টঙ্গীতে হকের সম্মেলন স্থগিত: ফেসবুক স্ট্যাটাসের প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে মিছিল

Slider টপ নিউজ

টঙ্গী(গাজীপুর) প্রতিনিধি: যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী সহ কয়েক নেতার বিরুদ্ধে হক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদম তমিজি হকের দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাস ও লাইভে হুমকি দেয়ার প্রতিবাদে টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় মিছিল হয়েছে। আর নিরাপত্তাজনিত কারণে পূর্ব নির্ধারিত সাংবাদিক সম্মেলন স্থগিত করেছে হক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হক ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড। তবে গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম তমিজি হককে দিয়ে এসব করাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিমন্ত্রীর চাচা মতিউর রহমান মতি।

শনিবার(১৬সেপ্টেম্বর) টঙ্গীতে এই সব ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, বৃহসপতিবার রাতে আদম তমিজি হক ফেসবুক লাইভে এসে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, প্রতিমন্ত্রীর চাচা গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক সহসভাপতি মতিউর রহমান মতি ও কাউন্সিলর নুরুল হক নুরুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের অভিযোগ করেন। তমিজি হক লাইভে বলেন, প্রতিমন্ত্রী রাসেল, তার চাচা মতি ও কাউন্সিলর নুরু গত সাত বছরে তার প্রতিষ্ঠান থেকে এক হাজার কোটি টাকা লুট করেন। তারা হক গ্রুপ দখল করার জন্য পায়তারা করছেন বলে অভিযোগ করেন তমিজি। এক সময় তমিজি হক শনিবার বেলা ২টায় টঙ্গীতে হক গ্রুপের অফিসে সাংবাদিক সম্মেলনের ঘোষনা দেন। কিন্তু রাত থেকে টঙ্গী আওয়ামীলীগ ও অংগ সহযোগী সংগঠন দফায় দফায় মিছিল ও সমাবেশ শুরু করে।
শনিবার বেলা দেড়টায় টঙ্গীর হক ইন্ডাস্ট্রিজের এডমিন অফিসার আবুল খায়ের কালের কন্ঠকে জানায়, নিরাপত্তাজনিত কারণে সাংবাদিক সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে।

টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সম্মেলন বাতিল হয়েছে। কারখানা চলছে। ফেসবুকে প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথা বলার বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেনি বলে জানান ওসি। দুই কর্মকর্তার মধ্যে মারামারির ফলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। এখন সব ঠিক আছে।

হক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হক ইন্ডাস্ট্রিজে গিয়ে দেখা যায়, কারখানার সামনে পুলিশ মোতায়েন আছে। ভেতরে কারখানা চলছে।

টঙ্গী আওয়ামীলীগ অফিসে গিয়ে দেখা যায়, তমিজি হকের আগমনকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতা-কর্মী সমবেত হয়েছেন। আওয়ামীলীগ অফিসে অবস্থানরত প্রতিমন্ত্রীর চাচা মতিউর রহমান মতি বলেন, তমিজি হক একজন পাগল ও সাইকো। তার করা অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবী করেন তিনি। তবে গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম তমিজি হককে দিয়ে এসব করাচ্ছেন বলে অভিযোগ মতির। একই সাথে বসা কাউন্সিলর নুরুল হক নুরু বলেন, হক গ্রুপের সাথে তার চেনাজানাও নেই। হক গ্রুপ দখল করার প্রশ্নই আসে না। তিনি তাদের বিরুদ্ধে তমিজি হকের করা অভিযোগ বানোয়াট বলে দাবী করেন।

এদিকে বেলা ২টার পর টঙ্গী থানা আওয়ামীলীগ অফিস থেকে একটি মিছিল টঙ্গী পূর্ব থানা ঘেরাও করে আবার দলীয় কার্যালয়ে ফিরে আসে। প্রতিমন্ত্রী রাসেল সহ আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্ধের বিরুদ্ধে আদম তমিজি হকের করা অভিযোগের প্রতিবাদে তারা মিছিল করেন বলেন জানান।

প্রসঙ্গত: শুক্রবার(১৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টা ৩৫ মিনিট থেকে পর পর তিনবার লাইভে এসে আদম তমিজি হক প্রতিমন্ত্রী রাসেলকে হুমকি দেন।
লাইভে আদম তমিজি হক রাসেল প্রতিমন্ত্রীকে হুমকি দেয়ায় টঙ্গীতে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা আদম তমিজি হকের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান নেয়। লাইভে তমিজি হক বলেন, রাসেল এমপি ও তার চাচা এবং কাউন্সিলর নুরুল হক ও অন্যান্যরা তার প্রতিষ্ঠানে গত সাত বছরে এক হাজার কোটি টাকা ডাকাতি করেছে। রাসেল এমপিকে চোর বলে অভিহিত করে কাল আসতেছি বলে হুমকি দিয়ে বলেন, আমি তমিজি হক, আমাকে চিনস! কাল টঙ্গী আসতেছি। পারলে ঠেকা।

তমিজি হকের এই লাইভের পর টঙ্গীতে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। দলে দলে কয়েক শত নেতা-কর্মী রাস্তায় নেমে আসে। তারা হক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ঘিরে ফেলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন হয়।

টঙ্গীতে অবস্থিত হক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হক ফুড ইন্ডাস্ট্রিজে অপ্রীতিকর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে হক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদম তমিজি হকের একাধিক ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এই উত্তেজনার মধ্যে শনিবার বেলা ২টায় টঙ্গীতে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেও টঙ্গীতে আসেননি আদম তিমিজি হক।

এই বিষয়ে জানতে হক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদম তিমিজ হকের হোটসআপ নম্বরে কল দিলে তার পিএস ইশান খান কল বেগ করে বলেন, এমডি সাহেব কি লিখছেন সে বিষয়ে আমি জানিনা। স্যারের আইডি কয়েকদিন আগে হ্যাক হয়েছিল। তবে শনিবার বেলা ২টায় সাংবাদিক সম্মেলন হবে বলে তিনি জানিয়ে ছিলেন।
এর আগে বুধবার রাতে টঙ্গীতে অবস্থিত হক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হক ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর জিএমকে মারধর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই প্রতিষ্ঠানের এইচ আরের এডমিন কর্তৃক নিজ কার্যালয়ে মারধরের শিকার হয়ে ও পদ হারিয়ে আহত জিএম নিঁখোজ না আত্মগোপনে চলে গেছেন, তা নিয়ে টঙ্গীতে হক গ্রুপের শ্রমিকদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ বলছে, দুই কর্মকর্তার মধ্যে মারামারি হয়েছে।

স্থানীয় ও দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, টঙ্গীতে অবস্থিত হক ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের জিএম মুশফিকুর রহমানকে বুধবার রাতে অফিসে আটকে রেখে মারধর করা হয়। একই অফিসের এইচ আরের এডমিন ঈশার খান কতিপয় লোকজন নিয়ে অফিসের ভেতরে মুশফিককে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করেন বলে অভিযোগ। এরপর মুশফিকুর রহমানকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করানো হয়। এই ঘটনার পর থেকেই মুশফিকুর রহমান নিঁখোজ। এই ঘটনার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বুধবার রাতে অনেক পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন নেতা এই প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়। এই সময় মুশফিকের পরিবারের নিকট থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিতে দেখা যায়। এরপর থেকে মুশফিক পরিবার সহ অদৃশ্যে অবস্থান করছেন।

এই বিষয়ে জানতে মুশফিকুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও কেউ ফোন রিসিভ করেননি।

বুধবার রাতে উপস্থিত কয়েকজন গনমাধ্যম কর্মী জানান, তারা কথা বলতে চাইলেও আহত মুশফিকুর রহমানের সাথে কথা বলতে দেয়া হয়নি। সরকারী-বেসরকারী প্রহড়ায় মুশফিক সহ তার পরিবারকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। তারপর থেকে এই পরিবারের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। গনমাধ্যম কর্মীরা টঙ্গীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ঢাকার মোহাম্মদপুরে মুশফিকুরের বাসায় খোঁজ নিয়েও তার সন্ধান করতে পারেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *