মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদ লিমিটেডের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে নগদ ফাইন্যান্স পিএলসিকে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল, সেই লাইসেন্স সমর্পণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। নগদের এমএফএস সেবা এই প্রতিষ্ঠানের আওতায় পরিচালনার উদ্দেশ্যেই লাইসেন্সটি নেওয়া হয়েছিল। তবে এখন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সমর্পণ করে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স নিতে চাচ্ছে নগদ। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স সমর্পণের আবেদন গ্রহণ করে তা নিষ্পত্তিও করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক আমাদের সময়কে বলেন, নগদ ফাইন্যান্স পিলসি নামে তারা (নগদ) আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নিয়েছিল। এখন তারা চিঠি দিয়ে সেই লাইসেন্সটি সমর্পণের আবেদন করেছে। এর কারণে হিসেবে তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়েছে। তারা হয়তো ডিজিটাল ব্যাংকেই ব্যবসার বেশি সম্ভাবনা দেখছে। তবে আবেদনটি কোন পর্যায়ে আছে বা নিষ্পত্তি হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নগদ ডাক বিভাগের প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছে। কিন্তু দেশে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান (সাবসিডিয়ারি) হতে হয়। তাই বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে ‘নগদ’ একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলে তার সাবসিডিয়ারি হিসেবে এমএফএস সেবা পরিচালনার প্রস্তাব করে। সে অনুযায়ী, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি মালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবার (এমএফএস) জন্য সাবসিডিয়ারি বা সহযোগী কোম্পানি খুলতে পারবে মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) রেগুলেশন্স ২০২২-এ নতুন বিধান সংযুক্ত করা হয়।
জানা যায়, ওই নীতিমালার আওতায় গত ১৭ মে নগদ লিমিটেডের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে নগদ ফাইন্যান্স পিএলসিকে অর্থায়ন ব্যবসা পরিচালনার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দিয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে গত ১ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নগদ ফাইন্যান্স পিএলসির চূড়ান্ত লাইসেন্স অনুমোদন করা হয়। তবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করার আগেই নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সমর্পণের আবেদন করে চিঠি পাঠায়। গত ১০ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফরিদ খানের স্বাক্ষরে ওই চিঠি পাঠানো হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৬ জুন অনুষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ সাধারণ সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স সমর্পণের এবং কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে ‘নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’ করার এবং সে মোতাবেক নগদ ফাইন্যান্স পিএলসির সংঘ-স্মারক সংশোধনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। লাইসেন্স সমর্পণ করার কারণ প্রসঙ্গে চিঠিতে বলা হয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সপ্রাপ্তির পরপরই বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ কর্তৃক গত ১৫ জুন ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার নীতিমালা জারি করা হয়। এর মাধ্যমে দেশের আর্থিক খাতে উদ্ভাবনী ও ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অধিকতর কার্যকর পন্থায় বিবিধ আর্থিক পরিসেবা প্রদানের দিগন্ত প্রসারের মাধ্যমে আর্থিক খাতকে আরও কার্যকর, শক্তিশালী ও নিরাপদ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ডিজিটাল উপায়ে স্বল্প খরচে আর্থিক পরিসেবা জনসাধারণের নিকট পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে এই দেশের আপামর জনগণের ক্ষমতায়ন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উন্নতি বিধান এবং জনসাধারণের জীবনধারণকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের বিষয়ে দেশে কোনো বিধিবিধান বা নীতিমালা বিদ্যমান না থাকায় তারা উদ্দীষ্ট ব্যবসা ও কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স গ্রহণ করে। এ পর্যায়ে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের নীতিমালা জারি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নগদ ফাইন্যান্স পিএলসির ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনই সর্বোত্তম উপায় হবে মর্মে প্রতিষ্ঠানটি মনে করে।
এ বিষয়ে নগদ লিমিটেডের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান জাহিদুল ইসলাম সজল আমাদের সময়কে বলেন, নিয়মনিষ্ঠতার উদাহরণ তৈরি করতেই লাইসেন্স ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। লাইসেন্স নেওয়ার পর ব্যবসায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে চূড়ান্তভাবে মার্কেট সার্ভে করার পর বিনিয়োগকারীরা অনুধাবন করেন যে বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করা দুরূহ হবে। কারণ বাংলাদেশ এখন দ্রুতই স্মার্ট কার্যক্রমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সরকারও ইতোমধ্যে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই ডিজিটাল ব্যাংক চালু হলে এটি আসলে গোটা আর্থিক খাতের চেহারাই বদলে দেবে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে পুরনো ধাচের একটি ব্যবসায় অর্থলগ্নি করা বিনিয়োগকারীদের কাছে যুক্তিসঙ্গত ও দূরদর্শী মনে না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।