ছেলে যখন বাবার মুখ দেখতে চায় তখন আমার বুকটা ফেটে যায়’

Slider বিচিত্র

‘আমার সন্তানের বয়স ১৩ বছর, সে বুঝ হওয়ার পর বাবাকে দেখে নাই। যখন সে বলে ‘মা আমার বাবার মুখ কি আর দেখতে পারবো না? -তখন আমার বুকটা ফেটে যায়’ কথাগুলো বলছিলেন ২০১৩ সালে গুম হওয়া বিএনপি নেতা কাউসার হোসেনের স্ত্রী মিনা আক্তার।

মঙ্গলবার সকালে গায়েবি মামলায় কারাবন্দী বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করে রাজবন্দীর স্বজনরা। মানববন্ধনে মিনা আক্তার এ কথাগুলো বলন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। সারাদেশ থেকে কয়েক শ’ স্বজন এ সমাবেশে হাজির হন।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপিসহ বিরোধীদলের নির্যাতিত, খুন, গুম ও কারাগারের থাকা নেতাদের স্বজনরা জানিয়েছেন, ‘এতো জুলুম নির্যাতন না করে আমাদের পরিবারের সবাইকে এক সাথে মেরে ফেলুন। তাহলে কেউ আর প্রতিবাদ করতে আসবে না। প্রতিবাদ হবে না।’

ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা লিয়ন হক ও রাজিব হাসান -এর বোন বলেন, ‘আমার দুই ভাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, এক ভাইকে পুলিশ ১ মাস গুম করে পরে গ্রেফতার দেখিয়েছে। আমার পরিবার সদস্যদের গ্রেফতার-গুম-খুন করে সরকার তছনছ করে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, এক বছর আগে আমার ভগ্নিপতিকে লক্ষীপুরে র‌্যাব গুলি করে মেরে ফেলেছে, তিনি বিএনপি করতেন, পরে আমরা ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিলে র‌্যাব আমাদের লাশটা দেয়। তারা প্রথমে লাশ পর্যন্ত দিতে চায়নি।

ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা মুক্তিযোদ্ধা শেখ মনিরুজ্জামানের স্ত্রী বলেন, ‘রাত ২টা বাজে দরজা ভেঙ্গে আমার স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় পুলিশকে কত আকুতি-মিনতি করলাম যে- বয়স্ক-অসুস্থ-নির্দোষ লোকটাকে না নিয়ে যেতে- কিন্তু পুলিশ বাসায় ভাংচুর করে নির্দয়ভাবে তাকে তুলে নিয়ে যায়।’

ছাত্রদলের নেতা আমান উল্লাহ আমান -এর বড় ভাইয়ের মেয়ে বলেন, আমার চাচাকে না পেয়ে পুলিশ আমার বাবাকে নিয়ে নির্যাতন করেছে। রিমান্ডে নিয়েছে। তারপর আমার চাচাকে গ্রেফতার করে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে অনেকদিন রিমান্ডে নিয়ে। তাদের কী অপরাধ। তাদের অপরাধ তারা তাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে চেয়েছিল। এটাই তাদের অপরাধ।

জেলেখানায় নিহত বিএনপি নেতা আবুল বাসার -এর স্ত্রী বলেন, আমি আমার স্বামী হারানোর বিচার চাই, তারা আমার সন্তানকে এতিম করেছে, পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে অমানবিক-নিষ্ঠুর নির্যাতন করেছে- যার ফলে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।’

যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন -এর স্ত্রী বলেন, ‘আমার কোথায় যাব! আমার স্বামীর মামলার বাদী পুলিশ, মামলা করলোও পুলিশ, সাক্ষী দিলও পুলিশ- এটা কেমন বিচার। আদালতে বিচারকের সামনে এমন অবিচারের প্রতিবাদ করলে বিচারক বলে, এখানে আইনের কথা বলবেন না।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান এর স্ত্রী রহিমা শাহজাহান মায়া বলেন, ‘আমার স্বামীকে দুই বছরের জন্য জেল দিয়েছে, তার কোনো দোষ নাই, আমাদের পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুক ‘

ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা আবদুল হাই ভুঁইয়া বলেন, ‘আমার ৩ ছেলে ও এক ছেলের বউকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করে অমানুষিক নির্যাতন করছে জেলে, যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের দেখতে গেলেও আত্মীয়-স্বজনকে আটকে থানায় হয়রানি করছে পুলিশ। আমি দেশ-বিদেশের বিবেকবান মানুষকে বলতে চাই; আমরা কিভাবে দিন কাটাচ্ছি, একটু চিন্তা করুন।’

রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের মেয়ে ব্যারিস্টার তাবাসসুম বলেন, ‘আমার বাবা গুরুতর অসুস্থ, তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত! অথচ তাকে মুক্তি না দিয়ে জেলে ভরে রেখেছেন। আমার বাবার মুক্তি চাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *