সেই দিনের ভয়াবহ হামলার বর্ণনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

Slider জাতীয়

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার লক্ষ্য ছিল আমাকে হত্যা করা। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানবঢাল রচনা করে আমাকে রক্ষা করেছিলেন।’

আজ রোববার সকালে নবনির্মিত ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ভবন’ ও ‘তথ্য কমিশন ভবন’ এবং ‘বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ’ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামীকাল ২১ আগস্ট। এই একুশে আগস্ট আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা একটি র‍্যালি করছিলাম। কারণ তার কিছুদিন আগে সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বোমা হামলা-সন্ত্রাস চলছিল। এর প্রতিবাদে আমরা র‍্যালি করছিলাম। কিন্তু সেই র‍্যালিতে প্রকাশ্যে গ্রেনেড হামলা করা হয়। সেই গ্রেনেডের আঘাতে আমাদের নারীনেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতাকর্মী এবং দুজন অজ্ঞাত নিহত হন। লক্ষ্যটা ছিল আমি এবং আমরা যারা ট্রাকে যেই মঞ্চ করা হয়েছিল, সেই মঞ্চে যারা ছিলাম তাদের হত্যা করা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানবঢাল রচনা করেই আমাকে রক্ষা করেছিলেন। এটা বোধহয় আমাদের ভাগ্য যে ওই ট্রাকে কোনো গ্রেনেড পড়েনি, ট্রাকের সঙ্গে লেগে সেটা মাটিতে পড়ে যায়। আমাকে যে মানবঢাল হয়ে রক্ষা করেছিলেন মোহাম্মদ হানিফ তার সমস্ত মাথায় স্প্লিন্টার পড়ে। ওই দিন আমাদের অনেকে আহত হন এবং মারা যান।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সব শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখনই সরকার গঠন করেছি জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছি। আমি যখন ৯৬ সালে প্রথম সরকার গঠন করি তখন এ দেশে কেউ কম্পিউটার ব্যবহার করত না। সমস্ত টেলিযোগাযোগ অ্যানালগ ছিল, ডিজিটাল ছিল না। আমরাই ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করি।’

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা মার্কিন কংগ্রেসম্যানের

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতাকে হত্যা করে, সংবিধান লঙ্ঘন করে, অবৈধভাবে মার্শাল ল জারি করে যারা সরকারে এসে ছিল তাদের মাথায় এসব ছিল না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ক্ষমতাকে ভোগ করা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অত্যাচার করা এটাই তারা জানতো। গণমানুষের কথা তারা কখনও ভাবেনি। সেটা জিয়াউর রহমানের সরকার হোক, এরশাদ সরকার বা খালেদা জিয়ার সরকার হোক।’

বিএনপির সময় তথ্য প্রযুক্তি খাতে কিছুই হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে সব ক্ষেত্রে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জনগোষ্ঠী গড়ে তুলছি। তথ্য চাওয়া ও পাওয়া মানুষের অধিকার। আওয়ামী লীগ সরকার মোবাইল ফোনকে সার্বজনীন করেছে।’

সিনেমা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কলকাতা থেকে এই উপমহাদেশে সিনেমার যাত্রা শুরু। আমাদের সিনেমা শিল্পের যাত্রা জাতির পিতার হাত ধরে। উনি শিল্পমন্ত্রী থাকা অবস্থায় এফডিসি নির্মাণ করেন।’

তিনি বলেন, ‘সিনেমায় জনসাধারণের জন্য বার্তা থাকতে হবে। মাঝে পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখা যেত না। এখন তার পরিবর্তন হয়েছে। এখন আধুনিক প্রযুক্তিতে সিনেমা দেখানো হয়। হল মালিকদের সিনেপ্লেক্স তৈরির সুযোগ করে দিয়েছি। এখন ভালো সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে, বিদেশে আমাদের সিনেমা প্রসংশা পাচ্ছে। চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সুবিধার ব্যবস্থা আমরাই করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আমরা গঠন করেছি। যন্ত্রশিল্পী থেকে শুরু করে সব শিল্পীদের সহায়তা করেছি। মানসম্মত সিনেমা নির্মাণের সব ব্যবস্থা করেছি। এফডিসি কমপ্লেক্স করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি দেশবাসীর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাই যে, তারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে বারবার তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন বলেই এ কাজগুলি আমরা করতে পেরেছি। বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে আজ ২০২৩ ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক সরকার চলছে, দেশে একটা স্থিতিশিলতা চলছে। যদিও এ সময়ে আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মানুষের সৃষ্টি দুর্যোগ, অগ্নি সন্ত্রাস অনেক কিছুই মোকাবেলা করতে হয়েছে। কিন্তু তার পারেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে সেটাই আমরা চাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *