বাজার নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা বাড়াচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

Slider বাংলার মুখোমুখি


সরকারি হিসাবে জুলাই মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে পৌনে ১০ শতাংশ। দেশে এখন রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে ১৭টি অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্য। একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি সব মিলিয়ে ভোক্তার নাভিশ্বাস এখন চরমে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার আভাস দিয়েছে সরকার। বাজারে অস্থিরতা তৈরির অভিযোগে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে প্রতিযোগিতা কমিশন। বাজার মনিটরিংয়ে অভিযান বাড়াবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া রপ্তানি বাড়িয়ে বাজারে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও রয়েছে। পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে চলতি বছরের মধ্যে ডিজিটাল বাণিজ্য আইন ২০২৩-এর খসড়া প্রণয়ন করতে চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, শুকনো মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনিয়া, জিরা, আদা, হলুদ, তেজপাতা, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, চিনি ও খাবার লবণের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়েছে। এসব পণ্য কিনতে চাপে আছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরাও। প্রধান খাদ্যপণ্য চাল, আটা ও ময়দা বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।

বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ৭ থেকে প্রায় ৬২ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে আমদানি করা ভোগ্যপণ্যের।

ডিমের বাজারে অস্থিরতার জন্য করপোরেট সিন্ডিকেটকে দায়ী করছে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। সংগঠনটির সভাপতি সুমন হাওলাদার জানিয়েছেন, প্রান্তিক পর্যায়ের অধিকাংশ ছোট ছোট খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে সরবরাহ-ঘাটতি তৈরি হয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। আর সরকারি তদারকি না থাকায় পোলট্রি শিল্পে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্য বেড়েছে, যার খেসারত দিচ্ছে জনগণ।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তা নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২৫০টি বাজার মনিটরিং শুরু করতে চায় মন্ত্রণালয়। ডিজিটাল বাণিজ্য আইন ২০২৩-এর খসড়া প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন দেশ ও জোটের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে অগ্রাধিকারভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ; রপ্তানি নীতি ২০২৩-২০২৬ প্রণয়ন করা; তৈরি পোশাক কারখানায় কমপ্লায়েন্স অর্জনে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ওআইসি সদস্যভুক্ত দেশগুলোর পাশাপাশি ডি-৮ দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে অগ্রাধিকারভিত্তিক আলাদা দুটি চুক্তি কার্যকর করেছে। এর ফলে এসব দেশে কম শুল্কে পণ্য রপ্তানি সম্ভব হবে। রপ্তানি নীতি ও আমদানি নীতি আদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে সম্ভাবনাময় ট্রেড পার্টনারদের বাজারে পণ্য ও সেবার অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার অর্জন করা হবে।

জানা গেছে, রপ্তানি নীতি ২০২১-২০২৪ অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ৮ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার কথা রয়েছে। এর বিপরীতে চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার ২০০ কোটি ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। এর বিপরীতে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *