রেলের ই-টিকিটে বিপর্যয়, ভোগান্তি চরমে

Slider জাতীয়

Bangladesh_Railway_BG_681264847

ঢাকা: বিরক্তির অপর নাম হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকিটিং। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও যাত্রীরা অনলাইনে টিকিট পাচ্ছেন না।

অনলাইনে টিকিট কাটতে গিয়ে যাত্রীরা দেখছেন কখনো সার্ভার অফলাইনে, আবার কখনো ক্র্যাশ করেছে। সাময়িকভাবে কোনো কোনো যাত্রীর কার্ডের টাকাও খোয়া যাচ্ছে। ঈদে ট্রেনের টিকিট কাটতে গিয়ে এমন অনেক বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন যাত্রীরা।

সহজ ও ঝামেলামুক্তভাবে টিকিট কাটার জন্য রেলওয়ে অনলাইনে এ সুবিধাটি চালু করলেও তা এখন যাত্রীদের কাছে মহাভোগান্তির নাম। ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার দিন থেকে এ পর্যন্ত টানা সকাল-বিকেল চেষ্টা করেও অনলাইনে ট্রেনের টিকিট মেলাতে পারেননি অনেক যাত্রী। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন অনেকেই। যাত্রীদের পক্ষ থেকে রেলওয়ের এ অনলাইন সেবাটিতে ‘কার্যত অচল’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে।

এজলব টেকনোলিজস বাংলাদেশ লিমিটেড-এর প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার মোস্তাফিজ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের অগ্রিম টিকিট কাটতে গিয়ে দেখি কখনো সার্ভার ক্র্যাশ হয়ে আছে, কখনো অফলাইনে। সহজ ও ঝামেলামুক্ত টিকিট বিক্রির জন্য ই-টিকিটিং হলেও অনলাইনে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট কাটতে গিয়ে যাত্রীদের ঘাম ঝরে যায়!

তিনি বলেন, রেলওয়ে যে প্রতিষ্ঠানকে টিকিটিংয়ের দায়িত্ব দিয়েছে তাদের কারিগরি অদক্ষতাই দেখা যাচ্ছে। পিক আওয়ার সার্ভার লোড নিতে পারে না। অনলাইনে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটি রেলের কাছ থেকে বড় দায়িত্ব নিয়ে তাদের সাইট উন্নয়নের কোনো কাজই করছে না।

অনলাইনে টিকিট কাটতে গিয়ে ব্যাপক হয়রানির শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, টিকিট না কনফার্ম করে আমার কার্ড থেকে টাকা গচ্ছা গিয়েছিলো; যদিও কয়েকদিন পর অ্যাকাউন্টে টাকা ফেরত এসেছে। রেলের ই-টিকিটিং মানেই এখন এক অনিশ্চয়তার নাম।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র শিক্ষার্থী মেহরুন নওশাবা বলেন, ১৩ ও ১৪ তারিখের টিকিটের জন্য অনলাইনে চেষ্টা করে পাইনি। সার্ভারই অনেকসময় কাজ করে না। অভিযোগ জানানোর জন্য অনলাইন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটির কোনো নাম্বারই দেওয়া হয়নি।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ট্রেনের ‘কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত আসন সংরক্ষণ ও টিকেটিং (সিএসআরটি)’ ব্যবস্থা পরিচালনা করছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস)। ই-টিকিট বিক্রি পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নকাজও করছে এ প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি সেলফোন ও ইন্টারনেটে টিকিট বিক্রি এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের বিদ্যমান ওয়েবসাইট ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের দায়িত্বও পালন করছে সিএনএস।

বাংলাদেশ রেলওয়ে কম্পিউটারাইজড টিকেটিং ব্যবস্থা চালু করে ১৯৯৪ সালে। ওই সময় এর কাজ পায় টেকনোহ্যাভেন। পরে দায়িত্ব পায় ড্যাফোডিল সফটওয়্যারস। এরপর সিএনএস ও ড্যাফোডিল যৌথভাবে কাজ করে। বর্তমানে আট বছর ধরে সিএনএস অনলাইনে টিকিটসহ পুরো টিকিটিংয়ের কাজ এককভাবে করছে।

অভিযোগ রয়েছে, ঠিকমতো কমিশন নিলেও রেলের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার শর্ত পালন করেনি সিএনএস।

রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা  জানান, প্রশিক্ষণ পেলে রেলের কর্মীরাই এই কাজ করতে পারতেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির অনলাইন সেবার সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেমন, এত দিনেও এক স্থানের টিকিট অন্য স্থান থেকে ইস্যু করার মতো জরুরি ব্যবস্থাটি চালু হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, সিএনএসের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন রেল কর্মকর্তাদের যোগসাজশ এবং ‘কমিশন-বাণিজ্যের’ কারণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি ঠিকমতো শর্ত পালন না করেও কমিশন পেয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যে কাজ ১৫-২০ জন লোক দিয়ে করাচ্ছে, প্রায় ২০ হাজার জনবল থাকলেও রেলওয়ে নিজে তা করার উদ্যোগ নিতে পারছে না। নিম্নমানের সেবা দিয়েও বাংলাদেশ রেলওয়েতে প্রভাব বিস্তার করে আছে সিএনএস বিডি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *