ফ্লাইওভার থেকে পড়ে তরুণীর মৃত্যু: কে ছিল সঙ্গে, কী হয়েছিল?

Slider নারী ও শিশু

নাম শাহিদা ইসলাম মিম (৩১)। বাবা শেখ আবু সাঈদ বেঁচে নেই। মা নাজমা আক্তার আজিমন। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় জন মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। ছোট ভাই চাকরির জন্য থাকেন রাজধানীর বাইরে। মায়ের সঙ্গে রাজধানীর হাতিরঝিল থানার আলী লেনের ওয়াপদা রোড এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন মিম।

গত ৮ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে এক বন্ধুর সঙ্গে কফি খাওয়ার কথা বলে মিম বাসা থেকে বের হন। ফিরতে দেরি দেখে মা নাজমা আক্তার মেয়ের নম্বরে বারবার কল দিচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে একবার কল রিসিভ করে মিম জানান, ফিরতে আরও দেরি হবে। কিন্তু এরপর আর কল ধরেননি, রাত বাড়তে থাকলেও তিনি বাসায় ফেরেননি। ওই রাতেই রাজধানীর মালিবাগ ফ্লাইওভারের নিচে পাওয়া যায় তার রক্তাক্ত মরদেহ। ঘটনার পর পুলিশ খবর দিলে রমনা থানায় গিয়ে মেয়ের মরদেহ দেখতে পান নাজমা।

এ ঘটনা কীভাবে ঘটলো সেই রহস্য এখনও উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় সজল নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে তারা। ঘটনা জানতে তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

মিমের মা নাজমা আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বন্ধুর সঙ্গে কফি খেতে যাচ্ছে একথা আমাকে বলে বলে রাত ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হয় মিম। অনেক রাত হওয়ার পরও বাসায় যখন ফিরছিল না, আমি মেয়েকে কল দেই। তার সঙ্গে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ফোনে কথা হয়। এটাই মেয়ের সঙ্গে আমার সর্বশেষ কথা। ফোনে সে আমাকে জানিয়েছিল একটু পরে বাসায় ফিরে আসবে। এর পরে কল দিলেও আর ফোন ধরেনি। রাত দেড়টার পর এক পুলিশ সদস্য কল রিসিভ করে রমনা থানায় যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে আমি আমার মেয়ের লাশ দেখতে পাই।

নাজমা দাবি করেন, কেউ না কেউ তার মেয়েকে হত্যা করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, রাত দেড়টার একটু পর মালিবাগ ফ্লাইওভারের ওপর থেকে নিচে পড়ে যায় মেয়েটি। তখন সেখানে একটি ছেলেকে দেখতে পান তারা। ঘটনার পর মুহূর্তের মধ্যে সেখানে থেকে ছেলেটি সরে যায়।

ঘটনার পর রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নাজমা আক্তার। মামলাটির তদন্ত করছেন রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান।

তদন্ত অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে এসআই মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঘটনার পরই তরুণীর মা বাদী হয়ে মামলা করেন। আমরা ইতোমধ্যে সজল নামে একজনকে গ্রেফতার করেছি। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তবে কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছে তা এখনও বলে যাচ্ছে না। আমরা জানার চেষ্টা করছি। গ্রেফতার ছেলেটাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলমান রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি মেয়েটি লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছিল। সে নাচ-গান করতো। তার বেশ কিছু বন্ধু ছিল। ওই দিন কোনও বন্ধুর সঙ্গে বাসা থেকে বের হয়েছিল। এই বিষয়ে তার মা আমাদের কিছুই জানাতে পারেননি।

এ প্রসঙ্গে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঘটনার পর থেকেই আমরা এর পেছনের রহস্য খোঁজার চেষ্টা করছি।

ডিএমপির রমনা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম জানান, মিম একা এসেছিল, নাকি তার সঙ্গে কেউ ছিল সেটা চিহ্নিত হলে তারপর বুঝতে পারবো ঘটনাটা হত্যা না আত্মহত্যা। সবকিছু পর্যালোচনা করে মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

মামলার এজাহারে পিন্টু নামের একজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি মিমকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন মিমের মা। তবে তার বিষয়ে কোনও খোঁজ নেওয়া হয়েছে কিনা, বা তাকে গ্রেফতার বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কিনা এ বিষয়ে পুলিশ কিছু জানায়নি।

মামলার এজাহারে যা বলা হয়েছে

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৮ অক্টোবর আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টায় আমার মেয়ে (শাহিদা ইসলাম মিম (৩১)) তার বন্ধুর সঙ্গে ভিডিও কলে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলে। এরপর সে তার বন্ধুর ডাকে রাত ৯টায় বাসা থেকে বের হয়। বন্ধুর বাইকে বের হয় সে। আমি আমার মেয়ের সঙ্গে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ফোনে কথা বলি। তখন সে আমাকে জানায়, একটু পরে বাসায় ফিরে আসবে। আমার মেয়ে বাসায় ফিরতে দেরি করলে রাত ১টায় আবার কল করলে তার ফোন রিং হয়। কিন্তু সে কল রিসিভ করেনি।

পরবর্তীতে বেশ কিছুক্ষণ পর আমি আমার মেয়ের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলে একজন কল রিসিভ করেন। তিনি রমনা থানার এসআই মিজানুর রহমান বলে পরিচয় দেন। তিনি আমাকে রমনা মডেল থানাধীন পশ্চিম মালিবাগের রাজউক কোয়ার্টার দেয়াল সংলগ্ন স্থানে আসতে বলেন। আমি দ্রুত রমনা থানার ওখানে গলির মাথায় বাদশা মোটরসের সামনে মৌচাক রামপুরা মেইন রোডে (ডিআইটি রোড) রাত অনুমানিক ১টা ৪৫ মিনিটে পৌঁছাই। তখন সেখানে একটি মেয়ের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখি। ওই মরদেহটি আমার মেয়ের বলে শনাক্ত করি।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আশেপাশের লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি, ঘটনাস্থলের ঠিক ওপেরে ফ্লাইওভারে আমার মেয়ের সঙ্গে একটি ছেলের কথা-কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। তখন তার সঙ্গে থাকা ছেলেটি আমার মেয়েকে ফ্লাইওভারের ওপর থেকে ফেলে দিয়ে চলে যায়। যার ফলে আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। যে আমার মেয়েকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গেছে তার পরিচয় আমি জানি না। অজ্ঞাতনামা কে বা কারা আমার মেয়েকে ফ্লাইওভারের ওপর থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে রাস্তার ওপর ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গাজীপুরের টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকায় কমিশনারের বাসার পাশের ভাড়াটিয়া পিন্টু (৫০) আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। আমার মেয়ে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় আনুমানিক এক মাস আগে তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে যায়। স্টেশন রোডে আমার মেয়েকে মারধর করে। ওই বিবাদী আমার মেয়েকে সবসময় বিরক্ত করতো। আমার মেয়ে কল ও এসএমএস দিতে নিষেধ করলে সে আমার মেয়েকে মেরা ফেলার হুমকি দেয়।
Google News Logoবাংলা ট্রিবিউনের খবর পেতে গুগল নিউজে ফলো করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *