একটি দলের ওপর অনেক দেশের চাপ অগ্রহণযোগ্য

Slider বাংলার মুখোমুখি

ভারতের পর বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার উল্লেখ করেছেন সফররত রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে তিনি বলেন, অনেক দেশ বাংলাদেশের একটি দলের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, যা অগ্রহণযোগ্য। গতকাল রাতে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ যৌথ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রাশিয়া ছায়াযুদ্ধ করছে। কিন্তু এ অঞ্চলে এ ধরনের কোনো ছায়াযুদ্ধ দেখতে চায় না বাংলাদেশ।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বাংলাদেশের ওপর যে চাপ প্রয়োগ করেছে, আমরা খুশি যে আমাদের বাংলাদেশি বন্ধুরা তাদের জাতীয় স্বার্থ অনুযায়ী পররাষ্ট্রনীতি বজায় রেখেছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকার মাটিতে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্য করলেও বাংলাদেশ ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ নীতিতে অটল ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশসহ আরও একাধিক দেশের ‘নিরপেক্ষ’ পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেনকে রাশিয়ার এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। ভারসাম্যমূলক পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখি। আমাদের জাতীয় স্বার্থ অনুযায়ী পরিচালিত হই। এখন পর্যন্ত আমরা স্বাধীন, সার্বভৌম পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছি। উদ্দেশ্য হচ্ছে আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান খুব পরিষ্কার। অন্য অনেক অঞ্চলে ছায়াযুদ্ধ চলছে। কিন্তু এ অঞ্চলে তা দেখতে চাই না। আমরা মনে করি, সব সমস্যার সমাধান আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হতে হবে।
দুদিনের সফরে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা এসে পৌঁছান রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে লাভরভের সাক্ষাৎ হবে। এই প্রথমবারের মতো রাশিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফর করছেন। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সব বিষয় নিয়ে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক সংলাপ আরও বাড়ানোর বিষয়ে দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে।
আবদুল মোমেন বলেন, আমরা আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট, রোহিঙ্গা সংকট, ব্যবসা-বাণিজ্য, শুল্কমুক্ত বাজার অধিকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা সব ধরনের সমস্যা সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে নিরসনের পক্ষে। আমাদের আলোচনার মধ্যে ছিল রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটি মোটামুটি নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হবে। রোহিঙ্গা এবং ওই সমস্যা সমাধানে রাশিয়া একাত্মতা প্রকাশ করেছে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়া উচিত এবং এ বিষয়ে রাশিয়ার সহায়তা চেয়েছি বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান।
আবদুল মোমেন বলেন, তারা আমাদের বলেছে, নিউক্লিয়ার জ্বালানি টেকসইভাবে আমাদের দেওয়া হবে। তা ছাড়া তারা বলেছে, রাশিয়া থেকে আমরা এলএনজি আনতে পারি। তারা প্রস্তাব করেছে, তাদের দেশ থেকে ক্লোরাইড নেওয়ার।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনাকে সমর্থন করি। আমরা বিশ্বাস করি, এর সঙ্গে জড়িত অন্যপক্ষের একটি সমাধান খুঁজে বের করার জন্য শুধু সহায়ক পরিবেশ তৈরি করার কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। রাশিয়ান ফেডারেশন এ বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবে। তবে কিছু শক্তি একটি পক্ষের ওপর চাপ দিচ্ছে এবং তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে। এটি উল্টো ফল দেবে এবং অগ্রহণযোগ্য। রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট বিষয়ে তিনি বলেন, এটি হচ্ছে একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প। আজকে আলোচনায় দেখলাম যে, এটি সময়সূচি অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আগামী অক্টোবরে নিউক্লিয়ার ফুয়েল বাংলাদেশে আসবে।
বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে কিছু সম্ভাবনাময় প্রকল্প নিয়ে কাজ হচ্ছে। গ্যাজপ্রম এ বিষয়ে কাজ করছে এবং বাংলাদেশে ২০টি কূপ খনন করেছে। এ নিয়ে আরও কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে। সম্ভাব্য এলএনজি আমদানির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আলোচনা করছে। এ ছাড়া গম ও সার সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রতিবছর এ বিষয়ে আলোচনা না করে একটি স্থায়ী ব্যবস্থায় রূপ দেওয়া যায় কিনা ভাবা যেতে পারে। রাশিয়া এবং বাংলাদেশ জাতিসংঘ, আসিয়ান ফোরামসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে একসঙ্গে কাজ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে চীনের পাশাপাশি সন্দেহ রয়েছে রাশিয়ারও। লাভরভ এমন প্রশ্নে বলেন, আমরা যদি বিশ্লেষণ করি তাহলে পরিষ্কার দেখতে পাব, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল ব্যবহার করছে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে চীনকে ঠেকানো এবং রাশিয়াকে পৃথক করে রাখা। তিনি বলেন, আমরা সম্মত হয়েছি ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরে রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশীদার বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্য ছিল ২০০ কোটি ডলারের ওপর এবং গত বছর প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *