মাসুদ রানা সরকার, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি ঃ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত আলুর মজুদ থাকার পরেও বিভিন্ন অযুহাতে একশ্রেণীর মধ্যস্বত্বভোগী ও ফঁড়িয়া চক্রের সদস্যরা আলুর দাম বাড়াচ্ছে যা হলুদ কাগজ আর মোবাইলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। দু’তিন দিনের মধ্যে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসলে প্রয়োজনে আমদানির সুপারিশ করা হবে। এছাড়াও দেশব্যাপী অবৈধভাবে আলু মজুদকারীদের তালিকা প্রস্তুতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।গত মঙ্গলবার, সকাল থেকে বগুড়া শিবগঞ্জে বিভিন্ন আলুর হিমাগারে পরিদর্শন শেষে বিকেলে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সভাকক্ষে আলু ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। সভায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সর্বোচ্চ এই কর্তা বলেন, হিমাগারের সকল খরচ ধরেও প্রতিকেজি আলুর দাম ১৭ টাকার বেশি হবে না যদি ব্যবসায়ীরা ২২ থেকে ২৩ টাকাতেও বিক্রি করে তাও তাদের লস হবেনা। কিন্তু কোল্ড স্টোরেজ থেকেই বিভিন্ন ফঁড়িয়া চক্রের মাধ্যমে আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকায় যা কোনভাবেই মানা হবে না। বিভিন্ন অযুহাতে যারা দাম বাড়াচ্ছে এবং অবৈধভাবে মজুদ করছে তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি করতে হবে আলু যার হিমাগার পর্যায়ে সর্বোচ্চ মূল্য হবে ২৭ টাকা।সভায় বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, গত মৌসুমে শুধুমাত্র বগুড়াতে ১২ লক্ষ ২৪ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে আর পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৪১ হাজার ৩৪২ মেট্রিক টন। চাহিদার থেকে বেশি মজুদ আছে জেলায় তারপরেও দাম নিয়ে নয় ছয় হলে আইনের প্রয়োগ করা হবে যদিও প্রশাসন কখনোই ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্থ করতে চাইনা। তিনি ভোক্তার মহাপরিচালকের সামনেই সভায় উপস্থিত সকলকে সমন্বয় সাধনের আহ্বান জানান। যদিও সভায় মুক্ত আলোচনায় বগুড়া জেলা কোল্ড স্টোরেজ ওনার্স এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও ব্যবসায়ী নেতা পরিমল প্রসাদ রাজ অভিযোগের আঙ্গুল তোলেন বিভিন্ন ফঁড়িয়া চক্র ও মধ্যসত্ত্বভোগীদের দিকে যারা কখনোই আলু ক্রয়-বিক্রয়ে রশিদ দেন না। তারা বলেন, আলুর দাম বৃদ্ধিতে হিমাগার মালিকদের কোন হাত নেই। যার আলু সে রেখেছে তাকে তো তারা দাম বেঁধে দিতে পারেনা তবে শুরু থেকেই যদি প্রশাসন ব্যবসায়ীদের কাউন্সিলিং করতো তাহলে আজ এমন পরিস্থিতির জন্ম হতো না বলেই মন্তব্য করেন তারা। সভায় এসময় বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম, জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ শফিউল আজম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আফসানা ইয়াসমিন, বগুড়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সহ-সভাপতি মাহফুজুল ইসলাম রাজ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বগুড়ার সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভীসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও আলুর বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জানা যায়, চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত মজুদ থাকলেও দেশব্যাপী অস্থিতিশীল হয়ে পরেছে আলুর বাজার যা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বাজার নিয়ন্ত্রণে আলুর দাম সরকার বেঁধে দিলেও তা মানছেন না মজুদকারী কিংবা ফঁড়িয়া চক্রের সদস্যরা তাইতো কেজি প্রতি প্রায় ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশিতেই এখনো আলু কিনে খেতে হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে বগুড়ার শিবগঞ্জে বেশ কয়েকটি হিমাগারে অভিযান চালান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিজেই। অভিযানে মোকামতলায় আর অ্যান্ড আর পটেটো কোল্ড স্টোরেজে অতিরিক্ত মুনাফার উদ্দেশ্যে কয়েক হাজার বস্তা আলু মজুদ করায় তিন ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আটক করা হয়। এছাড়াও অভিযানে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন কেন আর কিভাবে বাড়ছে আলুর দাম যা নিয়ে একই দিন বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আলু ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের সাথে এই সভা করেন ভোক্তার মহাপরিচালক।ঘটনার বিবরণীতে প্রকাশ হয়েছে যে, বর্তমানে বগুড়ার ৪১ টি হিমাগারে প্রায় এক লক্ষ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন আলু মজুদ আছে। বাজার ঘুরে দেখা যায় খুচরা পর্যায়ে প্রকার ভেদে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৬০ টাকায় যদিও সরকারিভাবে আলুর বাজারদর নির্ধারণ করা আছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা।