গাজীপুরে কারখানায় দুর্বৃত্তদের আগুন, শ্রমিকের মৃত্যু

Slider গ্রাম বাংলা

রিপন আনসারী কোনাবাড়ি থেকে: গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ি শিল্পনগরীতে অনন্ত গার্মেন্টস নামে একটি পোষাক কারখানায় লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণের পর কারখানার ভেতর থেকে এল ইমরান(৩০) নাম এক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার হয়েছে। তার পিতার নাম জহিরুল ইসলাম,সাং- ভুমবাড়িযা,থানা- লাকসাম,জেলা- কুমিল্লা।

সোমবার( ৩০ অক্টোবর) বিকেল ৫ টায় কোনাবাড়ী কাশিমপুর রোডে অবস্থিত অনন্ত গার্মেন্টস লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয় শ্রমিকেরা। রাত ৮ টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। রাড ১০ টায় কারখানার ভেতর থেকে ওই লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ- পুলিশ কমিশনার ( অপরাধ উত্তর) আবু তোরাব মোহাম্মদ শামসুর রহমান কালের কন্ঠকে শ্রমিক মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, অগ্নিকান্ডের পর কারখানার ভেতর থেকে ওই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হয়। মৃত ব্যক্তি একজন শ্রমিক। সে কোন কারখানার তা পরিচয় জানার পর বলা যাবে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আঃ সামাদ জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল করিম বলেন, অনন্ত গার্মেন্টসের আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে আছে।

সরেজমিনে জানা যায়, বিকাল তিনটার দিকে পার্শ্ববর্তী এম এম গার্মেন্টস এর শ্রমিকেরা ঢাকা- টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়িতে রাস্তা অবরোধ করে বিভিন্ম কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনে শরীক হতে বলে। এসময় এম এম গার্মেন্টসের শ্রমিকদের সাথে আরো বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকেরা যোগ দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আন্দোলনরত শ্রমিকরা অনন্ত গার্মেন্টস এর সামনে এসে শ্রমিকদের নীচে নামতে বলে। এসময় অনন্ত গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ গেট লাগিয়ে দেয়। ফলে শ্রমিকরা বাইরে যেতে পারেনি। এসময় অনন্ত গার্মেন্টস এর শ্রমিকদের লক্ষ্য করে আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অনন্ত কর্তৃপক্ষ ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে আন্দোলনকারীদের উপর ইট পাথর নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হয়। এই ঘটনার পর আন্দোলনকারীরা অনন্ত গার্মেন্টসএর গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে কার্টুনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই আগুন কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে কারখানার তিনটি তলা পুঁড়ে গেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসে দুটি ইউনিট তিন ঘন্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

কারখানার সামনে দাড়িয়ে থাকা অনন্ত গার্মেন্টস এর হেলপার স্বপ্না বেগম বলেন, আমাদের কোন শ্রমিক আগুন দেয়নি। বাইরের শ্রমিকরা আগুন দিছে।

কারখানার সামনে চায়ের দেকানী শহিদুল ইসলাম বলেন, বাইরের শ্রমিকরা আগুন দিয়েছে।

কারখানার সামনে দায়িত্বরত শিল্প পুলিশের সদর দপ্তরের দায়িত্বরত পরিদর্শক মীর রকীবুল হক বলেন,, আমরা তিন দিন ধরে কোনাবাড়িতে ডিউটি করছি। আজকে বাইরের শ্রমিকরা এই ঘটনা ঘটাল।

এই বিষয়ে কথা বলতে অনন্ত গার্মেন্টস এর কোন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায় নি। তবে শ্রমিকদের অভিযোগ, একজন কর্মকর্তার নির্দেশে ছাদ থেকে ইট পাথর নিক্ষেপ কর হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনন্ত গার্মেন্টস এর গেটমেন জানান, বাইরের লোকরা আগুন দিয়েছে।

এদিকে আজ দিনভর শ্রমিকেরা গাজীপুর জেলার বাসন, বোর্ডবাজার, মালেকের বাড়ি, কোনাবাড়ি কাশিমপুর সহ বেশ কিছু এলাকায় কারখানা থেকে বের হয়ে রাস্তা অবরোধ করে। দফায় ূদফায় পুলিশের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। এসময় তারা কোনাবাড়িতে একটি পুলিশ বক্সেও আগুন দেয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে শ্রমিকদের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কিছু শ্রমিক আহত হয়। আহত শ্রমিকেরা তারগাছ এলাকায় অবস্থিত তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে রাসেল হাওলাদার নামে এক শ্রমিক নিহত হয়। এই ঘটনার পর কয়েক এলাকার শ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে তান্ডব চালায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *