ইসরাইল খুব সম্ভবত গাজা উপত্যকায় স্থল হামলার পরিকল্পনা বাতিল করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলোর অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে তিন লাখ ৬০ হাজার সৈন্য ও অত্যাধুনিক ট্যাংক ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে গাজা সীমান্তে অবস্থান নিয়ে যেকোনো মুহূর্তে হামলা চালানো হুমকি দিলেও এখন তারা তা থেকে সরে এসেছে বলে ব্রিটেনভিত্তিক একটি পত্রিকায় বলা হয়েছে।
গাজায় মঙ্গলবার নৃশংসভাবে একটি হাসপাতালে বোমা হামলা চালিয়ে অন্তত ৫০০ মানুষ হত্যার আগেই ইসরাইল ওই পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে বলে মনে হয়েছে।
তবে গাজায় স্থল অভিযান থেকে ইসরাইল সরে গেছে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে ওই পত্রিকাকে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) মুখপাত্র লে. কর্নেল রিচার্ড হেচেট কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা পরবর্তী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা বলছি না যে তা কী হবে।’
তিনি বলেন, ’সবাই স্থল হামলার কথা বলছে। তবে এটা সম্ভবত ভিন্ন কিছু হতে যাচ্ছে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সফরের ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই আইডিএফ দ্ব্যর্থবোধক বার্তা প্রচার করছে।
তবে ইসরাইলি বিমান গাজায় বিরামহীনভাবে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি মঙ্গলবার গাজার একটি হাসপাতালে বোমা ফেলে পাঁচ শতাধিক লোককে হত্যার পরও বিমান হামলা বন্ধ করেনি।
ইসরাইল সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস বলেন, ‘লক্ষ্যপূরণের সময় এলে তবেই ইসরাইলি বাহিনী তাদের বর্ধিত সামরিক তৎপরতা শুরু করবে।’
উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বারবার ইসরাইলের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন যে গাজা পুনঃদখল হবে একটি ‘বড় ভুল।’
গাজার হাসপাতালে হামলা : ইসরাইল আর যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর অকুণ্ঠ সমর্থন পাবে না
গাজার হাসপাতালে নৃশংসভাবে হামলা চালিয়ে পাঁচ শতাধিক নিরীহ মানুষ হত্যার পর ইসরাইল আর যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) কাছ থেকে অকুণ্ঠ সমর্থন পাবে না। এমন মন্তব্যই করেছেন মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাঙ্গেস ক্যালামার্দ। তিনি জানিয়েছেন, এই হামলার মূল্য হলো যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অকুণ্ঠ সমর্থন হারানো।
ক্যালামার্দ গাজার আল-আহলি হাসপাতালের বোমা হামলাকে ‘নৃশংস’ হিসেবে অভিহিত করে তার এক্স (সাবেক টুইটারে) এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘এটি হলো ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর অকুণ্ঠ সমর্থনের মূল্য : আরো বেশি বেসামরিক নাগরিক হত্যা; আরো বেশি যুদ্ধাপরাধ; আরো, আরো, আরো।’
উল্লেখ্য, ৭ নভেম্বর ইসরাইলের অভ্যন্তরে গাজাভিত্তিক প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের অভিযানের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে আসছিল ইসরাইলকে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলো ইসরাইলকে সম্ভব সব ধরনের হামলা চালানোকে অনুমোদন করে আসছিল। তারা অস্ত্রসহ সব ধরনের সহযোগিতা করছিল।
মঙ্গলবার গাজার হাসপাতালে আকাশপথে হামলা চালায় ইসরাইল। এই হামলায় অন্তত ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইসরাইল সফরের ঠিক আগের দিন এই হামলা হয়েছে। এই হামলার পর বাইডেনের পরিকল্পনা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
গত ১০ দিন ধরে চলা যুদ্ধে আহত এবং ঘরছাড়া মানুষদের অনেকেই ওই হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন এখনো অনেকে। ইসরাইলের এই হামলা ‘যুদ্ধপরাধ’ হিসাবে ব্যাখ্যা করেছে গাজা কর্তৃপক্ষ।
গত ১১ দিন ধরে চলছে ইসরাইল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধ। এই যুদ্ধে দুই দেশ মিলিয়ে ইতিমধ্যেই ৪,০০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। রোজই বাড়ছে সেই সংখ্যা। উত্তর ও মধ্য গাজার বাসিন্দাদের ঘর ছাড়ার জন্য ‘চরম সময়সীমা’ শেষ হলেও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্থলপথে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গাজা অভিযান শুরু হয়নি। তবে মঙ্গলবারও দফায় দফায় বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে গাজায়। মঙ্গলবারই জাতিসঙ্ঘ-পরিচালিত স্কুলেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। স্কুলটিতে যুদ্ধে ঘরছাড়া মানুষেরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই হামলায় ছয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
সূত্র : আল জাজিরা এবং অন্যান্য