অঘোষিত সেমিফাইনালে আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান

এশিয়া কাপের অঘোষিত সেমিফাইনালে আজ মুখোমুখি হচ্ছে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। ফাইনালে উঠার লক্ষ্য নিয়ে সুপার ফোর পর্বে নিজেদের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে মাঠে নামবে টুর্নামেন্টের দুই আয়োজক দেশ। এ ম্যাচের বিজয়ী দল ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ হবে। বৃষ্টিতে ম্যাচটি পরিত্যক্ত বা টাই হলে, রান রেটে এগিয়ে থাকার সুবাদে ফাইনালে খেলবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। লঙ্কানদের রান রেট-০.২০০ এবং পাকিস্তানের রান রেট-১.৮৯২।

কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে ম্যাচটি।

সুপার ফোরে দুই ম্যাচ দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ইতোমধ্যে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে ভারত। দুই খেলায় একটি করে জয়-হারে ২ করে পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পরের দু’টি স্থানে আছে যথাক্রমে-শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। দুই খেলায় জয়হীন বাংলাদেশ খালি হাতে টেবিলের তলানিতে থেকে এবারের আসর থেকে বিদায় নিয়েছে।

ভারত ফাইনাল নিশ্চিত করায় এবং বাংলাদেশ আসর থেকে বিদায় নেয়ায়, দু’দলের শেষ ম্যাচটি নিয়মরক্ষায় পরিণত হয়েছে। তবে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার ম্যাচটি মহাগুরুত্বপূর্ণ। কেননা এ ম্যাচের বিজয়ী দলই ফাইনালে টিকিট পাবে।

ঘরের মাঠ কলম্বোতে বাংলাদেশকে ২১ রানে হারিয়ে সুপার ফোর পর্ব শুরু করে শ্রীলঙ্কা। প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৫৭ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। এরপর বাংলাদেশকে ২৩৬ রানেই আটকে দেয় শ্রীলঙ্কার বোলাররা।
পরের ম্যাচে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ভারতের বিপক্ষে জয়ের দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করে শ্রীলঙ্কা। ভারতের কাছে ৪১ রানে হেরে যায় লঙ্কানরা। দুই স্পিনার দুনিথ ওয়েলালাগে ও চারিথ আসালঙ্কার ঘূর্ণিতে ২১৩ রানেই গুটিয়ে যায় ভারত। জবাবে ব্যাটাররা দায়িত্ব নিয়ে খেলতে না পারায় ১৭২ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচ হারে লঙ্কানরা।

ভারতের কাছে হারলেও ব্যক্তিগত পারফরমেন্সে ম্যাচ সেরা হন শ্রীলঙ্কার ওয়েলালাগে। বল হাতে ৪০ রানে ৫ উইকেট, লোয়ার অর্ডারে ব্যাট হাতে অপরাজিত ৪২ রান ও দু’টি দারুণ ক্যাচ নেন ২০ বছর বয়সী ওয়েলালাগে।

ম্যাচ শেষে ওয়েলালাগের প্রশংসা করেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকা বলেন, ‘তিন বিভাগেই অলরাউন্ড পারফরমেন্স করেছে ওয়েলালাগে। আশা করছি ভবিষ্যতেও তার এমন পারফরমেন্স অব্যাহত থাকবে।’

পাকিস্তানের বিপক্ষে আজকের ম্যাচটি ‘মহাগুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে শানাকা বলেন, ‘আমরা এখন অঘোষিত সেমিফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবো। এ ম্যাচ জিতলেই টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠার সুযোগ থাকছে। ফাইনালে খেলতে হলে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবার অবকাশ নেই।’

অন্যদিকে, সুপার ফোরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারায় পাকিস্তান। কিন্তু পরের ম্যাচে ভারতের কাছে ২২৮ রানের লজ্জার হারের লজ্জা পেতে হয় বাবর আজমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানকে। বৃষ্টির কারণে রিজার্ভ ডে’তে গড়ানো ম্যাচে ভারতের দুই ব্যাটার বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলের জোড়া সেঞ্চুরির সামনে অসহায় ছিল পাকিস্তানের বোলিং। ২ উইকেটে ৩৫৬ রানের পাহাড় গড়ে ভারত। বোলিংয়ে বাজে পারফরমেন্সের পর ব্যাটিংয়ে অসহায় আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান ব্যাটাররা। ৩২ ওভারে ১২৮ রানে শেষ হয় পাকিস্তানের ইনিংস।

অবশ্য ভারতের কাছে পরাজয়কে ইতিবাচক হিসেবে নিয়ে ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন পাকিস্তানের প্রধান কোচ গ্রান্ট ব্র্যাডবার্ন। তার মতে, এ ম্যাচে দলের ভুলগুলো ফুটে উঠেছে।

ব্র্যাডবার্ন বলেন, ‘ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে যা হয়েছে তাতে প্রতিপক্ষের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। সর্বশেষ তিন মাসে কোনো ম্যাচ হারিনি আমরা। কিন্তু এই হার আমাদের সময় মতো মনে করিয়ে দিয়েছে, এখনো কোথায়-কোথায় দলের ঘাটতি রয়েছে এবং আমাদের আরো উন্নতির দরকার আছে।’

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচকে সামনে রেখে ব্র্যাডবার্ন বলেন, ‘ফাইনালে উঠতে হলে এ ম্যাচে তিন বিভাগেই আমাদের ভালো খেলতে হবে। শ্রীলঙ্কা ভালো দল। নিজেদের কন্ডিশনে আরো বেশি ভয়ঙ্কর দল তারা। আমরা নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে, জয় অসম্ভব না।’

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নামার আগে ইনজুরি আক্রান্ত দুই পেসার হারিস রউফ ও নাসিম শাহকে নিয়ে চিন্তায় পাকিস্তান। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে রউফ কোমড় এবং নাসিম ডান কাঁধের ইনজুরিতে পড়েন। তাদের ব্যাকআপ হিসেবে দলে ডাকা হয়েছে অনভিজ্ঞ দুই পেসার শাহনাওয়াজ দাহানি ও জামান খানকে।

গত বছর সর্বশেষ এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দুবাইয়ের ওই ফাইনালে পাকিস্তানকে ২৩ রানে হারিয়ে এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। ওই ম্যাচের পর সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আর দেখা হয়নি শ্রীলঙ্কাও পাকিস্তানের। চলতি বছরের জুলাইয়ে ঘরের মাঠে পাকিস্তানের কাছে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় লঙ্কানরা।

ওয়ানডে ফরম্যাটে ২০১৯ সালের অক্টোবরে সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিল শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান। ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত তিন ম্যাচের ওই ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলঙ্কাকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়েছিল পাকিস্তান। এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে ১৫৫ বার মুখোমুখি হয়েছে এই দু’দল। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার জয় ৫৮টিতে, পাকিস্তানের জয় ৯২ ম্যাচে। একটি ম্যাচ টাই ও চারটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।

আজ শ্রীলঙ্কাকে হারালে অস্ট্রেলিয়াকে সরিয়ে ১১৯ রেটিং নিয়ে আবারো ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে উঠবে পাকিস্তান। হেরে গেলে ১১৫ রেটিং নিয়ে তৃতীয়স্থানে নেমে যাবে পাকিস্তানরা। তখন ১১৮টি রেটিং নিয়ে অস্ট্রেলিয়া শীর্ষে এবং ১১৬ রেটিং নিয়ে দ্বিতীয়স্থানে উঠবে ভারত।

শ্রীলঙ্কা দল : দাসুন শানাকা (অধিনায়ক), পাথুম নিশাঙ্কা, দিমুথ করুণারত্নে, কুসল পেরেরা, কুসল মেন্ডিস, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, চারিথ আসালঙ্কা, সাদিরা সামারাবিক্রমা, দুনিথ ওয়েলালাগে, মহেশ থিকশানা, মাথিশা পাথিরানা, কাসুন রাজিথা, দুশান হেমন্থা, বিনুরা ফার্নান্দো ও প্রমোদ মাদুশান।

পাকিস্তান দল : বাবর আজম (অধিনায়ক), শাদাব খান, মোহাম্মদ রিজওয়ান, সাউদ শাকিল, ফখর জামান, আবদুল্লাহ শফিক, ইমাম-উল-হাক, সাউদ শাকিল, সালমান আলি আঘা, ইফতিখার আহমেদ, মোহাম্মদ নাওয়াজ, উসামা মীর, হারিস রউফ, নাসিম শাহ, শাহিন শাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ হারিস, ফাহিম আশরাফ, মোহাম্মদ ওয়াসিম।

সূত্র : বাসস