বিশ্বকাপ ট্রফির ইতিহাস

Slider খেলা টপ নিউজ সারাবিশ্ব

32176_s13
গ্রাম বাংলা ডেস্ক: বিশ্বকাপ ফুটবলের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৩০ সালে। আসরের চ্যাম্পিয়ন দলকে পুরস্কৃত করার জন্য প্রচলন করা হয়েছিল ‘ভিক্টর’ নামের একটি ট্রফির। পরবর্তীতে ফিফার সাবেক সভাপতি জুলে রিমের সম্মানে ট্রফির নামকরণ করা হয় জুলে রিমে ট্রফি। তো এই ভিক্টর বা জুলে রিমে ট্রফি ছিল স্টার্লিং সিলভার (রৌপ্য) এবং নীলকান্ত মণির  তৈরি। এতে অঙ্কিত ছিল বিজয়ের প্রতীক গ্রিক দেবী ‘নাইকি’র ছবি। ১৯৭০ সালে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ব্রাজিলকে জুলে রিমে ট্রফি চিরদিনের জন্য দিয়ে দেয়া হয়। যদিও ১৯৮৪ সালে ট্রফিটি চুরি হয়ে যায় এবং তা এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বিশ্বকাপের বর্তমান ট্রফির প্রবর্তন ১৯৭৪ সালে। এটি একটি স্বর্ণ নির্মিত ট্রফি, যেখানে ১৮ ক্যারেট (৭৫ ভাগ) স্বর্ণ রয়েছে। এর ভিত্তি তৈরি করা হয়েছে ম্যালাইকাইট নামক ধাতু দ্বারা। ট্রফির উচ্চতা ৩৬.৫  সেন্টিমিটার বা ১৪.৪ ইঞ্চি। ওজন ৬.১ কিলোগ্রাম। ট্রফিটির ভিত্তির ব্যাস ১৩ সেন্টিমিটার। গ্রিক  দেবী নাইকির পরিবর্তে বর্তমান ট্রফিতে অঙ্কিত রয়েছে দুটি মানব দেহ এবং তাদের হাতে উচ্চে তুলে ধরা পৃথিবী। ট্রফির সামনের অংশের নিচের দিকে ‘ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ’ কথাটি লেখা থাকে। ভেতরের দিকে রয়েছে ১৯৭৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন দেশের নাম ও শিরোপা  জেতার সাল (যেমন :  স্পেন, ২০১০)। রোববার রাতে আর্জেন্টিনা কিংবা জার্মানির মধ্যে যে দল চ্যাম্পিয়ন হবে তাদের নামও অঙ্কিত হয়ে যাবে এখানে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রোববার রাতের চ্যাম্পিয়ন দলের নাম লেখা হওয়ার পর ট্রফিতে আর মাত্র ৪টি আসরের চ্যাম্পিয়ন দলের নাম লেখার জায়গা রয়েছে।  সেই হিসেবে ২০৩০ সালে বিশ্বকাপের ১০০ বছর পূর্তির আসরে চ্যাম্পিয়ন দলের নামটিই হবে বর্তমান ট্রফিতে  লেখা শেষ নাম। এরপর কী হবে সে ব্যাপারে অবশ্য ফিফা কোন আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়নি। বিশ্বকাপের বর্তমান ট্রফির নকশাকারী ইতালিয়ান সিলভিও গাজ্জানিজা। ট্রফিটি প্রচলনের আগে এর নকশা গ্রহণ করা হয়েছিল ৭টি দেশের ভাস্কর্যশিল্পীদের কাছ থেকে। মোট ৫৩টি নকশা জমা পড়েছিল। এর মধ্যে গাজ্জানিজার নকশাটিই চূড়ান্ত করা হয়। এরপর ১৯৭১ সালে ইতালিরই ট্রফি ও মেডেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বার্তোনি, মিলানো (বর্তমানে জিডিই বার্তোনি নামে পরিচিত) থেকে এটি প্রস্তুত করা হয়। প্রচলিত মতানুসারে, বিশ্বকাপের ট্রফিটি স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত একটি সলিড ট্রফি। তবে ব্রিটিশ রসায়নবিদ মার্টিন পলিয়াকফের মতে, বিশ্বকাপের ট্রফিটি আসলে ফাঁপা একটি শিরোপা। কেননা, যদি এটি সলিড হতো তাহলে ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের কারণে এর ওজন হতো ৭০  থেকে ৮০ কিলোগ্রাম, যা হাতে নেয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার হতো। বিশ্বকাপের ফাইনালের দিনে ট্রফিটি একটি নির্দিষ্ট  কেস বা বাক্সে করে মাঠে আনা হয়। এই কেসটিও বানানো হয় বিশ্বের বিভিন্ন খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান থেকে। গত আসরের মতো এবারও ট্রফির চামড়া নির্মিত সুদর্শন কেস বানিয়েছে ফরাসি প্রতিষ্ঠান লুই ভুইতো।  রোববার রাতে আর্জেন্টিনা-জার্মানি ফাইনাল ম্যাচ শুরুর আগ মুহূর্তে এই বাক্স থেকেই ট্রফি অবমুক্ত করার কথা ব্রাজিলিয়ান মডেল জিসেলে বানদচেন এবং স্প্যানিশ ফুটবলার কার্লোস পুয়েলের। ফিফার গঠনতন্ত্র অনুসারে, তিনবার  কোন দেশ চ্যাম্পিয়ন হলে (নতুন ট্রফি প্রবর্তনের পর) বিশ্বকাপের ট্রফি একেবারে তাদের দিয়ে দেয়ার কথা।  সেই হিসেবে আজ চ্যাম্পিয়ন হলে আর্জেন্টিনা ও জার্মানি দুই দলই আসল ট্রফিটি বাড়ি নিয়ে যাওয়ার দাবি করতে পারে। তবে ফিফা জানিয়েছে, কোন দলকেই ট্রফি একেবারে দিয়ে দেয়া হবে না। বরাবরের মতো এবারও আসল ট্রফির পরিবর্তে স্বর্ণের প্রলেপ  দেয়া রিপ্লিকা দেয়া হবে চ্যাম্পিয়ন দলকে। সঙ্গে দেয়া হবে ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ প্রাইজ মানি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *