খাবার টেবিলে কী বলেছিলেন গয়েশ্বর, জানালেন ডিবির হারুন

Slider বাংলার মুখোমুখি

রাজধানীর প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির দিন গত শনিবার দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে সড়কে ফেলে লাঠিপেটা করে পুলিশ। সেখান থেকে রক্তাক্ত এই নেতাকে হেফাজতে নিয়ে রাজারবাগ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয় পুলিশ। পরে সেখান থেকে তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ওই দিন বিকেলেই তাকে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়।

ওই ঘটনার কিছুক্ষণ পরই ডিবি কার্যালয়ে গয়েশ্বরের খাবার গ্রহণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই খাবার টেবিলে ছিলেন গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। ভিডিওটি নিয়ে দেশজুড়ে চলছে আলোচনা। খাবার টেবিলে গয়েশ্বরের সঙ্গে কী কথা হয়েছে, একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে তা বলেছেন ডিবির হারুন।

গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে মানুষের জানমাল ক্ষতিগ্রস্ত থেকে রক্ষা করা। আমরা যে মুহূর্তে গয়েশ্বর রায়কে নিয়ে আসলাম, সে আসলেই আহত ছিল। তাকে প্রথমে রাজারবাগ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে আমি গিয়েছিলাম। তখন গয়েশ্বর রায়কে আমি নিজে বলেছি, “আপনি আমাদের কার্যালয়ে আসেন। চা খেয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলে যান।” এ সময় তিনি নিজেই আমার সঙ্গে আসতে চেয়েছেন। তিনি আসার পর আমার রুমে বসলেন। তখন লাঞ্চ টাইম ছিল। তাই আমি তাকে বললাম, “আপনি তো অসুস্থ, তাই আমাদের সঙ্গে লাঞ্চ করেন।” এই কথা শুনে তিনি হ্যাঁ বা না বলেননি। তখন আমার বাসার খাবার বা ক্যানটিনের খাবার তাকে খাওয়ালে কেমন হয়। তাই আমি তার জন্য সোনারগাঁও থেকে সবজি নিয়ে আসলাম। বাকি সব খাবার আমার বাসার।’

পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘কালকে তো তিনি ভালো ছিলেন। তিনি আমার সঙ্গে অনেক কথা বলেছেন। অনেক রোমান্টিক কথা হয়েছে তার সঙ্গে। তখন আমার সঙ্গে তিনি খাবার খেলেন। খাওয়ার সময় তিনি আমাকে বললেন, “সবজিটা দাও।” আমি তাকে বললাম, “সবজিটা কিন্তু সোনারগাঁওয়ের।” এখন সোনারগাঁওয়ের সবজির দাম খুব একটা না। তিনি আমার বাসার খাবারও খেলেন।’

ডিবির হারুন বলেন, ‘খাওয়ার সময় তিনি আমার সঙ্গে অনেক কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “শেখ কামালের সঙ্গে আমি রাজনীতি করেছি।” তখন আমি বললাম, “আপনার বয়স কত?” তিনি বললেন, “আমার বয়স ৭৪।” তখন আমি তাকে বললাম, “আমার মনে হয় না আপনার এত বয়স।” আমি তার সঙ্গে কৌতূক করলাম। একসময় আমি তাকে বললাম, “আপনি অসুস্থ হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আপনার খোঁজখবর নিয়েছেন।” তখন তিনি বললেন, “হুম শেখ কামাল আমার অনেক ঘনিষ্ট ছিল। আমরা একসঙ্গে ছিলাম, অনেক কিছু করেছি।” এগুলো কথা খাবার টেবিলেই হয়েছে। একসময় আমি তাকে বললাম, “দেখেন আজকের ঘটনায় আমাদের অনেক পুলিশ মার খেয়েছে, আমাদের গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।” তখন তিনি বললেন, “হুম আমি তো অনেক চেষ্টা করেছি এদেরকে নিবৃত করতে।”

খাবার টেবিলের সেই ভিডিও কে করেছে, কীভাবে সেটি প্রকাশ হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা একেবারে ঘরোয়া পরিবেশে খাওয়া-দাওয়া করেছি। তিনি আমাকে অনেক ধন্যবাদ দিয়েছেন। এখন সেখানে অনেক পুলিশ সদস্য ছিল। তারা হয়তো মনে করেছে—এমন সুন্দর পরিবেশ, তাই ভেবে হয়তো কেউ ছবি তুলেছে। আমরা বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেক রাজনীতিবিদের সঙ্গে খাবার খাই, ছবি তুলি। সেগুলো তো গণমাধ্যমে আসে। তাই এটাকে এত গুরুত্ব দেওয়ার মতো না। আমরা খাবার টেবিলে দাদার সঙ্গে যে কথা বলেছি, তা কাউকে দেখানোর জন্য নয় বা অপচেষ্টার জন্য বা ভিডিও ভাইরাল করার জন্য না। এখন এই ঘটনাকে যদি কোনো অন্যদিকে ধাবিত করে, আমরা কিন্তু এমন কোনো বিষয় মনে করে কাজটা করিনি।’

ডিবি কার্যালয়ে খাবার টেবিলের সেই ভিডিও নিয়ে গতকাল কথা বলেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এ ঘটনাকে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ডিবি প্রধানের (অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ) অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এবং সৌজন্যতা রক্ষায় হারুনের জন্য বাসা থেকে নিয়ে আসা খাবার থেকে ভাতসহ হালকা সবজি ও রুই মাছের একটি টুকরা গ্রহণ করি।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘ডিবি প্রধান আমাকে অনুরোধ করেছেন, রুই মাছটি তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। আর যেহেতু ডিবি প্রধান নিজেই খাবারটি খাচ্ছেন, তখন আমার মনে হলো, এটা যদি গ্রহণ করি, তাহলে সমস্যা হবে না।’

গয়েশ্বর বলেন, ‘পুলিশের ছোড়া ইটের আঘাতে মাথা থেকে রক্ত ঝড়ছিল। সেদিকে খেয়াল না দিয়ে নেতাকর্মীদের রক্ষায় বুক পেতে দিয়েছিলাম। একটা কর্মীর ক্ষতি হওয়ার আগে যেন আমার ক্ষতি হোক। এই অবস্থায় আমাকে পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে সাপ পেটানোর মতো পেটানো হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের গণতান্ত্রিক বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে। আহত অবস্থায় আমাকে পুলিশ একটি দোকানে নিয়ে রক্ত মুছতেছিল, যাতে করে আমাকে বের করার সময় গণমাধ্যম কর্মীরা রক্ত দেখতে না পায়। এই অবস্থায় ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। সেখানে আমাকে আপ্যায়ন করে। সেটার ছবিসহ ভিডিও বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় পুলিশ।’

গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘যারা এ কাজটি করেছে, এটি অত্যন্ত নিম্ন রুচির পরিচায়ক। এক ধরনের তামাশাপূর্ণ নাটক। এতে কি সরকার প্রমাণ করতে চায় যে, আমরা হা-ভাতে? ভিক্ষা করে খাই? গ্রামের ভাষায় বলা হয় “খাইয়ে খোটা দেওয়া”। ডিবি অফিসে আমার সঙ্গে যা করা হলো তা ওই রকমই। আমার বাড়িতে তো বিভিন্ন সময় অনেক লোক খায়। এটা আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানের। কিন্তু এই খাবারের ছবি উঠিয়ে কি আমি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেব? এটা কি আমার জন্য ভালো হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *