নজিরবিহীন হামলা : ইসরাইলকে যেভাবে বোকা বানিয়েছে হামাস

Slider সারাবিশ্ব

নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে অপরাজেয় মনে করা ইসরাইলকে অসহনীয় লজ্জায় ফেলে দিয়েছে গাজাভিত্তিক প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। ইসরাইল পর্যন্ত স্বীকার করে নিয়েছে, তাদের গোয়েন্দারা এমন হামলার আভাস পর্যন্ত পায়নি। অনেকের কাছে এমনটা অসম্ভব বিবেচিত হচ্ছে। কারণ, ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থাকে বিশ্বের সেরা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সারা দুনিয়া তাদের কাছ থেকে আঁড়িপাতার যন্ত্রসহ নানা সরঞ্জাব কিনে থাকে। অতীতে গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতেই অনেক সাফল্য পেয়েছে ইসরাইল। কিন্তু এবার তারা ব্যর্থ হলো কিভাবে?

আসলে হামাস তাদেরকে বোকা বানিয়েছে চমকপ্রদ কৌশলে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে রোববার রাতে হামাসের সাথে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে যে ইসরাইলকে বোকা বানাতে হামাস এক বছর ধরে কাজ করতে থাকে। এই সময় তারা এমন ভাব ধরে যাতে ইসরাইল মনে করে যে তাদের সশস্ত্র সংঘাতে জড়ানোর কোনো ইচ্ছা নেই। তারা তুলনামূলক শান্ত জীবন বজায় রাখার জন্য অর্থনৈতিক প্রণোদনা নিয়েই শান্ত থাকতে চায়।

সূত্রটি রয়টার্সকে জানায়, ‘ইসরাইলকে হামাস এই ধারণা দেয় যে তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয়।’

তিনি বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে ইসরাইলকে বিভ্রান্ত করতে হামাস নজিরবিহীন গোয়েন্দা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল। তারা ইসরাইলকে এই ধারণা দিতে থাকে যে তারা যুদ্ধ বা সংঘাতে যেতে চায় না। তারা এই ফাঁকে এই বিশাল অপারেশনের প্রস্তুতি নিতে থাকে।’

সূত্রটি জানায়, প্রস্তুতির অংশ হিসেবে হামাস একটি নকল ইসরাইলি সম্প্রদায়কে এতে অভ্যস্ত করে তোলে।

তিনি বলেন, ‘ইসরাইল নিশ্চিতভাবেই তাদের দেখেছিল। তবে তারা মনে করেছিল যে হামাস কোনো সংঘাতে যেতে আগ্রহী নয়।’

সূত্রটি জানায়, ‘হামাস ব্যাপকভাবে ধারণা সৃষ্টি করেছিল যে তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের জন্য প্রস্তুত নয়।’

ইসরাইলের সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইয়াকুব আমিরর বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ইসরাইলের মিত্র এমন কয়েকটি দেশ ইসরাইলকে এই মিথ্যা আশ্বাস দিতে থাকে যে হামাস এখন ‘অনেক বেশি দায়িত্বশীলতা’ প্রদর্শন করছে।’

ইসরাইলে হামাসের হামলা : যা বলল ইরান
গাজাভিত্তিক প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামলা নিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেছে ইরান। উল্লেখ্য, ইরানের সমর্থন পেয়েই হামাস এই হামলা করে থাকতে পারে বলে অভিমত প্রকাশ করছে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই তাদের একটি রণতরী এবং অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান মধ্যপ্রাচ্যের দিকে পাঠিয়ে দিয়েছে। অনেক বিশ্লেষক আশঙ্কা করছেন, ইরানকে টার্গেট করেই মধ্যপ্রাচ্যে রণসজ্জা বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

জাতিসঙ্ঘে পাঠানো এক বিবৃতিতে ইরান সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে ইসরাইলের ভেতরে হামাসের নজিরবিহীন হামলার সাথে তার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।

বিবৃতিতে ইরান জানা, ‘আমরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন প্রকাশ করছি। তবে আমরা ফিলিস্তিনিদের প্রতিক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত নই। এটি পুরোপুরি খোদ ফিলিস্তিনের দায়।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘জায়নবাদী জান্তার অবৈধভাবে সাত দশক নির্যাতনমূলক দখলতারিত্ব এবং জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করা দৃঢ় পদক্ষেপ পুরোপুরি একটি বৈধ প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা।

হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ : যা বলল রাশিয়া
গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সাথে ইসরাইলের লড়াই চলছে। এই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশ তাদের অবস্থান প্রকাশ করছে। রাশিয়া অবিলম্বে এই যুদ্ধ বন্ধ করে অর্থপূর্ণ সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে।

জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভায় এক বার্তায় জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত রুশ দূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ‘অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে যুদ্ধবিরতি কার্যকর এবং অর্থপূর্ণ আলোচনা করতে হবে।’

তিনি বলেন, এই যুদ্ধের ‘আংশিক কারণ হলো অমীমাংসিত ইস্যুগুলো।’

গত শনিবার এই যুদ্ধ শুরু হয়। ইতোমধ্যেই উভয় পক্ষের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এই যুদ্ধের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লানকেন বলেন, সৌদি-ইসরাইল সম্পর্ক স্বাভাবিকিকরণের প্রক্রিয়া দেখে হামাস এ যুদ্ধ শুরু করতে পারে। তাদের এ আক্রমণ সৌদি-ইসরাইল সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে।

রোববার (৮ অক্টোবর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের উদ্ধৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারের গণমাধ্যম আলজাজিরা।

সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ব্লিঙ্কেন বলেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিনের চলমান যুদ্ধে কয়েকজন মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছে। আমরা এ সংবাদ নোট করেছি। ওয়াশিংটন এখন তাদের বিশদ পরিসংখ্যান যাচাই করতে চাইছে।

মার্কিন উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন ফিনার ফক্স নিউজকে বলেছেন, ‘হামাসের এই আক্রমণ যেন সৌদি-ইসরাইলের সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। উভয় দেশের সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ইসরাইলের ওপর হামলা কেন হয়েছে, এ যুদ্ধে ইরান কী ভূমিকা পালন করতে পারে বা সৌদি-ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করা এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল কিনা, খুব তাড়াতাড়ি এ বিষয়গুলোর উত্তর খোঁজা দরকার। আমরা মনে করি, এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার মধ্যে উভয় দেশের কল্যাণ হবে।’

উল্লেখ্য, শনিবার হঠাৎ করেই ইসরাইলে কয়েক হাজার রকেট হামলা চালানোর পর বেড়া ভেঙে ইসরাইলে ঢুকে পড়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। গাজাভিত্তিক এ সংগঠনের যোদ্ধাদের হামলায় এখন পর্যন্ত ৬০০-এরও বেশি ইসরাইলি নিহত হয়েছে।

সূত্র : আলজাজিরা, বিবিসি এবং অন্যান্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *