গাজীপুর-২ আসনে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ৫ম বার বিজয়ী হলেন রাসেল

Slider গ্রাম বাংলা


টঙ্গী( গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুর-২ ( সদর টঙ্গী) আসনে ২০ হাজার ৩৮৪ ভোট বেশী পেয়ে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। এবার বিজয়ী হওয়ায় টানা ৫ম বার এমপি হলেন তিনি। তবে এই নির্বাচনে নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীকে পরাজিত করতে তাকে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে।

গাজীপুর জেলা রিটার্নিং অফিসার সুত্রে জানা যায়,গাজীপুর-২ আসনের বিজয়ী প্রার্থী আওয়ামী লীগের মো: জাহিদ আহসান রাসেল নৌকা প্রতীক নিয়ে মোট ২৭২টি কেন্দ্রের ফলাফল অনুযায়ী ভোট পেয়েরেছন ১ লাখ ৪ হাজার ৪৭৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী স্বতন্ত্র প্রার্থী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ৮৪ হাজার ১২৯ ভোট। প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী মো: জাহিদ আহসান রাসেল ২০ হাজার ৩৮৪ ভোট বেশী পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এ আসনে ভোট পড়েছে ২৫ দশমিক ৩৭ ভাগ।

জাহিদ আহসান রাসলে ২০০৪ সাল থেকে এই আসনের এমপি। এবার তিনি টানা পঞ্চম বারের মত এমপি হলেন। বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ প্রায় সরকারের তিনি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। চলতি জানুয়ারী মাসের ২৯ তারিখ এই সরকারের মেয়াদ শেষ হবে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাসেলের প্রতিদ্বন্দ্বী গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন ট্টাক প্রতীক নিয়ে লড়াই করেছেন রাসলের নৌকার সাথে। ট্রাকের সাথে ছিলেন গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। গত বছর জাহাঙ্গীর আলম তার মাকে নৌকার সাথে চ্যালেঞ্জ করে মেয়র বানিয়েছেন। এই জন্য বুদ্দিনের সাথে জাহাঙ্গীরের অবস্থান রাসেলকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফলে দেয়।

রাজনীতি সচেতন মানুষের মতে, জাহাঙ্গীর আলমের মায়ের নির্বাচনের সময় একটি আবেগ কাজ করেছে। জাহাঙ্গীর আলমকে সকল পদ থেকে বাদ দেয়া ও নির্বাচনে বাঁধা তৈরী হওয়ার পর ওই আবেগ সৃষ্টি হয়। ফলে মানুষ আবেগী হয়ে জাহাঙ্গীর আলমের মাকে নৌকার সাথে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বিজয়ী করেন। গতকালের নির্বাচনে বুদ্দিনের সাথে জাহাঙ্গীর আলম থাকলেও ওই আবেগ কাজ করেনি তেমনভাবে। এছাড়া সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাধারণ কর্মীরা ওই আবেগে একাকার হয়ে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে জাহাঙ্গীর আলমের মাকে ভোট দিতে কেন্দ্রে গিয়েছিল কিন্তু গতকাল তারা আর যায়নি। তাছাড়া যে সকল বিরোধী নেতারা জাহাঙ্গীর আলমের সাথে পলাতক অবস্থায় কথা দিয়েছিলেন তাদের কর্মীদের ভোট দিতে পাঠাবেন তারাও কথা রাখতে পারেননি। কারণ পলাতক নেতারা পুলিশের ভয়ে মোবাইলের সিম পরিবর্তন করে বিদেশী সিমে কথা বলেন। নতন সিমে কর্মীূদের মোবাইল নম্বর না থাকায় পলাতক নেতারা কর্মীদের ভোটে যাওয়ার নির্দেশনা দিতে পারেননি। ফলে বিরোধী জোটের কর্মীরা গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত তাদের দলীয় নির্দেশনা মেনে ভোট বর্জন করেন। এতে বিরোধী জোটের কর্মীরা জাহাঙ্গীর আলমের মায়ের নির্বাচনের মত গতকাল অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ট্রাকে ভোট দিতে যাননি।

টঙ্গীর স্থানীয় সূত্র বলছে, দীর্ঘ ১৮ বছর রাসেল ক্ষমতায় থাকায় বিভিন্ন কারণে যে সকল লোক অসন্তুষ্ট হয়েছেন তারা ট্রাকের সাথে চলে গেছেন। এতে টঙ্গীতে রাসেলের যতটুকু ভালো করার কথা ছিল তা হয়নি।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, , টঙ্গীর মোট ১৪১টি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহিদ আহসান রাসেল পেয়েছেন ৪৬ হাজার ৫৮৩ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ৩০ হাজার ৭৭০ ভোট।
গাজীপুর- ২ আসনের সাধারণ ভোটাররা বলছেন, রাসেল ও জাহাঙ্গীর এক দলের হলেও তারা ভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অবস্থান করেন। যতক্ষণ তারা দলীয় ভাবে নয় নীতিগতভাবে আদর্শিক জায়গায় এক সাথে হতে না পারবেন ততক্ষণ পর্যন্ত রাসেল ও জাহাঙ্গীরের পরস্পর বিরোধী চ্যালেঞ্জ অটুট থাকবে।

গাজীপুর ২ আসনে নয় জন প্রার্থীর বিপরীতে ভোটার সংখ্যা ৭ লাখ ৭৮ হাজার ৯৯০ জন ।
মোট ভোট কেন্দ্র ২৭২ টি, যার মধ্যে বুথ সংখ্যা ১ হাজার ৬৮৯ টি। গতবারের তুলনায় এবার ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৬০ জন।
যার মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ৯৪,৯৬৪ জন। নারী ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ১ হাজার ৯৯৬ জন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সদরের ২১ টি ও টঙ্গীর ১৫ টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত গাজীপুর -২ আসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *