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করছে সরকার। নতুন এ পলিসির আওতায় এখন পর্যন্ত চার দফায় জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ৩০ মে পেট্রোল ও অকটেনের দাম আড়াই টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৭৫ পয়সা বাড়ানো হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের কমোডিটি প্রাইস সংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও সেই প্রভাব দেশের বাজারে পড়েনি। মে মাসের শুরুতে ক্রুড বা অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ছয় ডলার কমলেও দেশের বাজারে সেই চিত্রটা উল্টো।

ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্ববাজারে গড়ে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ছিল ৮০ ডলার। সেই ফর্মুলা অনুসারে প্রথমবার দেশে ডিজেলের দাম ১০৯ টাকা থেকে কমিয়ে ১০৮ টাকা, পেট্রোলের দাম ১২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১২২ টাকা ও অকটেনের দাম ১৩০ টাকা থেকে কমিয়ে ১২৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এরপর মার্চ মাসে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের গড় মূল্য ছিল ৮৩.৫ ডলার, সে অনুসারে এপ্রিল মাসে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বিগত মাসের তুলনায় ডিজেলে ২ টাকা কমানো হয়। পেট্রোল (১২২ টাকা) ও অকটেনের (১২৬ টাকা) দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়।

সম্প্রতি ডলারের মূল্যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। দেখা গেল যে দামে এলসি খোলা হলো, তার চাইতে বেশি দামে মূল্য পরিশোধ করতে হলো। কারণ এ সময়ের মধ্যেই ডলারের দাম বেড়ে গেছে।

এপ্রিল মাসে বিশ্ববাজারের তেলের দাম কিছুটা বেড়ে পৌঁছায় ৮৮ ডলারে। সে অনুসারে মে মাসে ডিজেলের দাম ১ টাকা, পেট্রোলের দাম ২ টাকা ৫০ পয়সা ও অকটেনের দাম ২ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি করা হয়।

বিশ্ববাজারের তেলের দামে দরপতন হয় মে মাসে। তখন ৬ ডলার কমে জ্বালানি তেলের গড়মূল্য দাঁড়ায় ৮১.৪ ডলারে। কিন্তু দাম কমলেও দেশের বাজারে জুন মাসে ডিজেলের দাম ৭৫ পয়সা, পেট্রোলের দাম ২ টাকা ৫০ পয়সা ও অকটেনের দাম ২ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি করা হয়।

জ্বালানি তেলে ভর্তুকি প্রথা থেকে বেরিয়ে আসতেই বিশ্ববাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। যদিও বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে ২০২২ সালে জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়। এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি প্রভাব ফেলে মূল্যস্ফীতিতে, বেড়ে যায় জীবনযাত্রার খরচ। যদিও সে সময় বলা হয়েছিল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জ্বালানি তেলের মূল্য পুনর্বিবেচনা করা হবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি।

জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি বাস্তবায়ন নিয়ে বেশ আগ থেকে আলোচনা হলেও চলতি বছরেই তা কার্যকর করা হয়। অটোমেটেড প্রাইসিং ফর্মুলা অনুসারে আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্য অনুযায়ী তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। দেশে এ পর্যন্ত চার দফায় মূল্য নির্ধারণ করা হলেও দাম হ্রাস বৃদ্ধির সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের সাদৃশ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

মূল্যে অসামঞ্জস্য কেন?

দেশে জ্বালানি তেলের আমদানি ও বাজারজাতকরণ করে থাকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমা সত্ত্বেও দেশের বাজারে কেন কমেনি, এর কারণ হিসেবে ওঠে এসেছে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণ।
ডলারের বাজারে যে অস্থিরতা চলছে, এটা ঠিক। সরকার চেষ্টা করছে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে মূল্য নির্ধারণের। যদিও সে বাজারে তেলের দামের খুব বেশি ওঠানামা হচ্ছে না। আমি মনে করি যে ইনিশিয়ালি প্রাইসিং ফর্মুলাটা করা হয়েছে, এটা আরও কম দামে নির্ধারণ করা যেত। ফলে গ্রাহকরা আরও স্বস্তিদায়ক মূল্যে জ্বালানি তেল ক্রয় করতে পারতেন।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ আহমেদ

বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বলেন, সম্প্রতি ডলারের মূল্যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। দেখা গেল যে দামে এলসি খোলা হলো, তার চাইতে বেশি দামে মূল্য পরিশোধ করতে হলো। কারণ এ সময়ের মধ্যেই ডলারের দাম বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, এখন তেলের দাম যদি কমাতে হয়, তাহলে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। কিন্তু আইএমএফের শর্তের কারণে ভর্তুকি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত আছে। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে তেলের দাম যদি কমের দিকে থাকে, তাহলে মূল্য সমন্বয়ের ক্ষেত্রে দাম কিছুটা কমতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলারের দামে অস্থিরতা থাকা সত্বেও বিপিসির আরও স্বস্তিদায়ক মূল্য ফর্মুলাটা নির্ধারণের সুযোগ ছিল। সে ক্ষেত্রে গ্রাহকরা আরও কম দামে জ্বালানি তেল ক্রয়ের সুযোগ পেতেন।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ আহমেদ বলেন, ডলারের বাজারে যে অস্থিরতা চলছে, এটা ঠিক। সরকার চেষ্টা করছে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে মূল্য নির্ধারণের। যদিও সে বাজারে তেলের দামের খুব বেশি ওঠানামা হচ্ছে না। আমি মনে করি যে ইনিশিয়ালি প্রাইসিং ফর্মুলাটা করা হয়েছে, এটা আরও কম দামে নির্ধারণ করা যেত। ফলে গ্রাহকরা আরও স্বস্তিদায়ক মূল্যে জ্বালানি তেল ক্রয় করতে পারতেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *