ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে রাজশাহীর নিম্নাঞ্চল

Slider রাজশাহী


সর্বোচ্চ ও ভারী বর্ষণে স্থবির হয়ে পড়েছে রাজশাহীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে এখানকার নিম্নাঞ্চল। হাঁটুপানিতে ভাসছে মূল শহর ও এখানকার বিভিন্ন এলাকা। জেলার বাঘা ও চারঘাটসহ বিভিন্ন উপজেলায়ও ভারী বর্ষণে স্বাভাবিক জীবযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হয়ে পড়েছে।

বুধবার (৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। আর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৃষ্টি চলছিল। কখনো হালকা কখনো মুষলধারে বৃষ্টি চলছেই।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত) রাজশাহীতে ২৪৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। একদিনে এ পরিমাণ বৃষ্টিপাত গত ১২ বছরের রেকর্ডে নেই। এর আগে ২০২১ সালের ২০ জুলাই রাজশাহীতে ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। তার আগে ও পরে অক্টোবরের এ বৃষ্টিপাতই সর্বোচ্চ।

এদিকে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর নিম্নাঞ্চলে ঘর-বাড়িতে বৃষ্টির পানি ঢুকে গেছে। মূল শহর এবং মধ্যাঞ্চলে হাঁটুপানি জমে গেছে। নগরীর সড়ক ঘেঁষে থাকা ড্রেনের পয়ঃনিষ্কাশনের নোংরা পানি আর বৃষ্টির পানিতে একাকার হয়ে গেছে পুরো রাজপথ। পানি নামতে না পারায় নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পথঘাট ডুবে যাওয়ায় মোটরসাইকেল, রিকশা, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন হালকা ও ভারী যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। পানির নিচে থাকা বিভিন্ন সড়কে খানাখন্দকের কারণে ঘটছে দুর্ঘটনাও। তবে কেবল বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিই নয়, রাজশাহীতে ৩০ মিনিট বৃষ্টি হলেই এ ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বছরের পর বছর ধরে চলছে এ ভোগান্তি। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সৌন্দর্যবর্ধনের মতো উন্নয়নে গ্রিনসিটি, ক্লিন সিটির তকমা পেলেও বর্ষণমুখর দিনগুলোতে রাজশাহী নগরীর রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতার সেই পুরোনো দৃশ্যই বারবার দৃশ্যমান হয়। অবস্থার কোনোই পরিবর্তন নেই। কয়েক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে দাবি করা হলেও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন হয়নি আজও।

বিশেষ করে নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, তালাইমারী মোড়, গণকপাড়া, শিরোইল মাস্টারপাড়া, কাদিরগঞ্জ, হেতেমখাঁ, বর্ণালী মোড়ের পেছনে, রামেক হাসপাতাল চত্বর, আমবাগান, লক্ষ্মীপুর, তেরোখাদিয়া, ঝাউতলা, কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার সামনে, রাজশাহী পর্যটন মোটেল রোড, সপুরা গোরস্থানের মোড় থেকে উপশহর মোড়, গৌরহাঙ্গা রেলগেইট, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মোড়, ভাটাপাড়া, শালবাগানসহ বেশকিছু এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় এসব এলাকায় চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে।

এছাড়া বৃষ্টির পানিতে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়, কোর্ট চত্বরে জমেছে হাঁটুপানি। সকাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ এ দফতরগুলোতে পানি মাড়িয়ে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট সবাইকেই। বৃষ্টি হলেই রাজশাহী শহরের অনেক রাস্তায় পানি জমে যায়। আর পাড়া-মহল্লার ছোট রাস্তায়ও জমে গেছে হাঁটুপানি। তাই বৃষ্টি হলেই সড়কের জলাবদ্ধতা নিয়ে চরম আশঙ্কায় থাকেন নগরবাসী। কারণ সবাইকেই পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। তবে বৃষ্টি থামার কমপক্ষে ৪ ঘণ্টার মধ্যেই এসব এলাকার সড়কের পানি নেমে যায়। টানা বৃষ্টিতে জনদুর্ভোগ অনেকটা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। পানি একদিক দিয়ে নামছে আবার আরেক দিক দিয়ে জমছে। ডুবছে সড়ক। আর কাল-পরশু বৃষ্টি থামলেও এসব নিচু এলাকার পানি নামতে এক থেকে দুই সপ্তাহ লেগে যাবে। গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সড়কে তাই জলজটের কারণে যানজটও লেগেই থাকবে।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র আরো জানায়, বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজশাহীতে ২৪৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি মৌসুম তো বটেই স্মরণকালের মধ্যেও সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এর আগে ২০২১ সালের ২০ জুলাই রাজশাহীতে ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। এরপর একদিনে এ পরিমাণ বৃষ্টি আর হয়নি।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র বলছে, সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি ধরনের বর্ষণ বলা হয়। ২৩ থেকে ৪২ মিলিমিটার পর্যন্ত মাঝারি ভারী বর্ষণ হিসেবে ধরা হয়। ৪৩ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ভারী বর্ষণ বলা হয়। আর ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হলে তা অতিভারী বর্ষণ হিসেবেই বিবেচিত হয়। তাই রাজশাহীতে অতিভারী বর্ষণ চলছে। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এ বর্ষণ চলছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টি কৃষি ও কৃষকের জন্য আকাঙ্খিত ছিল। মাঠে থাকা রোপা-আমন ধানের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। রাজশাহীতে বর্তমানে ৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা-আমন ধান রয়েছে। এ সময় বৃষ্টি হওয়ায় জমিতে সেচ দেয়া নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তা কেটেছে। এ বৃষ্টি রোপা-আমনের জন্য সুফল বয়ে আনবে। এছাড়া দীর্ঘ দিনের অনাবৃষ্টিতে রাজশাহী অঞ্চলের পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে গিয়েছিল। এ বৃষ্টিতে পানির লেয়ারও রিচার্জ হবে। যার সুফল কৃষকসহ সব মানুষই ভোগ করতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *