মাত্র ৬০ টাকায় পেট ভরে খাবার।

Slider গ্রাম বাংলা


রমজান আলী রুবেল, শ্রীপুর, গাজীপুর প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের শ্রীপুর তরী চাইনিজ এন্ড বাংলা রেস্টুরেন্টে আয়েশ করে বসে কেউ ভাত, ডাল, আলু, মাছ, শাক ভর্তা, আবার কেউ সঙ্গে মাছ-মাংসও খাচ্ছে। সবার মুখ থেকে তৃপ্তির ঝলক যেন ঠিকরে বেরোচ্ছে। এমনই এক আয়েশি পরিবেশে সীতা তাপ নিয়ন্ত্রিত অন্ততপক্ষে মাত্র ৬০ টাকায় পেট ভরে খাবারের ব্যস্ততার মাঝেই গল্প জমে উঠল শ্রীপুরের জৈনাবাজার এলাকার তরী রেস্টুরেন্টে।
৬০ টাকায় পেট ভরে খাবার। প্যাকেজ।
ভাত, দুই প্রকার ভর্তা, মাছ/মুরগী, ডাল, মাত্র ৬০ টাকা।
জানা গেল, প্রতিদিন বাজার থেকে চাল, ডাল, শাক-সবজি, মাছ, মাংস ও ডিম কিনে আনেন তরী রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদ্দাম হোসেন অনন্ত।
ভোর সাড়ে ৫ টা থেকে রান্নাবান্না শুরু করেন। কেজি বিশেক চালের ভাত, তিন-চার কেজি সবজি (বেগুন, আলু, পটল, কাঁকরোল, টমেটো, ফুলকপি, গাজর ইত্যাদি) ও মাছের (বিশেষ করে রুই, টেংড়া, কৈ, তেলাপিয়া, টাকি, শোল, শিং, আইর, রুপচাদা মাছ) তরকারি, গরু ও দেশী মুরগির মাংস, হাস, বিভিন্ন ভর্তা এবং কয়েক ডজন ভুনা তরকারি রান্না করেন। রান্না শেষ হতেই ক্রেতা আসার আগেভাগে প্লেটে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা খাবার।

তরী রেস্টুরেন্টে ভাতের ৬০ টাকার মধ্যে পেট পুরে খাওয়ার ‘প্যাকেজ’ রয়েছে। তিনতলা বিশিষ্ট এই রেস্টুরেন্টে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮০-১০০ জন ক্রেতা খাবার খেতে ভিড় জমান রেস্টুরেন্টে। ভাত-তরকারি রাখার জন্য ১টি হাণ্ডি স্ট্যান্ড, ১২৫টি উন্নত মানের সিরামিক্স এর থালা, চারটি হাত মুখ ধোয়ার পানির বেসিং , ১২৫টি গ্লাসসহ আরো কয়েকটি আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র দিয়ে সাজানো শীতা তাপ নিয়ন্ত্রিত তরী রেস্টুরেন্ট।

রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদ্দাম হোসেনের অন্তত জানান। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাজারে কাজ করা শ্রমিক থেকে শুরু করে অফিসার, নিরাপত্তারক্ষী, হকার, ছিন্নমূল মানুষ, নিম্নআয়ের লোকজন এখানে খাওয়া-দাওয়া করেন। অল্প টাকায় তারা এখানে পেট পুরে মজা করে খান।

দেখা গেল রেস্টুরেন্টে বসে মাছের ঝোল দিয়ে আনন্দ নিয়ে ভাত খাচ্ছেন রহিম মিয়া। পেশায় তিনি একজন শাক-সবজির ফেরিওয়ালা। সাইকেলে করে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে শাক-সবজি ফেরি করে বিক্রি করেন। তিনি এখানে প্রায়ই খেতে আসেন।

কথায় কথায় জানালেন তরি রেস্টুরেন্টের রান্না খুবই চমৎকার। তিনি বলেন, আমাদের মতো গরিব মানুষের জন্য এসব খাবারের রেস্টুরেন্ট বড় ভরসার জায়গা এবং খাবারের দামও কম। হাসতে হাসতে তিনি সাথে যোগ করলেন, ‘ভালো হোডেলে খাওনের স্বাদ তো জাগেই, কিন্তু সেই সামর্থ্য নেই। তাই কইতে পারেন এইডাই আমগো কাছে ফাইভ স্টার হোডেল।
এখানে পাওয়া যায় মাছ-ভাত-৬০ টাকা, ডিমণ্ডভাত ২০ টাকা, ভর্তা-সবজি-ভাত ৩০-৪০ টাকা, মুরগি-ভাত টাকা এবং গরু দিয়ে ভাত ১০০-১৩০ টাকা, সঙ্গে পাতলা ডাল ফ্রি। অতিরিক্ত ভাতের ক্ষেত্রে হাফ ৫ টাকা, ফুল ১০ টাকা।

প্রতিদিন তিনি ১৫-২০ কেজি চালের ভাত বিক্রি করেন। বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে ক্রেতাদের খাবার সরবরাহ করতে ব্যস্ত তরী রেস্টুরেন্ট।
তরি চাইনিজ এন্ড বাংলা রেস্টুরেন্টের ৬০ টাকা প্যাকেট ছাড়াও থাকছে। চাইনিজ খাবার, শিক কাবাব, মাটন বটি কাবাব, তান্দরী চিকেন, চিকেন, নান, বার্গার, বারবিকিউ, গ্রিলচিকেন সহ ২০০ রকমের দেশি-বিদেশি খাবার।

ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এরকম ভিন্নধর্মী আয়োজনে মুগ্ধ হয়েছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা যাত্রী সাধারণ। যেখানে মহাসড়কের পাশে হোটেল রেস্টুরেন্টের মধ্যে সাধারণ মানুষের গলা কেটে টাকা নিচ্ছে, সেখানে তরী রেস্টুরেন্টের এরকম আয়োজনে মুগ্ধ সবাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *