গাজীপুর: তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসানকে আহত করেছে কয়েকজন বহিরাগত। এই ঘটনার নেপথ্যে একই বিভাগের আরেক কর্মকর্তার ইন্দন রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার(৫ অক্টোবর) দুপুর দুইটার দিকে গাজীপুর নগর ভবনে হিসাব রক্ষণ
কর্মকর্তার নিজ কক্ষে এই ঘটনা ঘটে।
একাধিক সূত্র জানায়, বেশ কিছুদিন অনুপস্থিত থাকার পর বৃহস্পতিবার অফিসে আসেন সিটি কর্পোরেশনের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসান। তিনি তার কক্ষে স্বাভাবিকভাবেই কাজ করছিলেন। বেলা দুইটার দিকে মঞ্জুরুল হাসান তার কক্ষ থেকে বাইরে আসেন। এসময় সিটি কর্পোরেশনের হিসাব বিভাগের এক কর্মকর্তা ও কয়েকজন ঠিকাদার প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কক্ষে একটি ফাইল নিয়ে আসেন। তারা মঞ্জুরুল হাসানকে ধাক্কা দিয়ে পুন:রায় তার কক্ষে নিয়ে আসেন। এসময় তারা ফাইলটি দ্রুত স্বাক্ষর করে দেওয়ার জন্য প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাকে চাপ দেন। এ সময় তিনি ফাইলটি দেখে স্বাক্ষর করে দেবেন বলে জানালে তারা অসন্তুষ্ট হয়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ঠিকাদাররা প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার সাথে ধাক্কাধাক্কি করেন এবং তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনার পর প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা নগর ভবন ত্যাগ করে চলে যান।
পরে এ বিষয়ে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে তিনি বলেন, আমি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ দেবো না। মন্ত্রণালয় আমাকে এখানে পাঠিয়েছে, তাই আমি এখানে এসেছিলাম। এখানে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। দেশ প্রেমের ধারণ করে দায়িত্ব পালন করেছি। আজকে তার প্রতিদান পেয়েছি। আমার ভাগ্যে ছিল জুতা মারবে তাই মেরেছে। আল্লাহ এর বিচার করবেন।
তিনি আরো বলেন, আজকের পর আমি আর সিটি কর্পোরেশনে অফিস করতে আসবো না। মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে আমি অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যাব। এ নিয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না।
এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম শফিউল আজম বলেন, জাইকার একটি কনফারেন্সে থাকায় আজকে আমি অফিসে যাইনি। এ ধরনের কোনো ঘটনার কথা কেউ আমাকে জানায়নি। তিনি বলেন, যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, এটি একটি ক্রিমিনাল অফেন্স। অবশ্যই তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নগর ভবনের একাধিক সূত্র জানায়, প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে মঞ্জুরুল হাসানকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পদায়ন করার পর তিনি এখানে যোগদান করলেও বেশ কিছুদিন তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে শুরু থেকেই হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার সাথে তার বিরোধ চলে আসছিল। তারা তাকে নানা ভাবে কাজকর্মে অসহযোগিতাও করতো। এ কারণে তিনি নগর ভবনে এসে কাজকর্ম করতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন।
একটি গোপন সূত্র জানায়, গাছা এলাকার জনৈক জুয়েল ও নগর ভবন এলাকার জনৈক শুভ এই হামলার নেতৃত্বে ছিলেন। হামলায় বেশ কয়েকজন ছিল। সূত্র জানায়, গোলাম কিবরিয়া এর আগে ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার দিয়েত্বে ছিলেন। প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসান যোগদান করার পর গোলাম কিবরিয়া আগের পদে চলে যান। মঞ্জুরুল হাসান চলে গেলে গোলাম কিবরিয়া আবার ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পাবেন তাই তার ইন্দনে এই হামলা হয়েছে বলে সূত্রের দাবী। হামলার পর হামলাকারীরা কিবরয়ার রুমে দরজা বন্ধ করে বসে ছিলেন বলে সূত্রের অভিযোগ। পরে নগর ভবনের লোকজন গিয়ে দরজা খোলে।
এ বিষয়ে জানতে গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। আমি আমার রুমের বাইরে যাইনি। ঘটনা শুনেছি।