হাতজোড় করে দাঁড়াবেন না, মাথা নত করে কুর্নিশ করবেন না : মুন্সীগঞ্জে বিচারক

Slider বাংলার আদালত


মুন্সীগঞ্জ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইফতি হাসান ইমরান তার এজলাসে বিচারপ্রার্থীদের জন্য লিখছেন, হাতজোড় করে দাঁড়াবেন না, স্বাভাবিক থাকুন। একই সাথে তিনি আইনজীবীদের উদ্দেশে লিখছেন, অনুগ্রহ করে মাথা নত করে কুর্নিশ করবেন না। তার এমন মহতি আচরণে বিচারপ্রার্থী ও মুন্সীগঞ্জ জেলা আইনজীবীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

বুধবার (১৬ আগস্ট) তিনি এমন কথা লিখে তার সেরেস্তায় লাগিয়ে দেন। বৃহস্পতিবার মুন্সীগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সদস্য ও আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীদের লেখাগুলো দৃষ্টি গোচর হলে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই লেখা ছড়িয়ে পড়লে তাতেও বিচারককে স্যালুট জানানো ও প্রশংসা করা হচ্ছে।

মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ-ই-হাসান তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজে লিখেন, ‘‘আজ মুন্সীগঞ্জের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইফতি হাসান ইমরানের আদালতে দুটি লেখা চোখে পড়ল। তার এজলাসের সামনে লিখা, ‘অনুগ্রহ করে মাথা নত করে কুর্নিশ করবেন না।’ আর বিবাদী বা আসামির ডকে লেখা, ‘হাতজোড় করে দাঁড়াবেন না। স্বাভাবিক থাকুন।’ তার এ উন্নত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ আমাকে বিমুগ্ধ করেছে। আড়াই শ’ বছরের বৃটিশ ঔপনিবেশিক সামন্তবাদী প্রথা তিনি তার আদালতে ভেঙে দিলেন।’

মুন্সীগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সদস্যরাও বিচারকের ওই লিখাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

মুন্সীগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজী নজরুল ইসলাম অসীম বলেন, ‘বিচারকের এমন মহতি লেখাটি আমার ভালো লেগেছে। আমি তাকে সাধুবাদ জানাই।’

মুন্সীগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: জাকারিয়া মোল্লা বলেন, ‘বিচারক যে কথাগুলো আদালতে লিখেছেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিচারকের এই মহতি কথাগুলোতে আমি সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি।’

মুন্সীগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার দৃষ্টিকোন থেকে মনে হয়েছে যে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয় যেই উক্তিটি এখানে লিখেছেন, তা একটা বিচারপ্রার্থীর জন্য ইতিবাচক। তাছাড়া বিচারপ্রার্থীরা সাধারণত আদালতে প্রাঙ্গনে এসে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে এমন লেখাটি যখন দেখবে, তখন তার দৃষ্টিকোন থেকে বিচারকদের প্রতি ও আদালতের প্রতি সম্মান আরো বৃদ্ধি পাবে। এতে জনগণ বিচারকদের কাছ থেকে আশানরুপ সেবা পাওয়ার প্রত্যাশা করবে। আমরা যারা আদালতকে সহয়তা করি, আমাদের কাছেও এ শব্দগুলো ইতিবাচক মনে হবে। জনসাধারণের জন্য একটি ভালো লক্ষণ বলে আমি মনে করি।’

ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো: সুমন ভূইয়া বলেন, ‘স্যার ব্যাক্তিগতভাবে পছন্দ করেন না, ‘‘কেউ হাতজোড় করে দাঁড়ালে তিনি হাত নামিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘একজন বিচারপ্রার্থী আমার কাছে আসছে বিচারের জন্য। সে মাথানত করে রাখবে কেন? আমি তো আল্লাহ বা খোদা না। আদালতের কাছে সে বিচার চাইতে আসছে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘এই বিষয়গুলো স্যারের ভালো লাগে না। এ জন্য তার এমন বক্তব্য লিখে আমি ও স্যার মিলে সেরেস্তায় লাগিয়ে দিয়েছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *