৪ দিন ধরে বিচ্ছিন্ন রুমা-থানচি

Slider চট্টগ্রাম

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে বান্দরবানের চিম্বুক এলাকায় পাড়ায় ধসে পড়েছে সড়কের বিশাল অংশ। গত সোমবার বিকেলে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে চিম্বুকের ৩১ কিলোমিটার পাথুই পাড়া এলাকায় সড়কের এই বিশাল অংশটি ধসে পড়ে। শুধু তাই নয় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ধসে পড়েছে পাহাড়ের মাটি। ফলে চারদিন ধরে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে থানচির সঙ্গে বান্দরবান সদরের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এছাড়াও বান্দরবান রুমা সড়কে বিভিন্ন অংশে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে রুমার সঙ্গেও যান চলাচল সাময়িক বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে থানচি ও রুমার স্থানীয় বাসিন্দা ও সাধারণ যাত্রীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টানা বর্ষণে পাহাড়ী ঢলে চিম্বুকের ৩১ কিলোমিটার এলাকার পাথুই পাড়া এলাকায় সড়কের একটি বিশাল অংশ ধসে পড়ে। এতে জেলা শহরের সঙ্গে থানচির সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এরফলে যাতায়াত করতে না পারায় বিপাকে পড়েছে ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ও খাদ্যদ্রব্য আনতে না পারায় বিদ্যামনি পাড়া, ভিনতে পাড়া, শীলাঝিড়ি, পাথুই পাড়া, পোড়া বাংলোসহ থানচি উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম দুর্ভোগ। এছাড়াও রুমা সড়কের ওয়াইজংশনের কয়েক কিলোমিটার দূরে, মুরুং পাড়ার মুখে’সহ সড়কটির কয়েকটি স্থানে পাহাড় ধসে পড়েছে। সকড়ের বিভিন্ন পয়েন্টে ভেঙে গেছে রাস্তাও। সড়ক বিধ্বস্ত হওয়ায় গত সোমবার থেকে রুমা ও থানচি উপজেলার সঙ্গে চারদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। সড়কের কোথাও ২০ ফিট, আবার কোথাও ৪০ ফিট পর্যন্ত সড়ক ধসে পড়েছে কয়েকশ’ ফুট পাহাড়ের নিচে।

স্থানীয় বাসিন্দা রিংরাও ম্রো বলেন, ‘থানচি সড়কের বেশকটি স্থানে বৃষ্টিতে সড়ক ধসে পড়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে চারদিন ধরে। প্রয়োজনীয় কাজ থাকার পরও বান্দরবান যেতে পারছিনা। এমনকি নিত্য প্রয়োজনীয় কোনো জিনিস বাজার থেকে আনতে পারছিনা। পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে আছি। জানিনা কখন রাস্তা ঠিক হয়, দ্রুত রাস্তা মেরামত করে দিলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হবে।’

চিম্বুক এলাকার আরেক বাসিন্দা থোয়াই হ্লা মং বলেন, ‘রুমা ও থানচি সড়কের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে রাস্তার উপর পড়েছে। অনেক জায়গায় রাস্তা ধসে গিয়ে দুভাগ হয়ে গেছে। পায়ে হেঁটে যাওয়ার ব্যবস্থাও নেই কোথাও কোথাও। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় থানচিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই দ্রুত রাস্তা মেরামত করে যান চলাচলের দাবি জানাই।’

এ বিষয়ে থানচি উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) সুজন মিয়া বলেন, ‘থানচি সড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়ক এবং পাহাড় রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্য বিদ্যামনি পাড়া, ভিনতে পাড়া, শীলাঝিড়ি, প্রাতুই পাড়া কয়েকটি স্থানে সড়কে বেশি ক্ষতি হয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। কবে নাগাদ রাস্তাটি স্বাভাবিক হবে বলা মুশকিল।

এদিকে টানা তিনদিনের বন্যায় এখনো বিপর্যস্ত পাহাড়ি জেলা বান্দরবান। জেলার লামা রুমা রোয়াংছড়িসহ সবগুলো উপজেলার এখন একই চিত্র। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট ফসলি জমি মুরগির খামার। নষ্ট হয়ে গেছে আসবাবপত্র টিভি ফ্রিজসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি। ভেসে গেছে পুকুর জলাশয়ের মাছ। শুধু তাই নয় বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর স্থানীয়দের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। জেলায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট। শহরের বিভিন্ন এলাকায় পাঁচদিন ধরে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ ও ইন্টারনেট সেবা।

বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, কয়েকদিনের টানা বর্ষণের কারণে সড়কগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্য রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, লামা এবং বান্দরবান-চট্টগ্রাম ও বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কগুলোর ক্ষতির পরিমাণ বেশি। যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখতে কাজ শুরু করেছে সড়ক বিভাগ। মোটামুটি সবগুলো রুটে যানবাহন চলাচল করতে পারছে। শুধুমাত্র রুমা ও থানচি উপজেলা সড়ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে। থানচি সড়কের চিম্বুক এলাকায় রাস্তার একটি বিশাল অংশ ধসে পড়েছে। যেটি মেরামত করতে সময় লাগবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কগুলো মেরামত করে যান চলাচলের জন্য স্বাভাবিক করে দেওয়া হবে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দীন বলেন, বন্যায় বান্দরবান সদর ও লামা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরবাড়ি ভেসে গেছে রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে মানুষ খুব কষ্টের মধ্যে আছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা নিরুপণের কাজ করছি দ্রুত তালিকা প্রস্তুত করা হবে। এর আমরা তাদের ত্রাণ সহায়তা ও পুনর্বাসন করার চেষ্টা করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *