হামাসের ফাঁদে পা দিচ্ছে ইসরাইল!

Slider সারাবিশ্ব


ভয়াবহ বিমান হামলার ছত্রছায়ায় গাজা উপত্যকায় ইসরাইল যে স্থল হামলা চালাচ্ছে, তা এখন অবরোধ অভিযানে পরিণত হচ্ছে। ইসরাইলি সৈন্যরা গাজা সিটিকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য পরীক্ষামূলক কাজে নামার প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা এমনটা মনে করছেন।

তিন সপ্তাহ ধরে নৃশংস বোমা হামলার পর ইসরাইলি সৈন্যরা ২৭ অক্টোবর উত্তর ও পূর্ব দিক থেকে উপকূলীয় উপত্যকাটিতে প্রবেশ করে।

ইসরাইলি বাহিনী এখনো জানায়নি, তাদের কত সৈন্য এতে অংশ নিচ্ছে এবং তাদের উদ্দেশ্য কী। তবে তারা এটুকু প্রকাশ করেছে যে তাদের গোলন্দাজ বাহিনী, ট্যাংক, বুলডোজার সাথে নিয়ে পদাতিক ও বিশেষ বাহিনী ‘অপারেশন আয়রন সোর্ডস’ পরিচালনা করছে।

এখন পর্যন্ত তাদের অভিযান পরিচালিত হয়েছে কৃষি জমি এবং কম বসতিপূর্ণ শহর এলাকায়। এতে বোঝা যাচ্ছে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এই পর্যায়ে আবাসিক এলাকায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের মোকাবেলা করতে চাচ্ছে না।

কিন্তু ইসরাইলি সৈন্যরা হামাসের সশস্ত্র শাখা ইজাদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেড এবং অন্যান্য সশস্ত্র গ্রুপের সুড়ঙ্গগুলো থেকে এখনো দূরে থাকছে।

অবশ্য, তারা বোমা হামলা চালাতে বিরত থাকছে না। হাসপাতাল, উদ্বাস্তু শিবির, এমনকি অ্যাম্বুলেন্সে পর্যন্ত হামলা চালাচ্ছে। মনে হচ্ছে, যত বেশি সম্ভব ফিলিস্তিনিকে হত্যা করাই তাদের মিশন।

তবে দেশে এবং বিদেশে ইসরাইলিরা হামাসের হাতে বন্দী তাদের ২৪০ নাগরিককে মুক্ত করার জন্য প্রবল চাপের মধ্যে রয়েছে। এসব বন্দী সুড়ঙ্গের মধ্যেই আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পরিস্থিতির সাথে পরিচিত একটি ইসরাইলি সূত্র মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক একটি মিডিয়াকে জানিয়েছে, স্থল অভিযানের প্রথম দুটির একটি উদ্দেশ্য হাসিল হয়েছে। তারা একটি বাফার জোন সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, যেখানে হামলার মুখে পড়ার আশঙ্কা কম থাকে এবং যেখান থেকে পরবর্তী অভিযান পরিচালনায় সহায়তা করা যায়।

তাদের দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্দেশ্য হবে ইসরাইলি নিয়ন্ত্রণের পকেটগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে গাজা সিটির ওপর পূর্ণ অবরোধ কার্যকর করা, ধীরে ধীরে ইসরাইলি নিয়ন্ত্রিত এলাকা সম্প্রসারণ করা।

এখন পর্যন্ত ইসরাইলি সৈন্যরা জোহর আল-দিক এক্সিস দিয়ে পূর্ব থেকে গাজায় প্রবেশ করে গাজা সিটিসহ উত্তর গাজাকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে। এ কাজে তারা দক্ষিণ দিকে ফিলিস্তিনিনের সরে যাওয়ার প্রধান সালাহউদ্দিন ও আল-রাশিদ রাস্তাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে।

তারা বেইত লাহিয়া এক্সিস দিয়ে দক্ষিণ দিকেও অগ্রসর হচ্ছে। তারা গাজা সিটির প্রায় উপকণ্ঠে পৌঁছে গেছে। উত্তর-পূর্বে বেইত হানুনের কাছেও তারা চলে গেছে।

একটি তুর্কি সূত্র জানিয়েছে, উপত্যকায় অতীতের স্থল অভিযান থেকে শিক্ষা নিয়ে ইসরাইল দৃশ্যত এবার অভিযানে নেমেছে। তারা এখন সতর্কভাবে প্রণীত রোডম্যাপ অনুসরণ করছে।

তুর্কি সূত্রটি জানায়, ইসরাইল ২০০৯ ও ২০১৪ সালের মতো অভিযান পরিচালনা করলেও অতীতের ভুল পুনরাবৃত্তি করতে চাচ্ছে না।

সূত্রটি জানায়, তারা মারাত্মক বিপদ এড়াতে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে।

তুর্কি সূত্রটি জানায়, ইসরাইলিরা এখনো খোলা এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে, শহর এলাকা এড়িয়ে যাচ্ছে। আর ফিলিস্তিনিরাও তা বুঝতে পারছে।

সূত্রটি জানায়, ‘ইসরাইলি সেনাবাহিনী প্রবেশ করার পর কোথা থেকে শত্রু আক্রমণ করছে, তা শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। তারপর তারা দ্রুত সরে যাচ্ছে। আর সাথে সাথেই বিমান হামলা করছে। এরপর সেখানে সৈন্য ও পদাতিক বাহিনী অগ্রসর হচ্ছে। তবে তারা নগরীতে প্রবেশ করলে এই কৌশল কাজে আসবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল রিচ আউটজেন বলেন, এই অভিযানে ইসরাইল টানেল সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারবে না।

তিনি বলেন, ইসরাইলের এবারের লক্ষ্য হলো এই টানেলগুলো ধ্বংস করে দেয়া।

তবে তুর্কি একটি সূত্র জানিয়েছে, হামাস ও অন্যান্য যোদ্ধারা ইসরাইলকে শহর এলাকায় আসতে প্রলুব্ধ করছে। ইসরাইলও বিভ্রান্ত হয়ে সেদিকে অগ্রসর হচ্ছে।
সূত্রটি জানায়, গাজার সশস্ত্র গ্রুপগুলোর কাছে এটি খুবই গ্রহণযোগ্য।

সূত্রটির মতে, উন্মুক্ত স্থানে যুদ্ধের চেয়ে ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় যুদ্ধ হামাসের জন্য অধিকতর পছন্দের বিষয়। তার মতে, ইসরাইল এখন ওই প্রলোভনে পা দিয়ে নগরীর দিকেই অগ্রসর হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার কাসসাম ব্রিগেড একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, তাদের দুই যোদ্ধা একেবারে কাছাকাছি গিয়ে একটি ইসরাইলি ট্যাংক ধ্বংস করছে।

তুর্কি সূত্রটি জানায়, স্থল অভিযান যত দীর্ঘায়িত হবে, প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব সত্ত্বেও ইসরাইল তাদের যুদ্ধ করার সক্ষমতা হারাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *