এক শ্রেণিতে যত খুশি ভর্তি নয়

Slider শিক্ষা

নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী একটি শ্রেণির শিক্ষার্থী সীমিত রাখতে হবে। ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত ঠিক রাখতে এক শ্রেণিতে যত খুশি শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া যাবে না। সর্বোচ্চ এক শ্রেণিতে ৪০ জন ভর্তি নির্ধারণ করে দেবে শিক্ষা প্রশাসন। জানা গেছে, শ্রেণিকক্ষে ছাত্র-শিক্ষক সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে পাঠদান নিশ্চিতের লক্ষ্যে এই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিদ্যমান বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার কয়েকটি বিধি স্পষ্টকরণ সংক্রান্ত এক বৈঠকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, রাজধানীতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন ছাড়া শাখা-শ্রেণি খোলে। পরে অনুমোদনের জন্য শিক্ষা প্রশাসনের কাছে নানাবিধ তদবির করতে আসে। দেখা যায় কোনো কোনো স্কুলে এক শ্রেণিতে কক্ষে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী, আবার পাশের আরেকটি স্কুল শিক্ষার্থীই পায়নি। এ কারণে ভবিষ্যতে অনুমোদন ছাড়া কোনো শাখা-শ্রেণি খোলার নামে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না, শাখা-শ্রেণি খোলাও যাবে না।

মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী ক্লাসে সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণমূলক পাঠদান হতে হবে। এখন ক্লাসে যদি ৭০-৮০ জন ছাত্রছাত্রী থাকে, কীভাবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ক্লাস নেবেন একজন শিক্ষক। ক্লাসের পাঠদান কীভাবে আরও অংশগ্রহণমূলক করা যায় সে বিষয়ে আমরা ভাবছি।’

একটি শ্রেণিতে কতজন শিক্ষার্থী থাকা উচিত জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘আমাদের যে নতুন কারিকুলাম, তার কনসেপ্ট হচ্ছে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকের মধ্যে শিখন ইন্টারঅ্যাক্টিভ হতে হবে। এটি হতে হলে শিক্ষার্থী থাকতে হবে একবারে সীমিত। একটি শ্রেণিতে ২০ শিক্ষার্থী থাকা দরকার, ২৫ বা ৩০ জন পর্যন্ত কোনোভাবে চালানো সম্ভব।

তবে দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তপন কুমার সরকার। তিনি বলেন, ৪০ জন শিক্ষার্থী হলে ক্লাসটা একজন শিক্ষকের পক্ষে মেইনটেন করা যায়, নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে মনিটরিং খুব বেশি জরুরি।’

জানা গেছে, ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১’-এর কয়েকটি বিধি মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এই জটিলতা নিরসনে কিছু বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয় মাউশি। তাদের প্রস্তাবে বিধিমালার বিভিন্ন বিধি স্পষ্ট করে পরিপত্রও জারি করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৫ জুন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আরও কিছু বিধি স্পষ্ট করতে বৈঠকে বসেন।

বৈঠকে নীতিমালার ৬.২ অনুচ্ছেদ স্পষ্ট করার বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়। এই বিধি স্পষ্ট করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়ের কাছে নির্দেশনা চায় নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কতটি শ্রেণি-শাখা খোলা যাবে? বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি নির্দেশনা দেন, প্রতিটি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ের এক শ্রেণিতে শিক্ষার্থী থাকবে ৪০ জন। এই সংখ্যার বেশি ছাত্র ভর্তি করানো যাবে না। অনুমোদন নিয়ে শাখা-শ্রেণি খুলতে হবে। অনুমোদনের আগে ভর্তি করানো যাবে না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈঠকের প্রস্তাবে এক শ্রেণির মূল শাখার বাইরে দুটি অতিরিক্ত শাখা-শ্রেণি রাখা নিয়ে আলোচনায় হয়। তবে এই প্রস্তাবনার আলোচনায় অনেক বিদ্যালয়ের আসন ফাঁকা থাকার বিষয়টিও উঠে আসে। এ সংকট মেটাতে শিক্ষক প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদ্যালয়গুলোকে আপগ্রেড করার বিষয়ও আলোচনায় উঠে আসে। তবে এসব বিষয়ে পরবর্তী সময়ে কর্মশালা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়।

শিক্ষা প্রশাসনের এই উদ্যোগ ইতিবাচক বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মাঠের বাস্তবতা বিবেচনা করা খুব প্রয়োজন। কতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই নির্দেশনা মানতে পারবে, মনিটরিং কে করবে? অসংখ্য নির্দেশনা ভালো উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়, কিন্তু বাস্তবায়ন করা যায় না। এটি কতটা বাস্তবায়ন করা যাবে, মনিটরিং করা যাবে এ প্রশ্নটা থেকেই যায়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *