আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে প্রকম্পিত টঙ্গী তুরাগ তীর

Slider জাতীয়

টঙ্গী: আজ শুক্রবার টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ^ তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি পাকিস্তানের মাওলানা আহম্মদ বাটলা’র আ’মবয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্ব। গতকাল দুই দফায় বৃষ্টিতে ইজতেমায় মুসল্লীদের ভোগান্তী হলেও আল্লাহর দিদার লাভের আশায় তারা ইজতেমা ময়দানে অবস্থান করছেন। ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে প্রথমপর্ব শেষ হবে।

বিশ^ ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা যায়, ইজতেমাকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে ময়দানের সকল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল এখন টঙ্গী মুখী। পুরো টঙ্গী নগরী এখন টুপি-পাঞ্জাবী পড়া মানুষের নগরে পরিণত হয়েছে।
ইবাদত-বন্দেগীর মোক্ষম সময় হৃদয়ে ধারণ করে মুসল্লিদের ¯্রােত টঙ্গী অভিমুখে বেড়েই চলছে। এ ¯্রােত থাকবে আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত। তবে ঘোমট আবহাওয়া, কনকনে শীতল বাতাস, হালকা বৃষ্টি সমবেত মুসল্লিদের খানিকটা ভাবিয়ে তুলছে। বুধবার রাতে ও বৃহসপতিবার সন্ধ্যায় দুই দফা বৃষ্টিতে ভিজে যায় ময়দান। আজ ইজতেমা ময়দানে দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জুমার জামাতের ইমামতি করবেন কাকরাইল জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতীব হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের আহমেদ।
বিশ্ব ইজতেমা আজ শুরু হলেও গত বুধবার দুপুর থেকেই জামাতবদ্ধ মুসল্লি¬রা ইজতেমা ময়দানে এসে জমায়েত হয়েছেন। দেশের ৬৪টি জেলাসহ বিদেশি মুসল্লিরা তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে বয়ান, কারগুজারি, তাশকিল, তালিম, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আসকার ও ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল রয়েছেন। কোন কোন জেলার মুসল্লি¬ কোন খিত্তায় অংশ নেবেন সে দিক নির্দেশনাও ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। ময়দানে মুসল্লিদের অবস্থানও জেলাওয়ারি নির্দিষ্ট খিত্তায় (ভাগে) বিভক্ত করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ময়দানের প্রতিটি খিত্তায় আগত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে তালিম শুরু হয়েছে।
সকালে সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে উদ্বোধনী ও তালিমী বয়ান করেন, ভারতের মাওলানা আহমদ লাট। তাঁর বয়ান বঙ্গানুবাদ করেন স্বাগতিক বাংলাদেশের মাওলানা ওমর ফারুক।
এবারের ইজতেমায় বিশ্বের ৮৫টি দেশের প্রায় ৪-৫ হাজার বিদেশি মেহমান আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবেন বলে ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বিদের ধারণা।
দেশি-বিদেশি ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামায়ে কেরামগণ ছয় উসুল যথা-ঈমান, নামাজ, এলেম ও জিকির, ইকরামুল মুসলিমীন, তাসহীহে নিয়ত, দাওয়াত ও তাবলীগ সম্পর্কে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনামূলক মূল্যবান বয়ান রাখছেন। মূল বয়ান সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লিদের মাঝে স্বস্ব ভাষায় ভাষান্তর করা হচ্ছে।
যেসব শূরা সদস্য ময়দানে উপস্থিত রয়েছেন : ইজতেমা ময়দানে ভারত ও পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন শূরা সদস্য উপস্থিত রয়েছেন। তারা হলেন- ভারতের মাওলানা আহমদ লাট, মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা, মাওলানা ফারুক ওরফে ভাই ফারুক, মাওলানা জোহায়েরুল হাসান, মাওলানা ইসমাঈল গোদরা ও পাকিস্তানের মাওলানা আহম্মদ বাটলা, মাওলানা জিয়াউল হক। এছাড়াও হাফেজ মাওলানা জোবায়ের আহমেদ, মাওলানা আব্দুর রহমান, মাওলানা ওমর খতিব (জর্ডান) ময়দানে উপস্থিত রয়েছেন।
ময়দানে যারা তালিমী বয়ান করলেন: আজ শুক্রবার বাদ ফজর থেকে ইজতেমার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তালিমী বয়ান শুরু হয়েছে। সকালে তালিমী বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আহমদ লাট। বাদ যোহর বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা রবিউল হক, বাদ আছর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ফারুক ওরফে ভাই ফারুক, বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা।
ময়দানে বিদেশি মুসল্লি : গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ভারত, সিরিয়া, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চাঁদ, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, সুদান, আফগানিস্তানসহ ৫০টি দেশের প্রায় ১ হাজার ২শ’ বিদেশি মেহমান ময়দানে তাদের জন্য নির্ধারিত নিবাসে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারি মুফতি জহির ইবনে মুসলিম। তবে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক মুসল্লি ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
এক পশলা বৃষ্টিতে মুসল্লিদের ভোগান্তি : ইজতেমাকে কেন্দ্র করে লাখো মুসল্লির ¯্রােত এখন টঙ্গী অভিমুখে। মুসল্লিরা তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আসকার ও বিভিন্ন নফল ইবাদতে মশগুল রয়েছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে এক পশলা বৃষ্টি আবার মুসলধারেও রুপ নেয়ায় মুসল্লীদের ভোগান্তিতে ফেলে। অনেকের খিত্তায় শামিয়ানা না থাকায় দীর্ঘ ৪০ মিনিটের বৃষ্টিতে তাদের ইস্তেমায়ী সব সামানা ভিজে গেছে। কনকনে বাতাস, ঠান্ডা আবহাওয়া এবং বৃষ্টিতে সাথীদের পরিহিত কাপড় চোপর ভিজে যাওয়ায় রাতভর তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
নেত্রকোনা সদর থেকে তাবলীগ জামাতের আঞ্চলিক আমির রোকন মিয়ার নেতৃত্বে আবুল বাশার, মো. মানিক মিয়া, আব্দুল মতিন, খোকন মিয়াসহ ১৮সদস্যের একটি জামাত তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় (নং-৫৭) রাত ৯টায় অবস্থান নেন। কিন্তু তারা সাথে কোনো শামিয়ানা নিয়ে আসেননি। একপর্যায়ে তারা ঘুমিয়ে পরলে রাত ২টার দিকে হঠাৎ বৃষ্টি নামে। এতে তাদের সাথে আনা সব সামানা এবং পরিহিত কাপড় চোপড় ভিজে গিয়ে রাতভর ভোগান্তিতে পরেন।
এদিকে ঢাকার মিরপুর থেকে এসেছেন শাহিন আলম, মোহাম্মদ মাহফুজ, মোহাম্মদ হারুন, মোহাম্মদ ফোরকান, মাওলানা মোহাম্মদ নাঈমসহ একটি জামাত ময়দানের ৬নং খিত্তা অবস্থান নিয়েছেন। তারা জানালেন, গভীর রাতে হঠাৎ করে বৃষ্টি আসায় উপরে শামিয়ানা থাকা সত্ত্বেও তাদের বিছানাপাতিসহ সব কিছু ভিজে গেছে।
আইনশৃংখলা জোরদার : বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীতে আইনশৃংখলা জোরদার করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৃহস্পতিবার থেকে প্রায় ৬ হাজার পুলিশসহ র‌্যাব, সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় ১৫ হাজার সদস্যদের ময়দানের আশেপাশে মোতায়েন করা হয়েছে।
নিরাপত্তা জোরদার করতে র‌্যাবের কমিউনিকেশন উইং, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষক্ষ থেকে ১৮টি প্রবেশপথসহ চারপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এছাড়াও থাকছে মেটাল ডিটেক্টর, নাইটভিশন গগল্স, বাইনোকুলার, বোম্ব ডিসপোজাল টিম, এন্টিটেরোরিজম ইউনিট, হেলিকপ্টার-নৌ টহল, কুইক রেসপন্স টিম-কিউআরটি, ফরেনসিক টিম, সাইবার পেট্রোলিং, ডুবুরি দল, স্টাইকিং ফোর্স, এলআইসি, পিএইচকিউ, এপিসি, জলকামান। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্সের সদস্যরা পুরো ময়দান জুড়ে কড়া নজরদারি রাখছেন। প্রতিটি খিত্তায় বিশেষ টুপি পরিহিত ও সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা সদস্য অবস্থান করছেন। এছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে প্রতিটি খিত্তায় দুইজনকে ফায়ার ফাইটার নিয়োজিত রয়েছেন।
ইজতেমা ময়দান পরিদর্শণ ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন ঃ গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এমপি টঙ্গী ইজতেমা ময়দান পরিদর্শণ করেন। পরে তিনি ময়দানের উত্তর-পশ্চিম কোণে অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলস উচ্চবিদ্যালয় মাঠে স্থাপিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিনামূল্যে চিকিৎসা কেন্দ্র ও হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াকফ) লি. উদ্বোধন করেন। এসময় গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম, হামদর্দ বাংলাদেশের চিফ মোতাওয়াল্লী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. হাকীম মোহাম্মদ ইউছুফ হারুন, তথ্য ও গণসংযোগ কর্মকর্তা আমিরুল মোমেনীন মানিক, আবু সালেহ মহিউদ্দিন খাঁ, লে, কর্ণেল (অব) মাহবুবুল আলম চৌধুরী, মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনকালে ধর্মমন্ত্রী বলেন, ইজতেমা আয়োজক কমিটির দুই পক্ষের মধ্যে আর কোনো সমস্যা আছে বলে আমরা মনে করি না। বিশেষ করে আইনশৃংখলা বাহিনী বিভিন্নস্তরে বিভক্ত হয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন যাতে ময়দানে আগত দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের যাতে কোন প্রকার সমস্যা না হয়। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন বাংলাদেশ তথা বিশ্বের যে প্রান্ত থেকেই মুসল্লিরা আসুক না কেন ইজতেমা মযদানে এসে তাদের কারো যেন তিল পরিমাণ সমস্যা না হয়।
ইজতেমায় আরও এক মুসল্লির মৃত্যু : ইজতেমা ময়দানে বৃহস্পতিবার দুপুরে আব্দুস সাত্তার (৭০) নামে এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তিনি শেরপুর জেলার কেন্দুয়া থানার আবুল হোসেনের ছেলে। জানাযা শেষে নিহতের লাশ দুপুরে তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগেও ইজতেমায় আসার পথে এবং ময়দানে দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়। এনিয়ে বুধ ও বৃহস্পতিবার তিন মুসল্লির মৃত্যু হলো।
যেসব প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ বিতরণ করছে : ইজতেমা মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলস উচ্চবিদ্যালয় মাঠে স্থাপিত ইসলামী ফাউন্ডেশনের ইসলামিক মিশন, হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াকফ) বাংলাদেশ, ইবনে সিনা, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, গাজীপুর সিভিল সার্জন, র‌্যাবসহ প্রায় ২০টা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান তাদের তৈরিকৃত স্টলে বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ করছেন।
ময়দানে পকেটমারের দৌরাত্ব : ইজতেমা ময়দানে পকেটমারের দৌরাত্ব বেড়ে গেছে বলে একাধিক মুসল্লি মন্তব্য করেছেন। ময়দানে ১৬নং টয়লেটের সামনে থেকে বেশ কয়েকজন মুসল্লির টাকা, আই ফোন ও বেডিংপত্র খোয়া গেছে। ঢাকার তেজগাঁও নাখাল পাড়ার বাসিন্দা ইব্রাহিম খলিল জানালেন, ১৬নং টয়লেটের পাশে ওজুখানায় অজু করার সময় সাইড ব্যাগ থেকে আই ফোনটি পকেটমারেরা নিয়ে গেছে। এছাড়াও ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুল হাফিজ ইজতেমার আখেরি মোনাজাত শেষে চট্টগ্রাম চলে যাবেন বলে লাগেজে করে বেডিং ও সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ইজতেমা ময়দানে এসেছেন। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি তার লাগেজটি খুঁজে পান নি। এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক মুসল্লি জানালেন সকালে ময়দানে বাথরুমে যাওয়ার পথে তার পকেটে থাকা ১২টাকা কে বা কারা নিয়ে গেছে।

মোবাইল নেটওয়ার্কে সমস্যা : প্রতিবছরের ন্যায় এবার ময়দানে চারপাশে অস্থায়ী মোবাইল টাওয়ার না বসানোয় মোবাইল নেটওয়ার্কে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ময়দানে লাখ লাখ মুসল্লি মোবাইল নেটওয়ার্কের ভূগান্তিতে পড়েছেন।
ময়দানে আসা নাইমুল হাসান, লিটন মিয়া, আল-আমিন বলেন, ময়দানে মোবাইল নেটওয়ার্কের অনেক সমস্যা। মোবাইলে কারো সাথে কথা বলতে গেলে দু-চার কথা বলার পর আর কিছু বুঝা যায় না। ময়দানে মোবাইলের টাওয়ার না থাকায় এসমস্যা হয়েছে বলে তারা জানান।
বৃষ্টি নিয়ে চিন্তিত ও পলিথিন কেনার হিড়িক : বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঘোমট আবহাওয়া ও কনকনে শীতে জিকির-আসকারের মধ্যদিয়ে দিন পারছেন মুসল্লিরা। তবে বৃষ্টি হলে ভোগান্তিতে পড়বেন বলে জানালেন শেরপুর থেকে আসা মুসল্লি শাহজাহান মিয়া, সিরাজ উদ্দিন ও ইসমাইলসহ একাধিক মুসল্লি। ময়দানের অনেকাংশে পর্যাপ্ত শামিয়ানা না থাকায় অনেকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এদিকে বৃষ্টির আশংকায় মুসল্লিরা পলিথিন কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। প্রতি পিস বড় পলিথিন ২০টাকা এবং ছোট পলিথিন ১০টাকা করে কিনতে দেখা গেছে।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি: ইজতেমাকে পুঁজি করে টঙ্গীর বেশির ভাগ দোকানি ও ব্যবসায়ীরা খাদ্যদ্রব্য ও কাঁচা তরকারির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে এলাকাবাসী ও ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
অবৈধ দোকান-পাটের ছড়াছড়ি : ইজতেমা মাঠের আশপাশে গজিয়ে উঠেছে হাজার-হাজার দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় ভিট ভাড়ার নামে টঙ্গী বাজার, হোন্ডারোড, কামার পাড়া, ষ্টেশন রোড, আব্দুল্লাহপুর, সুইচ গেইট এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো এ সকল অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব দোকান প্রতিটি ৫-২০ হাজার টাকা, প্রতিদিন বিদ্যুৎ বিল বাল্ব প্রতি ২-৪ শত টাকা ও পানির বিল প্রতিদিন ১৫০-২৫০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে বলে দোকান মালিকরা জানান। এসব দোকানপাটের কারণে মুসল্লিদের চলাচলে খুবই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
নকল পণ্যের পসরা : বিভিন্ন কোম্পানীর নকল ঔষধ ও পণ্য বিক্রেতারা চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে ইজতেমায় আগত মুসুল্লিদের সরলতার সুযোগে প্রতারণা করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব অবৈধ দোকানিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন মুসল্লিরা।
হকার ও ভিক্ষুকের উপদ্রব: বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলা ও থানা থেকে টাকা রোজগারের উদ্দেশ্যে কতিপয় হকার ও ভিক্ষুক ইজতেমা ময়দানের আশপাশের এলাকায় ভীড় জমিয়েছে।
যানবাহনে ভীড় ও যানজট : গতকাল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-আশুলিয়া সড়ক ও টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কসহ বিভিন্ন সড়কগুলো দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীবাহী সকল যানবাহনে প্রচন্ত ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। এ সুযোগে রিকশাসহ কিছু কিছু যানবাহন যাত্রীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও সড়ক মহাসড়কের দু-পাশে যানবাহন পার্কিংসহ ফুটপাত দোকানিদের দখলে থাকায় টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটেরও সৃষ্টি হতে দেখা গেছে।
ইজতেমা কমিটির বক্তব্য : বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বি প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নান জানান, ইতিমধ্যে ইজতেমা ময়দানের সকল প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি বিশ্ব ইজতেমায় ময়দানে এসে অবস্থান নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, টঙ্গীর তুরাগ তীরে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্ব। তা শেষ হবে ৪ ফেব্রুয়ারি। পরে চার দিন বিরতি দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এবারের ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *