টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে অসুস্থ রাকিবের লাশ তিন দিনের মাথায় পেল পরিবার

Slider টপ নিউজ

Gazipur-Kishor-Unnoyon-Dbod

টঙ্গী: বি-বাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার আজমতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে কিশোর রাকিব(১৭)। তিন ভাই, তিন বোন ও মা-বাবার সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকত। বাবা সুমন মিয়া অটোরিক্সা চালায় ভাড়ায়। মা মানুষের বাড়িতে কাজ করেন। অভাবের সংসারে স্কুল পড়–য়া রাকিব কখন যে খারাপ লোকদের সাথে মিশে গেছে তা জানতো না বাবা মা।

রাকিবের বাবা সুমন মিয়া বলেন, সাড়ে তিন মাস আগে আমার ছেলেকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যায় স্থানীয় আহমেদাবাদ ও আজমতপুর এলাকার জনৈক শামীম, আলমগীর ও রাজা মিয়া নামে তিন ব্যাক্তি। এরপর থেকে ছেলে নিঁখোজ। দশ দিন পর ওই তিন ব্যাক্তিকে মামলার ভয় দেখালে তারা বলেন আপনার ছেলে নিঁখোজ হয়েছে। আমরা জানিনা। কিন্তু পরস্পর শুনতে পারি, আমার ছেলেকে মাদক দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে ওই তিন ব্যাক্তি। তারপর থেকে আমি ও আমার পরিবার আমার ছেলে রাকিবকে বিভিন্ন থানা ও আদালতে খুঁজতে থাকি। রাকিবের বাবা সুমন মিয়া বলেন, বৃহসপতিবার(২৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১২টার সময় একটি মোবাইল ফোন থেকে ফোন আসে। ফোনে আমাকে বলা হয়, ঢাকা মেডিকেলে যেতে। আমি আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে দেখি আমার ছেলে মৃত। ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তারদের বরাত দিয়ে সুমন মিয়া জানান,ডাক্তাররা বলেছেন, সাপের কামড়ে তার ছেলে মারা গেছে। বৃহসপতিবার থেকে রাকিবের বাবা মা সন্তানের লাশের অপেক্ষায় বসে থাকেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশ কাটা ঘরের সামনে।

সুমন মিয়ার ভাষ্য, শুক্রবার(২৫ আগস্ট) বিকেলে হাসপাতাল থেকে বলা হয়, লাশ দেয়া যাবে না। কাগজপত্রে সমস্যা আছে। এসময় ডাক্তারের কথা বলে কে বা কাহারা রাকিবের বাবা সুমনের কাছে লাশ নিতে হলে এক লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানায়। এই কথা রাকিবের বাবা সুমন সকলকে জানায়। কালের কন্ঠকে সুমন মিয়া বলেন, লাশ নিতে এক লাখ টাকা লাগবে। আমি তো খাবারই পাই না। এক লাখ টাকা পাব কই।

রাকিবের বাবা সুমন মিয়ার অভিযোগ, এক এক সময় এক এক রকম কথা বলা হচ্ছে আমাকে। ডাক্তারা বলছেন, সাপের কামড়ে আমার ছেলে মারা গেছে। আবার ছেলের মাথায় জখমেরও চিহৃ আছে। সুমনের অভিযোগ, তার ছেলেকে মারপিট করে মেরে ফেলা হয়েছে।

শনিবার(২৬ আগস্ট) বেলা ১২টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে রাকিবের মা রোজিনা আক্তারের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয় বলে জানান রাকিবের চাচা সোহেল মিয়া। লাশ পেয়ে বিকেলে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয় বলে জানান তিনি।

এদিকে টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আহিয়াতুজ্জামান বলেন, এই ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা ও ঢাকার শাহবাগ থানায় একটি জিডি হয়েছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তর গাজীপুরের উপ-পরিচালক আনোয়ারুল করিম বলেন, লাশ নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। টঙ্গী থানা থেকে কাগজপত্র নিতে দেরী হয়েছে। আমি ও তত্ত্বাবধায়ক উপরের নির্দেশে শুক্রবার রাতে ঢাকা মেডিকেলে গিয়েছিলাম। শাহবাগ থানায়ও গিয়েছিলাম। জিডি করার পর শনিবার (২৬ আগস্ট) ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। থানা পুলিশের সমন্বয়হীনতার কারণে লাশের ময়নাতদন্ত শেষ হতে সময় লেগেছে বলে তিনি জানান। মৃত্যুর কারণ হিসেবে আনোয়ারুল করিম বলেন, ডাক্তাররা লিখেছেন, মিরকি(খিঁচুনি) রোগে তার মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে এই কর্মকর্তা বলেছিলেন, টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে অসুস্থ হওয়ার পর হাসপাতালে তা’ক্ষনিক চিকিৎসা দিলে হয়ত ছেলেটো ভালো হয়ে যেতো। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই ধরণের রোগী টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার মেডিকেলে নিলে না দেখেই ডাক্তাররা সাথে সাথে রেফার করে দেয়। ফলে রোগীরা চিকি’সা পায় না।
টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা: জাহাঙ্গীর আলম কালের কন্ঠকে বলেন, এ ধরণের অভিযোগ সত্য নয়। এরকম একজন রোগী বৃহসপতিবার সকালে এসেছিল বলে শুনেছি। তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।

টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) ডা: তারিক হাসান বলেন, এমন কোন রোগী আসেনি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, হাসপাতাল রেজিস্টারে রাকিবের নাম রোগী হিসেবে লেখা আছে। হাসপাতালের রেজিস্টার মূলে রাকিব নামের রোগী আসার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয় যাহার রেজিস্টার নং ৭৫৬৩/০১ তাং ২৩ আগস্ট ২০২৩ লেখা রয়েছে।

টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম জানান, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে হাজতি রাকিবের মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। তদন্ত শেষে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

বৃহসপতিবার(২৪ আগস্ট) সমাজসেবা বিভাগ পরিচালিত টঙ্গীতে অবস্থিত কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের হাজতি রাকিব(১৭) টঙ্গীতে অসুস্থ হওয়ার পর ঢাকা মেডিকেলে তার মৃত্যু হয়। তার পিতার নাম সুমন মিয়া। বাড়ি বি-বাড়িয়া জেলার আখাউড়া থানার আজমতপুর গ্রামে। রাকিবের বাবার অভিযোগ তার ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে কিন্তু ডাক্তাররা তাকে জানিয়েছেন, সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে জানান সুমন মিয়া। কিন্তু কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র বলছে, ডাক্তাররা বলেছেন মিরকি(খিচুনি) রোগে তার মৃত্যু হয়েছে।

কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র সূত্র জানায়, রাকিব রাজধানী ঢাকার বিমান বন্দর থানার একটি মাদক মামলার আসামী হিসেবে টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে ৫ম তলায় বন্দি ছিলো। বুধবার (২৩ আগস্ট) রাতে অসুস্থবোধ করলে তাকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে প্রথমে টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল, পরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও সবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে বৃহসপতিবার(২৪ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে রাকিবের মৃত্যু হয়।

কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের গোপন সূত্র জানায়, রাকিব অসুস্থ হওয়ার পর তার কোন খবর নেয়নি কর্তৃপক্ষ। কেন্দ্রের ভেতরে কোন ডাক্তারও রাকিবের কাছে আসেনি। অবশেষে অবস্থা খারাপ দেখে হাসপাতালে নেয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *