গাজীপুরে ৫টি আসনে ৬ স্বতন্ত্রপ্রার্থী, শ্রীপুরে আইন শৃঙ্খলা অবনতির আশংকা!

Slider টপ নিউজ


গাজীপুর: আগামী ৭জানুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গাজীপুর জেলার শ্রীপুরে আইন শঙ্খলা অবনতির আশংকা দেখা দিয়েছে। গাজীপুর জেলার ৫টি সংসদীয় আসনে আওয়ামীলীগের ৬জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় সরকারী দলের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তবে গাজীপুর-৩ শ্রীপুরে এই উত্তেজনা বেশী। ইতোমধ্যে আইন শৃঙ্খলা অবনতির মত ঘটনা ঘটা শুরু হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের পাঁচটি আসনে পাঁচজনকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামীলীগ। মনোনয়ন দেয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই পাঁচটি আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষনা দিয়েছেন আওয়ামীলীগের ছয় জন প্রার্থী।

রবিবার আওয়ামীলীগ, গাজীপুর-১ আসনে আ ক ম মোজাম্মেল হক গাজীপুর-২ আসনে জাহিদ আহসান রাসেল গাজীপুর-৩ আসনে রুমানা আলি টুসি গাজীপুর-৪ আসনে সিমিন হোসেন রিমি ও গাজীপুর-৫ আসনে মেহের আফরোজ চুমকিকে দলীয় মনোনয়ন দেয়। আজকে তাদের মনোনয়নের চিঠি দিয়ে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এদিকে দলীয় মনোনয়ন ঘোষনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে গাজীপুরের পাঁচটি আসনে ছয়জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা হলে, গাজীপুর-১ আসনে রেজাউল করিম রাসেল ও কামরুল আহসান সরকার রাসেল গাজীপুর-২ আসনে সাইফুল ইসলাম গাজীপুর-৩ আসনে ইকবাল হোসেন সবুজ গাজীপুর-৪ আসনে আলম আহম্মেদ ও গাজীপুর-৫ আসনে সাবেক এমপি আখতার উজ্জামান।

এই অবস্থায় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের পাচঁটি আসনে ১১জন প্রার্থী হওয়ায় সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। সোমবার বিকেলে থেকে প্রতিটি আসনে নৌকার প্রার্থী ও আওয়ামীলীগ থেকে হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকেরা বিভিন্ন এলাকায় মিছিল ও সভা করা শুরু করেছেন। একই দলের দুটি করে গ্রুপ সৃষ্টি হওয়ায় নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ বিচ্ছিন্ন ভাবে শুরু হয়েছে। মাঠের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পারস্পরিক আক্রমন করে পোষ্ট লাইক ও কমেন্ট চলছে।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ, রাজাবাড়ি ও কাওরাইদ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ অফিস সহ বেশ কিছু দলীয় অফিসের নিয়ন্ত্রন নিয়েছে নৌকা প্রতীক পাওয়া রুমানা আলি টুসির নেতা-কর্মীরা। তারা দলীয় অফিস থেকে বর্তমান এমপি ইকবাল হোসেন সবুজের ছবি অপসারণ করছেন। ছবি অপসারণের একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে।

এদিকে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর ইকবাল হোসেন সবুজের নেতা-কর্মীরা একই কায়দায় ওই সময়ের এমপি এডভোকেট রহমত আলীর ছবিও অপসারণ করেন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর ইকবাল হোসেন সবুজ সকল ইউনিট কমিটি বাদ দিয়ে নিজের পছন্দমত লোকজন নিয়ে কমিটি গঠন করেন। সবুজের কমিটিতে রহমত আলীর ব্লকের নেতা-কর্মীরা স্থান পায়নি। ওই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে প্রয়াত এমপি রহমত আলীর মেয়ে দ্বাদশ সংসদের মনোনয়ন পাওয়া সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি রুমানা আলি টুসি, সবুজের লোকজন বাদ দিয়ে তার নিজের লোকজন দিয়ে পুন:রায় কমিটি গঠন করবেন বলে ধারণা বিদ্যমান। ফলে সবুজ ও টুসির সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা স্বাভাবিকভাবেই ছড়িয়ে পড়ছে। একই সাথে সবুজের সময়ে মিলকারখানা সহ বিভিন্ন লাভজনক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত লোকজনকে বাদ দিয়ে টুসিপন্থীদের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে বলেও আশংকা রয়েছে। অবশ্য সবুজ ক্ষমতায় আসার পর টুসিদের লোকজনের নিকট থেকেও ব্যবসা বানিজ্য ছিনিয়ে এনেছিলেন। তাই দুই পক্ষের মধ্যেই সুবিধাবাদী লোকজনও জড়িয়ে রয়েছেন। তাই তাদের যার যার অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারা মরিয়া হয়ে দুই নেতার পক্ষে মাঠে নেমেছেন।

আজ সোমবার বিকেলে স্বতন্ত্র পদে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর ঝিমিয়ে পড়া সবুজপন্থীদের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। তারা শ্রীপুর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও গুরুত্বপূর্ণস্থানে মিছিল ও সভা করা শুরু করেছেন। এর আগে গতকাল মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে মিছিল ও সভা করছেন টুসিপন্থীরা। সবুজ ও টুসি পন্থীদের পরস্পর বিরোধী অবস্থানের কারণে শ্রীপুরে সার্বিক আইন শঙ্খলার অবনতির আশংকা রয়েছে বলে ধারণা করছেন সাধারণ মানুষ।

এ বিষয়ে জানতে এমপি রুমানা আলি টুসি ও এমপি ইকবাল হোসেন সবুজকে ফোন দিলে কেউ ফোন রিসিভি করেননি।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) এ এফ এম নাসিম বলেছেন, আইন শঙ্খলা ঠিক আছে। অবনতির আশংকা নেই। তবে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইন শঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত আছে।

প্রসঙ্গত:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *